বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশে ক্ষমতায় বিএনপির চেয়ে আ: লীগই বেশি নির্ভরযোগ্য : ভারতীয় থিংক ট্যাংক

বুধবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৮
426 ভিউ
বাংলাদেশে ক্ষমতায় বিএনপির চেয়ে আ: লীগই বেশি নির্ভরযোগ্য : ভারতীয় থিংক ট্যাংক

কক্সবাংলা ডটকম(১৮ এপ্রিল) :: বাংলাদেশে এ বছরের শেষে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটির ব্যাপারে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের চিন্তা-ভাবনা কী? অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি ভারতীয় থিংক ট্যাংক এই নির্বাচন সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ডিস্টিংগুইশড ফেলো মনোজ যোশি এই নির্বাচনকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুঁড়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।

মনোজ যোশির এই বিশ্লেষণটি বুধবার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রকাশ করে। ‘বাংলাদেশ পোলস পোজ এ চ্যালেঞ্জ টু রিজিওনাল স্টেবিলিটি’ নামে এই লেখায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে।

মনোজ যোশি লিখেছেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সেসময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন যেন আগের বারের চাইতে বিশ্বাসযোগ্য হয়।

বিএনপির ব্যাপারে ভারতের সন্দেহ

মনোজ যোশী মনে করেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। এর কারণগুলো তিনি ব্যাখ্যা করেছেন।

তার মতে ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। বিএনপি এর আগে যে দুই দফা ক্ষমতায় ছিল (১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৬) সে সময় বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ শেকড় গেড়েছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের সমর্থন পেয়েছিল। আর বাংলাদেশ এই বিষয়টি না দেখার ভান করেছিল।

বাংলাদেশে যেভাবে জঙ্গিদের তৎপরতা বাড়ছে, এমনকি আত্মঘাতী হামলা পর্যন্ত হয়েছে, সেখানে এই সমস্যা মোকাবেলায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকেই বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে ভারত।

মনোজ যোশি লিখেছেন, ‘কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং তৃতীয় দেশগুলোর গুপ্ত সংস্থার তৎপরতা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ ইতিবাচক। তার বলছেন, ইসলাম জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা খুবই সক্রিয়। অথচ বিএনপি ইসলামি জঙ্গিবাদে যদি উৎসাহ নাও দিয়ে থাকে, তারা এটিকে সহ্য করেছে।’

ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য আবার একই সঙ্গে এমন দাবিও করছেন যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রশ্নে তারা নিরপেক্ষ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত বছরের অক্টোবরে যখন বাংলাদেশ সফরে যান, তখন যে তিনি বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়া এবং তার দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, সেটি তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা

মনোজ যোশি বলছেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচন এ বছরের শেষে হওয়ার কথা, সেটাকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক, কিন্তু তারা চায় একটি ‘দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের’ অধীনে এই নির্বাচন হোক, যে কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে সম্প্রতি তারা ‘কেয়ারটেকার সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতেও আন্দোলন শুরু করেছে।

বিএনপি আশা করছে, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ, সেটি তাদের পক্ষে যাবে। তবে বিএনপির নিজের সাংগঠনিক অবস্থা খুব ভালো নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অনেক মামলা ঝুলছে। লন্ডনে বসে এখন দলটি পরিচালনা করছেন তার ছেলে তারেক রহমান।

বিএনপির সাবেক প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধের বিচারের মাধ্যমে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী এখন আর নিবন্ধিত দলও নয়, কাজেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কিন্ত দলটি তাদের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র শিবিরের’ মাধ্যমে এখনো রাস্তায় লোক জড়ো করার উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রাখে।

নির্বাচনে শেখ হাসিনার সমস্যা মূলত দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা থেকে উৎসারিত। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যদিও ভালো করছে, ভারতের চেয়েও তাদের প্রবৃদ্ধি ভালো, তারপরও সরকারের ভেতর অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে যা সহজে কাটানো যাচ্ছে না।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা

মনোজ যোশি বলছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এখনো পর্যন্ত যদিও নিরপেক্ষ, ২০০৬ সালে কিন্তু তারা একটি কেয়ারটেকার সরকারকে দুই বছর ধরে মদদ দিতে হস্তক্ষেপ করেছিল।

মনোজ যোশি মনে করেন, যদি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠে, তখন এমন সম্ভাবনা আছে যে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করতে সেনাবাহিনীকে টেনে আনা হতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনা এখনো পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে তার খুব কাছাকাছি রেখেছেন। তিনি সেনাবাহিনীর আকার দ্বিগুণ করেছেন, তাদের জন্য বাজেট বাড়িয়েছেন উদারভাবে, নতুন সেনা ঘাঁটি স্থাপন করেছেন এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত করেছেন।

আঞ্চলিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা

২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে একতরফা নির্বাচন হয়, সেটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর ভুরু কুঁচকিয়েছিল। কিন্তু এটি চীনকে সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার। চীনের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব দুদিক থেকে- প্রথমত ভারতকে মোকাবেলায় কাজে লাগানো, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের মুখে এবং মিয়ামারের প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান সেটিকে কাজে লাগানো। কারণ মিয়ানমারের রাখাইনে তাদের বিরাট বিনিয়োগ আছে।

মনোজ যোশি বলছেন, ভারত যদিও বাংলাদেশের বহুবছরের মিত্র, এখন চীন সেখানে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০০৭ সালের পর থেকে চীন বাংলাদেশে প্রায় তিনশো কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা বাংলাদেশে সেতু, সড়ক থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, অনেক কিছুই নির্মাণ করছে। তারা এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র যোগানদাতা। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফরে গিয়ে আরও দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন। এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে চীন হয়ে উঠবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী দেশ।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তাহলে কী দাঁড়াতে পারে? এ প্রশ্ন তুলে মনোজ যোশি দুই ধরনের আশংকার কথা বলছেন।

এক. সবচেয়ে খারাপ যে পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ যেতে পারে তা হলো সেখানে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলি দুর্বল হয়ে ইসলামি গোষ্ঠীগুলো সেখানে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে (হেফাজতে ইসলাম)। দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে সেনা সরকার গঠিত হতে পরে, যেটি দেশটির ইতিহাসে এর আগে কয়েক বার ঘটেছে।

মনোজ যোশীর উপসংহার হচ্ছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ হয়তো তুলনামূলকভাবে একটি ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে নতুন ধরনের খুবই সহিংস এক ইসলামি জঙ্গিবাদ দেশটিকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলতে পারে।

ওআরএফ কারা চালায়?

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ভারতের নীতিনির্ধারণে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিষ্ঠানটির এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন চেয়ারম্যান আর কে মিশ্রর সঙ্গে জর্ডানের প্রিন্স হাসান বিল তালাল।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ভারতের একটি সুপরিচিত থিংক ট্যাংক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ওআরএফ নিজেদেরকে ‘স্বাধীন’ বলে দাবি করলেও ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী রিলায়েন্সের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রিলায়েন্স গ্রুপ এই থিংক ট্যাংকের অন্যতম স্পন্সর। একই সঙ্গে ভারত সরকারের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে এক যোগে কাজ করে ওআরএফ।

প্রতি বছর নয়া দিল্লিতে ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ নামে বহুপাক্ষিক সম্মেলন হয়, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন সেটির মূল আয়োজক, আর এতে সহায়তা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সম্মেলনে মূলত ভূ-রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন।

ভারত সরকারের আঞ্চলিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এখন ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করা হয়।

ওআরএফ এর ফেলো মনোজ যোশি ভারতের খুবই সুপরিচিত একজন সাংবাদিক এবং তিনি ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন।

426 ভিউ

Posted ৯:১৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com