কক্সবাংলা ডটকম(৭ ফেব্রুয়ারী) :: ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন করে রাখার পরও করোনা ভাইরাস ক্রমেই আরো প্রাণঘাতী হচ্ছে। চীনে বৃহস্পতিবার আরো ৭৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬৩ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে,চীনে এখনো আটকে আছে ১৭২ বাংলাদেশি। এ অবস্থায় দেশে ফিরতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
প্রতিদিনই চীন থেকে সরাসরি অথবা অন্য কোনো দেশ হয়ে বাংলাদেশে আসছেন অনেকেই। তাদের অনেকেরই অভিযোগ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাদের সঠিকভাবে স্ক্যানিং করা হচ্ছে না। আবার অনেকে অভিযোগ করে বলছে, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য।
তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ। থার্মাল স্ক্যানার চেকিং ছাড়া কেউই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। আর এক্ষেত্রে তারা আতঙ্ক না ছড়িয়ে সবাইকে সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে যারা এসেছে তাদের কারো মধ্যেই করোনা ভাইরাসে কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তার পরেও তাদের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি মেনেই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। একই কথা প্রযোজ্য যারা দেশের বাইরে থেকে আসছেন তাদের ক্ষেত্রেও। প্রত্যেককেই আমরা বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে চেক করিয়ে প্রবেশ করাচ্ছি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের সব মানুষকে মাস্ক পরে বাইরে ঘোরার প্রয়োজন নেই। যাদের সর্দি-কাশি-জ্বর আছে শুধু তারাই মাস্ক ব্যবহার করবে। যাতে তাদের কাছ থেকে কোনো ছোঁয়াচে রোগ অন্যদের সংক্রমিত করতে না পারে। গতকাল দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে একজনও করোনা ভাইরাস রোগী নেই। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্যখাত পূর্ণ সজাগ। ইতিমধ্যে দেশের সব নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়েছে।
দেশে বর্তমান মাস্ক সংকট আছে কি না, জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, শিগিগরই জাপান সরকার বাংলাদেশকে ৬৮ লাখ মাস্ক বিনামূল্যে প্রদান করবে বলে আশ্বস্ত করেছে। এগুলো দেশে এলে বাজারে মাস্কের সংকট কমে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্রিফিংকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব সিরাজুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চীনে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বড় প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বাংলাদেশও করোনার জ্বর টের পাওয়া শুরু করেছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্ক্রু ড্রাইভার থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি চীন থেকে আমদানি হয়। এরই মধ্যে বেইজিং ও ঢাকার আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন এলসিও (ঋণপত্র) বন্ধ। মাসখানেক এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশকে তার বড় মূল্য দিতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যের জন্য অশনিসংকেত।
জানা গেছে, চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্যসহ কয়েকটি মশলাও আসে। ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চে দেশটি থেকে যে পণ্যগুলো বাংলাদেশমুখী জাহাজে বোঝাই করার কথা, তা কমপক্ষে ১০ দিন পিছিয়েছে। চীনে নববর্ষের ছুটি আরও বাড়লে এ সময় আরও পেছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ছুটি বাড়লে পণ্যের পাশাপাশি চীনা কারিগরি কর্মকর্তারাও আসতে পারছেন না। এতে বহু ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। উৎপাদন খাতসহ অনেক প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হতে পারে।
শুধু ফেব্রম্নয়ারিতেই প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিসিসিআই)।
চট্টগ্রাম বন্দর, ব্যবসায়ী ও জাহাজ কোম্পানি সূত্র জানায়, চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব পণ্য আসছে, নববর্ষের ছুটির আগেই যেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সিঙ্গাপুরের সমুদ্রবন্দর হয়ে চীনের পণ্য আমদানিতে ১৪ থেকে ২২ দিন লাগবে। এখন পণ্য জাহাজীকরণ পেছালে এ মাসের শেষে প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
করোনার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ভোগ্য পণ্যের দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। নিজেদের ব্যবহারের জন্য চীন যেসব পণ্য আমদানি করে, পুরো পৃথিবীতে সেগুলোর দাম কমে যাচ্ছে। চীন যেগুলো রপ্তানি করে, সেগুলোর দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারেও এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গত অর্থবছর চীন থেকে ১ লাখ
১৪ হাজার কোটি টাকার (১৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার) পণ্য আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে এসব পণ্য আসে। মোংলা বন্দরে সামান্য পরিমাণ খালাস হয়েছিল।
রাজস্ব বোর্ডের তথ্য থেকে জানা যায় বাংলাদেশে আদা, রসুন ও দারুচিনি এ তিন মশলা চীন থেকে আমদানি করা হয়। এবার পেঁয়াজ যোগ হয়েছে। সমুদ্রপথে আমদানি হওয়া রসুনের পুরোটাই চীন থেকে আসে। গত অর্থবছর চীন থেকে ৬৪ হাজার ৭৯৬ টন রসুন আসে। এবার নববর্ষের ছুটির মাসখানেক আগে ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ রসুন আমদানি করেন। কিন্তু করোনার অজুহাতে ৪৫ টাকা কেজির রসুন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারেই।
বাংলাদেশ চীন থেকে টেক্সটাইল, যন্ত্রপাতি ও বৈদু্যতিক সরঞ্জামাদি, সার, টায়ার, লৌহ ও ইস্পাত, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, গমসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করেত্ম চামড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, তৈরি পোশাক, মৎস্যজাতীয় পণ্য। এ ছাড়াও বর্তমানে চীনে ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্ট শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করতে পারে বাংলাদেশ।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চীন নিজেদের ব্যবহারের জন্য যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলোর দাম বিশ্বজুড়ে কমছে। চীনের জনসংখ্যা ১৪৩ কোটি। তারা কোনো পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিলে বৈশ্বিক বাজারও টালমাটাল হবে। ভোজ্যতেলের দামে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। বিশ্বে ভোজ্যতেল আমদানিকারকের তালিকায় শীর্ষে চীন। করোনার প্রভাবে সেখানে এরই মধ্যে পাম তেল ও সয়াবিন তেলের দাম প্রতি টনে ৯০ ডলার বা কেজিতে সাড়ে ৭ টাকা কমেছে। মালয়েশিয়ার পাম তেলের দাম টনে ৮১৫ ডলার থেকে কমে ৭২০ ডলারে নেমেছে। একইভাবে সয়াবিনের দাম ৯০০ ডলার থেকে কমে ৮১০ ডলারে নেমেছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকায় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কেজিতে ১২ টাকা কমে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সয়াবিন তেল ৯ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমায় সাময়িকভাবে ভোক্তাদের স্বস্তি হলেও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
চীন থেকে পণ্য আমদানি আটকে যাওয়ায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়বে। পণ্য শিপমেন্টের অপেক্ষায় আছেন বহু ব্যবসায়ী। অনেক প্রতিনিধি তাদের সফর বাতিল করেছেন। অন্য দিকে করোনার আতঙ্কে বাংলাদেশে ২০ টাকার মাস্ক ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও দামি মাস্ক বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২০০০ টাকা।
বিসিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এটিএম আজিজুল আকিল বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। চলতি মাস এটি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের দেড় বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হবে। এর প্রায় পুরোটাই আমদানি-বাণিজ্য।
ভাইরাসটি ছোঁয়াচে হওয়ায় দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির সরকারি হিসাবেই আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়েছে। ৫৬৫ জন মারা গেছেন। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি, শেয়ারবাজার ও আমদানি রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য-পর্যটন ক্ষেত্রে চীন যেমন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে; একইভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বহু দেশেই। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কারও শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েনি। তবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও ভ্রমণকেন্দ্রিক যোগাযোগের পরিসর অনেক বড় থাকায় জনস্বাস্থ্য যেমন পড়েছে ঝুঁকির মুখে, তেমনি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও প্রবল ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে চীন থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, বিভিন্ন খেলনা ও খাদ্যসামগ্রী। বর্তমানে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির কর্মকর্তাদের ১০ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছে।
এরপর ১২ ফেব্রম্নয়ারি চীনা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে তারা এসব পণ্য সরবরাহ শুরু করবে কি না। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে আকাশপথে বিমান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও চীনের নাগরিকদের আগমনী ভিসা বন্ধ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে এর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
বিসিসিসিআইয়ের তথ্য অনুসারে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এটি ১৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই সম্ভাবনায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে চীনা অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিতে বাধার মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। কাঙ্ক্ষিত সময়ে কাজ না এগোলে বাড়তে পারে প্রকল্প ব্যয়ও। বাংলাদেশে কর্মরত অনেক চীনা সে দেশে আটকা পড়েছেন। আর সময়মতো কাজ না এগোলে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে বা বাড়ানোর অজুহাত তোলা হতে পারে।
কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি প্রকল্পে কর্মরত চীনের শতাধিক কর্মকর্তা তাদের ছুটি আরও বাড়িয়েছেন। শুধু পদ্মা সেতুতেই চীনের ১১০০ নাগরিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে ছুটিতে দেশে গিয়েছিলেন ২৫০ জন। এছাড়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের নাগরিকরা বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত আছেন। এসব প্রকল্পে দেড় হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন।
তার বাইরে আরও কিছু প্রকল্পে ৫০০ চীনা নাগরিক সহায়তা করছেন। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে যুক্ত ৩৫ চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত চীনের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে দেশে গেছেন। তাদের ফেরা অনিশ্চিত। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, ঋণ, অনুদান, বিনিয়োগ এবং বড় প্রকল্পগুলোয় ক্রমেই সম্পৃক্ত হচ্ছে চীন। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে সম্পৃক্ততা বাড়ছে।
বর্তমানে প্রায় ৪০০ চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করছে। এ ছাড়া দুই দেশের ব্যবসায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্যাংকার এবং বিমা মালিকদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এছাড়াও কৌশলগত ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
ওই সময়ে দেশটির ২৭টি চুক্তি ও এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই সফরের আগে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং বলেছিলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে এক নম্বর হতে চায় চীন। এরপর গত বছরে ১-৫ জুলাই ৫ দিনের সফরে চীনে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময়ে দেশটির সঙ্গে ৯টি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়।
বতর্মানে বাংলাদেশের ১২টি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে চীন। এসব প্রকল্পে দেশটির মোট সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়ের ১৬০ কোটি ডলার, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ১৫ কোটি ডলার, কর্ণফুলী টানেলে ৭০ কোটি, রাজশাহী ওয়াসায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্যান্টে ৫০ কোটি ডলার, বিদু্যৎ খাতের ডিপিসিতে পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্কে ৫০ কোটি, পদ্মা সেতু রেল সংযোগের দুই প্রকল্পে ২৫৮ কোটি ডলার, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসে ১৪০ কোটি ডলার, পাওয়ার গ্রিডে ১৩২ কোটি ডলার এবং টেলিকমিউনিকেশন আধুনিকায়নে ২০ কোটি ডলার সহায়তা করছে চীন। এছাড়াও আরও ৯টি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এসব প্রকল্পে সহায়তার পরিমাণ ৮০৮ কোটি ডলার।
তবে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দেশের মোট বাণিজ্য ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে দেশে ১ হাজার ১৬৯ কোটি ২৫ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। একই সময়ে চীনে ৬৯ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১১ বিলিয়ন ডলার বা ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে চীনে ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্ট শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানি করতে পারে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে ২০১৮ সালে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম। আর বিশ্বের চীনের অবস্থান দ্বিতীয়।
আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩০২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে চীনের জিডিপি ছিল ১২ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে চীনের জিডিপির আকার ৫৫ গুণ বেশি। তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে ৪০ শতাংশই চীনের দখলে।
Posted ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta