কক্সবাংলা ডটকম(৩১ অক্টোবর) :: বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত। চীনও খুব দূরের কেউ না। সম্পর্কের দিক দিয়েও দু’ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবে, ওই দু’ দেশের মধ্যে যে বৈরীতা তার প্রভাব সময় সময় বাংলাদেশের উপরও পড়ে। তবে, এবার রোহিঙ্গা সংকটে ভারত থেকে কিছুটা সহানুভূতির সাড়া পেলেও চীন থেকে সেরকম সাড়া পাওয়া যায়নি। এর কারণ: চীনের ঘনিষ্ঠতম মিত্র মিয়ানমার। আবার ভারতের সঙ্গেও মিয়ানমারের সম্পর্ক খুবই উষ্ণ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিবেশীরা আগে, তবে সবার আগে বাংলাদেশ।
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়,– বলে বাংলাদেশের যে পররাষ্ট্রনীতি সেখানেও প্রতিবেশীরা আগে। তবে, বরাবরই একটি প্রশ্ন উচ্চারিত হয়: বাংলাদেশের জন্য কে আগে বিবেচিত হওয়া উচিত? সেটা কি ভারত? নাকি চীন?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু ছিল ভারত। বাংলাদেশি শরণার্থীদের জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তাও করেছে। পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দু’ দেশের সম্পর্কে সময় সময় টানাপোড়েন চললেও ২০০৭ থেকে বন্ধুত্ব আছে সর্বোচ্চ অবস্থায়।
প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক অনেক বেশি। পাশাপাশি দেশ হওয়ায় একে অন্যের বন্ধু হবার প্রয়োজনীয়তাও অনেক। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে সেখানে কিছুটা যেমন প্রতিযোগিতামূলক, তেমনই রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও। অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ জঙ্গিবাদ দমন ও আঞ্চলিক শান্তির জন্যও একে অন্যের ঘনিষ্ঠ মিত্র।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক
১৯৭৫ সাল থেকে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থপিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার চীন। বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদারও। ২০১৬ সালে শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে এলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ২৭টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌ বাহিনী চীন থেকে দুটি সাবমেরিন সংগ্রহ করেছে। চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক প্রতিবেশী কারো কারো জন্য চিন্তারও কারণ।
বিশেষজ্ঞ মত
দুটি দেশের সঙ্গেই আমাদের সম্পর্কটা বেশ গভীর এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জায়গাও অনেক। এসব সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এখন অনেকের প্রশ্ন: আমাদের জন্য চীনের সমর্থন আগে প্রয়োজন নাকি ভারতের? ভারত কি আমাদের প্রধান বন্ধু হওয়া উচিত? নাকি চীন?
এমন প্রশ্নে কূটনৈতিক প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে চীনের সমর্থন আমাদের বেশি জরুরি। মিয়ানমারের উপরে চীনের যে প্রভাব সেখানে যেতে ভারতের অনেক সময় লাগবে। অনেকে বলেন, মিয়ানমারের মালিকানা চীনের হাতে।
‘তাই ভারত ও চীনের জায়গাটা তুলনা করার মতো নয়। চীন চাইলে এই সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান হতে পারে,’ বলে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে মন্তব্য করেন এ সাংবাদিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ বলেন: চীন ও রাশিয়া তাদের জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পররাষ্ট্রনীতি চর্চা করছে। তবে এক রোহিঙ্গা ইস্যুতে চিন্তা করতে গেলে ভারতের ভূমিকা একটু হলেও পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুব বেশি না বদলালেও, সেখানে ভারতের অবস্থানে কিছুটা হলেও বদল এসেছে।
তিনি বলেন, একটি জনগোষ্ঠীকে নিপীড়ন করছে বলে চীন মিয়ানমারের পেছনে গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। ভারতের পজিশন পুরোপুরি মিয়ানমারের বিপক্ষে না হলেও কিছুটা ব্যালেন্স হয়ে এসেছে। আগে যেটা বলা হচ্ছিলো মিয়ানমারের পুরোপুরি পক্ষে ভারত, এখন সেটা মনে হচ্ছে না।
‘ভেতরের পরিস্থিতি আসলে হয়তো তেমনটা নয়। বাইরের রূপটাও গুরুত্বপূর্ণ।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন: এখানেও ভারত ও চীনের মধ্যে দুই দেশেরই আমাদের প্রয়োজন রয়েছেন। চীন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য তাই তাদের আমার চাই, এর কোন বিকল্প নেই। আবার মিয়ানমারের প্রতিবেশি দুটি দেশই। ভবিষ্যতে যে নিরাপত্তার দৃষ্টিভঙ্গি তাদের আছে সেটা আমরা তুলে ধরে তাদের মনোভাব পরিবর্তনে আমরা কাজ করতে পারি।
‘ভারত তাদের প্রাথমিক অবস্থান থেকে খানিকটা সরেছে। বাকিটা সরাতে আমরা কাজ করতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মিয়ানমারের থেকে কম নয়। এই ব্যাখ্যাটা তৈরি করে যেভাবে কাজ করলে দুই দেশকেই নিজেদের পক্ষে পেতে পারি সেভাবেই বাংলাদেশের কাজ করা দরকার,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়্যারম্যান ড. অরুণ কুমার গোস্বামী মনে করেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কেন্দ্র করে চীন ও রাশিয়া একদিকে, ভারত ও আমেরিকার ভূমিকা একদিকে। রোহিঙ্গাদের প্রথম এনট্রান্স বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পর্কগুলো কোন দিকে টার্ন নিবে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশেরে জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রেও একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। দ্বিপক্ষীয় সুরক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশ কাজ করে চলেছে। চীন তো মিয়ানমারের পক্ষে। সেখানে বাংলাদেশ কোন তরফ থেকে কী ধরনের সহায়তা পাবে সেটাই বড় প্রশ্ন,’ উল্রেখ করে এক্ষেত্রে সরকারকে আরো কূটনৈতিক হওয়ার পরামর্শ তার।
Posted ৮:২১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta