কক্সবাংলা ডটকম(১২ সেপ্টম্বর) :: দুই দলেরই ‘যায় যায় অবস্থা’! ভিন্ন কারণে অবশ্য। আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে জিম্বাবুয়ের যখন কোণঠাসা অবস্থা, তখন মাঠের পারফরম্যান্সে তুমুল সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ দলও। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফেরার পর দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের কাছে একমাত্র টেস্টেও বাজেভাবে হার তাদের সামর্থ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেই ‘হায় হায় রব’ আরো উচ্চকিত না করার চ্যালেঞ্জের মুখেই সাকিব আল হাসানের দলকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় ‘ওভাই’ টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
যে সিরিজের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান ছিল কাল বিকেলে। যেখানে একে একে তিন দলের অধিনায়কের হাতেই ট্রফি দিয়ে আলাদা আলাদা ফটোসেশন। তাতে তৃতীয় দল আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খানের হাতে ট্রফি ওঠার দৃশ্যকেই অনেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের আগাম দৃশ্য বলে মনে করতে শুরু করলেন। সেদিনই তো এ আসরের ফাইনাল। চট্টগ্রামে টেস্ট সামর্থ্য দেখানো আফগানদের এ ফরম্যাটেই আরো বেশি ভয়ংকর বলে মানে বাংলাদেশও। এর সঙ্গে র্যাংকিং বিবেচনায় রশিদের দলকে ফেভারিট মানতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। তারা যেখানে ৭ নম্বরে, বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ১০-এ। যদিও আজ ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের চেয়ে এখানে বিপুল ব্যবধানেই এগিয়ে স্বাগতিকরা। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল যে ১৪ নম্বরে।
তবে আর্থিক দৈন্যে বেহাল জিম্বাবুয়েরও অজানা নয় স্বাগতিকদের নাজুক অবস্থা। শুধুই হারতে থাকলে আত্মবিশ্বাস কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকে, তা মাসাকাদজাদের চেয়ে ভালো আর কার জানা আছে! আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কোনো দেশের আমন্ত্রণ রক্ষায় বাধা নেই বলেই তারা এখন বাংলাদেশে। তাই বলে ভীষণ ‘কৃতজ্ঞ’ জিম্বাবুয়ে নিশ্চিতভাবেই মাঠের খেলায় ছাড় দিতে চাইবে না। খেলার এ সামান্য সুযোগও তাদের সামনে অসামান্য কিছুর মহিমা নিয়ে হাজির। এ সুযোগ দারুণ পারফরম্যান্স দিয়েই কাজে লাগাতে চায় তারা।
তার ওপর স্বাগতিকরা যখন সংকটকাল পার করছে, তখন পাল্টা চড়ে বসার সুযোগও হাতছাড়া করতে চায় না জিম্বাবুয়ে। সেই সঙ্গে এ ফরম্যাটে স্বাগতিকরা নিজেদের খুব একটা সামর্থ্যবান বলেও দাবি করে না। দুইয়ে মিলেই আশা দেখছেন মাসাকাদজারা। আজকের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক তাই নিজেদেরও পিছিয়ে রাখলেন না খুব, ‘এখানে কিন্তু টি-টোয়েন্টিতেও আমাদের বেশ কিছু সাফল্য আছে। আমার তো মনে হয় বাংলাদেশে আমরা এ ফরম্যাটে সত্যিই খুব ভালো খেলেছি। তাই আমরা ওদের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে আছি বলে মনে করছি না।’
সব শেষ সিরিজে অবশ্য দুই দল সমান-সমানই ছিল। ২০১৬-র জানুয়ারিতে চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের স্বস্তিও কেড়ে নিয়েছিল জিম্বাবুইয়ানরা। পরের দুই ম্যাচ জিতে প্রবলভাবে ফিরে আসা আফ্রিকার এ দলটি সিরিজ ড্র করার আনন্দ নিয়েই ফিরে গিয়েছিল। এবারও তাদের হাতে স্বাগতিকদের ঘুম হারাম হওয়ার আশঙ্কা আরো বেশি মাথায় রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকেও। কেন রাখছেন, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।
সংকট যে কখনো কখনো সেরা খেলা বের করে আনতে পারে, ডমিঙ্গো বললেন সে কথাই, ‘কোনো দল প্রায়ই যখন চরম সংকটে পড়ে, তখন সদলবলে অসাধারণ পারফরম করে। যেটি প্রতিপক্ষকে ধ্বংসও করে দিতে পারে, আবার তারা নিজেরাও দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। আমি নিশ্চিত, জিম্বাবুয়েকে এ মুহূর্তে যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেটি তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিই জোগাবে।’
কম সংকটে নেই ডমিঙ্গোর নিজের দলও। দায়িত্ব নিয়েই দেখেছেন টেস্টে দলের নির্মম হার। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে একটুখানি স্বস্তির হাওয়া বইয়ে দিতে জয়ের কোনো বিকল্পও নেই। জানালেন যে তাঁর দল সেই জয়ের খোঁজেই থাকবে, ‘প্রতিটি ম্যাচই আমরা জেতার জন্য নামব। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে।’ তাই বলে জয়ের নিশ্চয়তাও দিচ্ছেন না। সেটি এই ফরম্যাটের অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখেই, ‘এ ফরম্যাটে যেকোনো দল যেকোনো দলকেই হারাতে পারে। তাই আগামীকাল (আজ) জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে এটি নিশ্চিত করতে পারি যে আমরা আমাদের সেরাটাই উজাড় করে দেব।’
টানা বাজে পারফরম্যান্সে ‘যায় যায় অবস্থা’ যখন নিজেদেরও, তখন সদলবলে অসাধারণ পারফরম্যান্সের দুয়ার শুধু জিম্বাবুয়েই নয়, খুলে দিতে পারে বাংলাদেশও। আজ উদ্বোধনী ম্যাচে সেটি খুলছে কি খুলছে না, তার ওপরই নির্ভর করছে আফগানদের কাছে টেস্ট হারের দগদগে ক্ষতে জয়ের প্রলেপ পড়ছে কি না!
Posted ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta