কক্সবাংলা ডটকম(২৫ মে) :: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে কোন সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সমাধান সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই প্রতিবেশী দেশ এক হয়ে চলতে চাই, কিছু সমস্যা আছে, যে কোন সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সমাধান সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ছিটমহল বিনিময়ে ভারত ও বাংলাদেশ সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে ছিটমহল বিনিময় করেছে। ছিটমহল বিনিময়ের দিন মনে হয়েছে ,একাত্তরের মতই আমাদের প্রতিবেশী দেশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
‘আমরা চাই দেশকে উন্নত করতে। ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত করতে। সেজন্য প্রতিবেশী দেশের সাথে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।’
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসীর অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সেই অবদান অামরা কখনোই ভুলতে পারিনা। আমাদের ১ কোটি শরণার্থীকে তারা অাশ্রয় দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতবাসী ও বাংলাদেশের মানুষের রক্ত এক হয়ে মিশে গেছে।’
এসময় পঁচাত্তর পরবর্তী স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘আমরা শুধু আশ্রয় একাত্তরেই নেইনি । আমার বাবা যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সেসময় আমাদের পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। এরপর যারা বেঁচে ছিলো তখন তারা ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর আমার দুইবোনও ভারতে আশ্রয় নেই। এজন্য আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
‘৬ বছর পর দেশে ফিরে বাংলাদেশকে উন্নত করার চেষ্ট করেছি। বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে। আমার একটাই দায়িত্ব আমার বাবা যা চেয়েছিলেন সেই কাজ করে যাওয়া। আমার বাবা বাংলাদেশকে যে দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ভবন উদ্বোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ও বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করতে শুক্রবার সকালে শান্তিনিকেতনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিনিকেতনে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষেই শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর তারা এই ‘বাংলাদেশ ভবনেই’ বৈঠকে বসেন।
দুই প্রধানমন্ত্রী অবস্থান করায় বিশ্বভারতীজুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্যসূচিতে যা থাকছে:
পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা সংকট এবং দুই বন্ধু রাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যৌথ স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিষয়গুলো রয়েছে।
বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তিস্তা চুক্তি সংক্রান্ত বিদ্যমান পরিস্থিতি সাপেক্ষে আলোচনা এর চেয়ে বেশি এগোনোর সম্ভাবনা কম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দিক থেকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করা এবং সংকটের স্থায়ী সমাধানে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আরও আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও বাড়ছে ভারতের অংশীদারিত্ব। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও যৌথ সহযোগিতার সম্পর্ক উত্তরোত্তর বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবারের শীর্ষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিষয় বিশেষভাবে স্থান পাচ্ছে।
বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং দুই দেশের যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়ও গুরুত্ব পাবে। তবে এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কোনো সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি বৈঠক সম্পর্কে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক উত্তরোত্তর নিবিড় হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দু’দেশের সম্পর্ক ভিন্ন এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এ অবস্থায় শুক্রবার তাদের মধ্যে যে বৈঠক হবে, তা দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও একটি মাইলফলক হবে।
তিনি বলেন, তার বিবেচনায় এ আলোচনায় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিষয়গুলোই প্রাধান্য পাবে। এর বাইরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হবে।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta