কক্সবাংলা ডটকম(২৮ ডিসেম্বর) :: ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ যথাসময়ে ফেরত আসছে না। এতে ব্যাংক খাতে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। আর খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এই খাতে বাড়ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাসেই ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ বছরের জুনে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ছিল ৮ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। তিন মাস পরে, সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘প্রত্যেক ঋণেই কম-বেশি ঝুঁকি থাকে। ব্যাংক মূলত ঝুঁকি নিয়েই গ্রাহকের কাছে ঋণ বিতরণ করে। আর বিতরণ করা ঋণ ফেরত না এলে সেটা শতভাগ ঝুঁকিতে পরিণত হয়।’
তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদও বেড়ে যায়। কারণ, খেলাপি হওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনও ঋণ ব্যাংকের জন্য আশীর্বাদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু যখনই খেলাপি হয়ে পড়ে, তখনই সেটা ঝুঁকিতে পরিণত হয়। ওই ঋণের বিপরীতে রাখা সম্পদও তখন ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে পরিণত হয়।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক মনে করেন, ব্যাংকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ার অর্থ— ব্যাংক ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এ জন্য দেখেশুনে ঋণ দিতে হবে। সময়মতো ঋণের টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে। খেলাপির পরিমাণ কমাতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো— ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ কমাতে চাইলে খেলাপি আদায় বাড়াতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। এ কারণে ব্যাংকের ঝুঁকি-সহনশীল ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে ঝুঁকির পরিমাণ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঋণ ফেরত না আসার কারণে ঝুঁকি বাড়ে। ঋণের বিপরীতে যে সম্পদ ব্যাংকে জমা থাকে, সেটা ঝুঁকি সম্পদে পরিণত হয়। আর এটা বেড়ে যাওয়া মানে হলো— ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়া।’
সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, ‘ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলে একসময় পুরো ব্যাংকই ঝুঁকিতে পড়ে যায়।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেওয়ায় এমনটি হচ্ছে। এতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এর ফলে কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতাও।’ ঢালাওভাবে পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের মতো অপসংস্কৃতি চালু হওয়ায় এই ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।
এদিকে, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের জুনে ব্যাংকগুলো গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ হারে। তিন মাস পর, সেপ্টেম্বরে এই হার কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
অথচ এই সময়ে মূলধন সংরক্ষণ হওয়ার কথা ছিল পৌনে ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এ জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। যদিও আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের মূলধন সংরক্ষণ সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তা না হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। বাধ্য হয়ে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের আধিক্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোয় বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারায় মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে। এর পুরো প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে মাত্র ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ হারে, যেখানে গত জুনে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ঋণাত্মক ৩৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ হারে।
অবশ্য ৩৯টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ হারে। আর ৯টি বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই হার ২৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।
Posted ৭:৪২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta