বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশে লুক্কায়িত অর্থনীতিতে মানুষের সম্পদ বাড়ছে

সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
283 ভিউ
বাংলাদেশে লুক্কায়িত অর্থনীতিতে মানুষের সম্পদ বাড়ছে

কক্সবাংলা ডটকম(২৮ অক্টোবর) :: ঘুষের ৪৪ লাখ টাকাসহ ২৬ অক্টোবর গ্রেফতার হন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। এ টাকা তিনি নিয়েছেন বন্দিদের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে।

তার আগে গত ১১ জুন ঘুষের সাড়ে ১৪ লাখ টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিমের হাতে গ্রেফতার হন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শামসুল শাহরিয়ার ভূঁইয়া। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে চোরাচালানের বস্তাভর্তি সাড়ে ৮ কোটি টাকাসহ গ্রেফতার হন মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যবসায়ী।

আর ২০১২ সালে ঘুষের ৭০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয় তত্কালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিবসহ (এপিএস) রেলের দুই কর্মকর্তা। বিগত কয়েক বছরে ও সাম্প্রতিক সময়ে টাকাসহ সরকারি কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও আটকের এ ঘটনা সমাজের দুর্নীতির ব্যাপকতার খণ্ডচিত্র মাত্র।

বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাসহ গত কয়েক বছরে ঋণের নামে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকে। এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে নাম এসেছে ব্যাংকের পরিচালক থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্মকর্তাদের। এমনকি বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকের দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত ব্যাংকটির পরিচালক থেকে শুরু করে শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুদক যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করেছে, তাদেরও বড় অংশ ব্যাংক কর্মকর্তা।

দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতার চিত্র উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণেও। বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকেও বাংলাদেশ এখনো নিচের সারিতে।

এখানে ব্যবসা করতে গেলে যে ঘুষ দিতে হয়, সে তথ্য উঠে এসেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অ্যাকাউন্টিং ও পেশাগত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের জরিপে। জরিপে অংশ নেয়া এ অঞ্চলের ১০০ জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর ৫৮ শতাংশই বলেছেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করতে গেলে ঘুষ দিতে হয়।

ঘুষ-দুর্নীতির এ ব্যাপকতা দেশে নগদ অর্থের চাহিদা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাড়ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশক আগেও দেশে নগদ অর্থনীতির আকার ছিল জিডিপির ৮ শতাংশের মতো। এখন তা পৌঁছেছে ১২ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও অর্থনীতি পরিণত হলে নগদ অর্থনীতির আকার ছোট হয়ে আসে।

বৈশ্বিক ট্রেন্ডের সঙ্গে বাংলাদেশেও জিডিপির বিপরীতে নগদ অর্থনীতির আকার ছোট হয়ে আসার কথা বলে জানান বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং ও প্রযুক্তির প্রসারের কারণে বাংলাদেশেও মানুষের আর্থিক লেনদেন আরো কাঠামোবদ্ধ হয়ে আসার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। অর্থনীতির আকারের সমান্তরালে আর্থিক অবকাঠামোয় উন্নতি না হওয়া এর কারণ হতে পারে। এর আরো একটা কারণ হতে পারে আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতিও। দুর্নীতির সূচকগুলোয় দেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এ যুগে নগদ অর্থনীতির অধিক বিস্তার পরিলক্ষিত হলে অন্যান্য সূচকের সঙ্গে এর সম্পর্ক অনুসন্ধান জরুরি। সমসাময়িক বিভিন্ন আর্থিক অপরাধের প্রবণতার সঙ্গেও বিষয়টিকে মিলিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ উপাত্ত বলছে, গত এক যুগে দেশের আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি তথা জিডিপির আকার ৪ দশমিক ১৮ গুণ হয়েছে। অন্যদিকে নগদ অর্থনীতি ৫ দশমিক ৯২ গুণে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দেশের জিডিপি ছিল ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকার। এর মধ্যে নগদ অর্থনীতির আকার ছিল ৩৯ হাজার ৩৬১ কোটি টাকার। শতকরা হিসাবে জিডিপি ও নগদ অর্থনীতির অনুপাত ছিল ৮ দশমিক ৩৩।

মধ্যবর্তী বিভিন্ন বছরে হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরে তা ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের জিডিপি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর বিপরীতে নগদ অর্থনীতির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকায়, যা দেশের পুঁজিবাজারের মোট বাজার মূলধনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশের সমান।

নগদ অর্থনীতির এ ব্যাপ্তির সঙ্গে দুর্নীতির সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থিক কাঠামো শক্তিশালী হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নগদ লেনদেনের প্রবণতা কমে গেছে। বাংলাদেশে এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। দুর্নীতি ও ঘুষ এবং বিদেশে অর্থ পাচারের টাকাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নগদ লেনদেন হয়। কর ফাঁকি দিতে ধনীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে না গিয়ে নগদ লেনদেন করেন। সার্বিকভাবে দুর্নীতির ব্যাপকতা বাড়ার কারণেই অনানুষ্ঠানিক পথে লেনদেন বেড়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের পর্যবেক্ষণও বলছে, দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশ এখনো নিচের সারিতে। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বার্লিনভিত্তিক সংস্থাটির সর্বশেষ সূচকে ১৮৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান ১৪৩তম। গত বছর প্রকাশিত সূচকে ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম।

বাংলাদেশের মতোই জিডিপির অনুপাতে নগদ অর্থনীতির ব্যাপ্তি বেশি যেসব দেশে, দুর্নীতির ধারণা সূচকে তারাও রয়েছে নিচের দিকেই। বর্তমান বিশ্বে নগদ নির্ভরতায় শীর্ষ পাঁচ দেশের পঞ্চমটি বাংলাদেশ। এ তালিকায় এক নম্বরে থাকা ভারত ছায়া অর্থনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে বিপুল অংকের অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ বাতিল করে দিয়েছে। তালিকায় এরপর রয়েছে যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়া।

নগদ অর্থনীতির মতোই বাংলাদেশের ছায়া অর্থনীতির কলেবরও বেশ বড়। ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ছায়া অর্থনীতি নিয়ে একাডেমিক গবেষণার ফল প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

তাতে দেখা যায়, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের ছায়া অর্থনীতির আকার ছিল জিডিপির ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এরপর এক দশক অনুপাতটি ২৩-এর নিচে ছিল। ২০০৫ সালের পর তা অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে শুরু করে। ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ থেকে ২০০৬ সালে অনুপাতটি এক লাফে ২৭ পেরিয়ে যায়। এরপর প্রতি বছর ১০০ থেকে ৪০০ ভিত্তি পয়েন্ট করে বেড়ে ২০১৪ সালে অনুপাতটি ৪৩ দশমিক ৬৪-এ ঠেকেছে। ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছায়া অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তানের উপরে।

লুক্কায়িত এ অর্থনীতির আকারের সঙ্গে মাথাপিছু আয়, আর্থিক স্বাধীনতা ও ব্যবসার স্বাধীনতা সূচকের সম্পর্ক ঋণাত্মক আর সরকারের কলেবরের সঙ্গে ধনাত্মক। অর্থাৎ অর্থনীতি উন্নত হতে থাকলে, মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকলে, আর্থিক অবকাঠামো ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হতে থাকলে জিডিপি ও ছায়া অর্থনীতির অনুপাত কমতে থাকে। অন্যদিকে সরকারের বড় কলেবর ছায়া অর্থনীতি উৎসাহিত করে।

আর ছায়া অর্থনীতির প্রধান অনুষঙ্গ নগদ লেনদেন। ব্যাংকের সংখ্যা ও শাখা বৃদ্ধি, ডিজিটাল মানির প্রসার, প্রত্যন্ত মানুষের ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি কারণে গত এক দশকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে।

তার পরও দেখা যাচ্ছে, জিডিপির চেয়ে অর্থনীতির নগদ ভিত্তি প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক বেশি। জিডিপি টু শ্যাডো ইকোনমি অনুপাত যেমন বেড়েছে, তেমনি জিডিপি টু ক্যাশ বেজ অব ইকোনমিও বেড়েছে। অর্থাৎ জিডিপির বিপরীতে ছায়া অর্থনীতি আর নগদ ভিত্তি দুটোই বেশি বেড়েছে।

তবে নগদ অর্থনীতি বড় হওয়ার মানেই দুর্নীতি বাড়ছে— এমনটা মনে করেন না পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে গতিতে হচ্ছে, তাতে নগদ অর্থনীতির এ বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। গত এক দশকে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় পরিবর্তন এসেছে। ব্যবসার পরিধি অনেক বেড়েছে। আর্থিক লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে ঈর্ষণীয় হারে। ফলে আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে নগদ অর্থনীতি বড় হয়েছে। স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারলে ছায়া অর্থনীতির আকার বাড়বে না।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মনে করেন, গোপনে অর্জিত অর্থ ভোগের অবাধ পরিবেশ ও কাঠামোগত অর্থনীতিতে প্রবেশের অনিচ্ছাও নগদ অর্থের চাহিদা বাড়াচ্ছে।

সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়মের বেড়াজালে প্রবেশ না করে লুক্কায়িত অর্থনীতিতে অনেক মানুষই সম্পদ গড়ছেন। এটি বন্ধ করতে হবে। অনুপার্জিত আয় ভোগের সব সুযোগ বন্ধ করার মধ্য দিয়েই ছায়া অর্থনীতির আকার ছোট করে আনা যাবে।

283 ভিউ

Posted ১:০০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com