রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়ন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে গতিশীল করবে

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
144 ভিউ
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়ন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে গতিশীল করবে

ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন(২১ ফেব্রুয়ারি) :: বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে বয়ে চলছে নাফ নদী। এই নদীপথ পাড়ি দিয়ে অত্যাচারিত, নির্যাতিত, বিতাড়িত ও প্রাণভয়ে জীবন বাজী রেখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ এই নদী পথেই চলতে পারে দুদেশের মধ্যকার ব্যবসা বাণিজ্য, দুদেশের নদী বন্দরে ভিড় করতে পারে পণ্যবাহী জাহাজ। নদীতে ভেসে বেড়াতে পারে পর্যটক ভরা নৌযান যেগুলোতে করে পর্যটকরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দর্শনীয় জায়গাগুলো দেখতে পারে। বাংলাদেশের এই প্রতিবেশী দেশের সাথে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা একটা বাধা হিসেবে থাকলেও দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ চলমান রাখতে হবে।

বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশ ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে একে অন্যের কাছাকাছি হলেও দুই দেশের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভাব রয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি বার্মা (বর্তমানের মিয়ানমার) বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সেদিক দিয়ে বার্মার স্থান প্রথমসারির দেশগুলোর মধ্যে। এর পরপরই ১৯৭২ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সফল কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট নে উইন বাংলাদেশ সফরে আসে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নে উইনের সাথে আন্তরিক ও ফলপ্রসূ সময় কাটান।

একটা সফল ও উষ্ণ নৌ ভ্রমনের মধ্য দিয়ে বার্মা-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর রিভার ক্রুজ ডিপ্লোমেসি নতুন দিগন্তের সূচনা করে।  বিদায় বেলায় যৌথ ইশতেহারে উভয় নেতা ‘বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্ত সব সময় শান্তি ও শুভেচ্ছার সীমান্ত হিসেবে বজায় থাকবে এবং তাতে দুই দেশের জনগণের চিরস্থায়ী মৈত্রীই প্রতিফলিত হবে’ বলে তাদের আশাবাদ ব্যক্ত করে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নে কৌশলগত, কূটনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, জনকূটনীতিসহ সমন্বিত বহুমুখী দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির উপর জোর দিতে হবে।

একবিংশ শতাব্দীতে উন্নয়নের মহাসড়কে স্থান করে নেয়া বাংলাদেশের পেছনে ফিরে না তাকিয়ে সামনের দিনগুলোতে প্রতিবেশী দেশ, আঞ্চলিক দেশ ও সংস্থাগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে বাণিজ্য, যোগাযোগ, কূটনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতেই হবে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে আসিয়ান দেশগুলো ও চীনের মধ্যে যেমন যোগাযোগের বন্ধন স্থাপন করতে পারে তেমনি ভারতের সেভেন সিস্টারস এর সাথেও বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এসব উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে একমাত্র বাধা মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ এবং বহু বছর ধরে চলা জাতিগত সংঘর্ষ। এই সহিংসতা বন্ধ করতে পারলে মিয়ানমার উন্নয়নের পথে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশও দুদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও যোগাযোগের উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ২০ টির মত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক থাকলেও সেসবের তেমন কোন অগ্রগতি নেই যা দুর্ভাগ্যজনক।বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক যোগাযোগ মিয়ানমারের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, এবং চীনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য ২০০৭ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অগ্রগতি ধীর। পারস্পরিক সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য মিয়ানমারের সাথে সংযোগ উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং মিয়ানমারের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপনের জন্য চীন ও ভারত উভয়কেই বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার মিলে চকোরিয়া থেকে আলীকদম ও মদক হয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কালেতোয়া পর্যন্ত একটা সড়ক নির্মিত হলে তা কিউকতাও-পালতোয়া সংযোগকারী সড়কের সাথে যুক্ত হবে।

কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্পের এই সড়কটি ভারতের মিজোরামকে চীন এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করেছে। সড়কটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ সহজ হবে। এতে বাংলাদেশ ও চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবহন খরচ ও সময় কমবে এবং রাস্তা নির্মাণের ফলে এই এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হবে।

এশিয়ান হাইওয়ে চালু হলে তা দুই দেশের মধ্যে স্থল সংযোগ উন্নত করবে ও এই পথে সার, প্লাস্টিক, সিমেন্ট, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্যের বাণিজ্য প্রসারে ভুমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দোহাজারী- কক্সবাজার রেললাইন খুব শীঘ্রই চালু হবে। এই রেললাইন নেপাল, ভুটান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে সম্প্রসারন করে আন্তঃ দেশীয় যোগাযোগ উন্নত করা সম্ভব। প্রস্তাবিত ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে যদি এই রুটটি চীন থেকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের গুন্দুম হয়ে তিন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারে এতে পুরো অঞ্চল লাভবান হবে।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সংযোগে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, উন্নত বাণিজ্য যোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনের (বিমসটেক) সদস্য।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়াতে পারলে চীন ও ভারতের ওপর তাদের নির্ভরতা কমে যাবে এবং ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা,থাইল্যান্ড, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। বাংলাদেশ আসিয়ান এবং সার্কের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হলে আসিয়ান সদস্য হিসেবে মিয়ানমার বাংলাদেশের মাধ্যমে সার্ক মুক্ত-বাণিজ্য অঞ্চলে বাণিজ্য বাড়াতে পারবে।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এই দুই অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে মিয়ানমার ভুটান, নেপাল এবং ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য একটি বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে পারে। রাখাইনের কৃষিপণ্যের একটি টেকসই বাজার প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ একটা আদর্শ বাজার হতে পারে।

বাংলাদেশের পোশাক ও কৃষি শিল্পে অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে মিয়ানমার উপকৃত হতে পারে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিয়মিত বিরতিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা রেঙ্গুনে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে পারে। মিয়ানমার উন্নত উৎপাদন সুবিধা সম্পন্ন প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং বাংলাদেশ থেকে ইলেকট্রনিক্স ও ফার্মাসিউটিক্যালস আমদানির মাধ্যমে লাভবান হতে পারে। মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে যৌথ উদ্যোগ কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতেও কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বেশ বড় ভূমিকা রাখছে এবং  বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গৌরব অর্জন করেছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৪০টি দেশে এই ঔষধ রপ্তানি হয়েছে এবং সবচেয়ে বেশী রপ্তানি হয়েছে মিয়ানমারে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ২.৭৬ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে যা মোট ওষুধ রপ্তানির প্রায় ১৫ শতাংশ। রোহিঙ্গা ইস্যু ও জান্তা সরকারের অধীনে সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চলা স্বত্বেও মিয়ানমারে ঔষধ রপ্তানি বেড়েছে। মিয়ানমারের ঔষধের মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ মাত্র বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির মাধ্যমে পূরণ হয়েছে, মিয়ানমারের ঔষধ খাতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি আরও বাড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য অন্যান্য সম্ভবনাময় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। মিয়ানমারে কাঠ টিন, দস্তা, তামা, টংস্টেন, কয়লা, মার্বেল, চুনাপাথর, প্রাকৃতিক গ্যাস, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদির প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জ্বালানি সহযোগিতা পেতে পারে এবং প্রয়োজনীয় খনিজদ্রব্য আমদানি করতে পারে। মিয়ানমারে প্রচুর চুনাপাথর ও বাঁশ রয়েছে, বাংলাদেশ মিয়ানমারে সিমেন্ট কারখানা ও কাগজের মিল স্থাপন করতে পারে। মিয়ানমারও বিশ্বের প্রাকৃতিক কাঠের প্রধান সরবরাহকারী। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার যৌথ ভাবে মাছ, কাঠ প্রক্রিয়াকরণ, ক্লিংকার শিল্প, গ্যাস ও খনিজ আহরণ, বস্ত্র এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারে। মিয়ানমার কৃষিপণ্যেরও বড় উৎপাদক।

২০১৯ সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের পেঁয়াজ সংকটের সময়, মিয়ানমার বাংলাদেশকে পেঁয়াজ সরবরাহ করেছিল। বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়ন হলে এসব ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা কমে যাবে। মিয়ানমার বাংলাদেশে বৈধ ভাবে গবাদি পশু পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে এবং এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে।বাংলাদেশে মিয়ানমারের পণ্য বার্মিজ পণ্য হিসেবে পরিচিত, এদেশে এই পণ্যের ক্রেতা আছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উচিত সীমান্ত হাট প্রতিষ্ঠা করলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে ও বাণিজ্য সম্প্রসারন হবে।

বাংলাদেশে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মন্দির, বৌদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র, তীর্থস্থান, বৌদ্ধ ধর্মের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক স্থান আছে। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করার জন্য বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সাথে মিলে একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় এসব নিদর্শন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে। বান্দরবান জেলার স্বর্ণ মন্দির বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৌদ্ধের উপস্থিতির চিহ্ন বৌদ্ধ উপাসক এবং পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। বাংলাদেশী বৌদ্ধদের জন্য মিয়ানমারে ধর্মীয় পর্যটন এবং মিয়ানমারের জনগণের জন্য বান্দরবনের স্বর্ণমন্দির, ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার, রামু ইত্যাদি পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পর্যটন খাতে ও উন্নয়নের ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সৈকত দেশী ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করা যায়। এক দেশে বেড়াতে এসে তারা দুদেশের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। পর্যটনের উন্নয়নে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে কার্যকর চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে।

দুই দেশের জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ছাত্র বিনিময়, শিক্ষা বৃত্তি, ক্রীড়া  ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গেলে বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্ক ক্রমান্নয়ে উষ্ণ ও আন্তরিক হবে। মিয়ানমার ও রাখাইনের জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যে যোগাযোগ দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক এবং বিশ্বাসের ভিত্তি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। শিক্ষাবিদ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মধ্যে সম্পৃক্ততা জোরদার হলে উভয় দেশ নানাভাবে উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ মিয়ানমারের মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা করতে পারে এবং একই সাথে ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নে একসাথে কাজ করতে পারে। রাখাইন অঞ্চল উন্নত হলে বাংলাদেশও উপকৃত হবে এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এন জি ও’গুলো মিয়ানমারে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষন দেয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের মানবসম্পদ উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের দুর্যোগ ও ত্রান কার্যক্রমে বহু বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় মিয়ানমার বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং এই ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে।আন্তঃসীমান্ত এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, অস্ত্র ও মাদক পাচার সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন দৃঢ় করতে পারে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে জলদস্যু নিয়ন্ত্রন, মাদক ও মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ এবং পরিবেশ নিরাপত্তার নিশ্চিতের মত অপ্রচলিত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করতে পারে।

মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি, দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি তিনি চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, লাওস ও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানায়। মিয়ানমারের স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণ মিয়ানমারের জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে এবং তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অনেক উত্থান-পতন  থাকলে ও পারস্পরিক সুবিধার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য উভয় দেশেরই মনোযোগী হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ মিয়ানমার উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং জনগনের মধ্যে যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটিয়ে উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। বহু বছর ধরে উভয় দেশের মধ্য এ ধরনের নিবিড় যোগাযোগ বিভিন্ন কারনে স্থাপিত হয়নি। একবিংশ শতাব্দীতে এসে দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান রোহিঙ্গা সংকটে মধ্যেও এই যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসলে এ ধরনের উদ্যোগ এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে এটাই প্রত্যাশা।

লেথক :: ব্রিঃ জেঃ (অবঃ)শামস

ব্রিঃ জেঃ (অবঃ) হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এনডিসি,  এএফডব্লিউসি,  পিএসসি, এম ফিল, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক।

144 ভিউ

Posted ৮:০২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com