কক্সবাংলা ডটকম(৫ ফেব্রুয়ারি) :: বাংলাদেশ যে কোনও দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আর কেউ বাংলাদেশকে পেছনে টেনে নিতে পারবে না।’ ইতালি সফররত প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
রোমের ‘পারকো প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড স্পা’তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা। ওই সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ৯০ শতাংশই বাস্তবায়িত হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে। এখন দাতারা আমাদের ভিক্ষা দিতে আসে না। এর পরিবর্তে তারা উন্নয়ন সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে সহায়তা দিতে আসে। কারণ, আমরা আর কারও ভিক্ষা চাই না।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যেকোনও কাজই নিজেরা করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘এই সেতু নিয়ে সরকারকে দোষারোপ করতে চেয়েছিল বিশ্বব্যাংক। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বললাম, নিজস্ব তহবিলে পদ্মা সেতু বানাবো। আর এখন আমরা নিজস্ব অর্থেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সে কারণে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যখনই ক্ষমতায় আসবো, তখনই এই দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবো, যেন বিশ্বপর্যায়ে বাংলাদেশ মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারে।’ আর এখন দাবি করতে পারি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আমরা সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছি।
বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে ন্যূনতম উন্নত দেশ হিসেবে গড়েছিলেন জাতির জনক।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সেই অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা এটা এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। এই লক্ষ্য পূরণে আমরা ইতোমধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর কেউ আমাদের পেছনে টানতে পারবে না, আর আমরা সামনে এগিয়ে যেতে থাকবো…।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারাই অবৈধভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেছিল, তারাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যস্ত ছিল, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে নয়।’
রোমের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস ফারাজি, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল এবং প্রবাসী বাংলাদেশের পক্ষে হোসনে আরা বেগম বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন—ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ।
উল্লেখ্য, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতের আমন্ত্রণে ৪ দিনের সরকারি সফরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোম পৌঁছন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে রোমের ফিয়ামিসিনো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মিনিস্টার প্লেনিপোটেনসিয়ারি অব ইটালিয়ান ফরেন মিনিস্ট্রি ক্রিস্টিয়ানো কোস্তাফাবি এবং ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান।
বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে পার্কো দেই প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড স্পায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইতালির রাজধানীতে সফরকালে তিনি সেখানে অবস্থান করবেন।
দুই শীর্ষ নেতার আজ শীর্ষ বৈঠক :
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জিউসেপ কোঁতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বৈঠকে সাংস্কৃতিক বিনিময়, রাজনৈতিক বিষয় এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত ৩টি চুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুই শীর্ষ নেতা তাদের শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পালাজো চিগিতে আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজেও প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন।
সকালে রোমের ভায়া ডেল’এন্টারটাইড এলাকায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সরি ভবন উদ্বোধন করবেন।
এদিন ইতালীয় ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার আবাসকালীন হোটেলের সভাকক্ষে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর একই হোটেলে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন।
পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ :
৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এদিন দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে ট্রেনে রোম থেকে ইতালির মিলান শহরের উদ্দেশে যাত্রা করে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় সেখানে পৌঁছবেন। মিলান সফরে তিনি এক্সেলসিয়ার হোটেল গালিয়ায় অবস্থান করবেন।
৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে মিলান মালপেন্সা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুবাই হয়ে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
Posted ৪:০১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta