বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিএনপিতে ফের গ্রেফতার আতঙ্ক

বুধবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
327 ভিউ
বিএনপিতে ফের গ্রেফতার আতঙ্ক

কক্সবাংলা ডটকম(৫ সেপ্টেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র চার মাসের মতো বাকি। আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত ক্ষণগননা। ডিসেম্বরের শেষের দিকে নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ সরগরম নির্বাচনী রাজনীতি।

সেপ্টেম্বরের শুরুতেই প্রথমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাচনী ভাবনা প্রকাশ করেছেন। ঠিক একইভাবে রাজধানীতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি দাওয়া তুলে ধরেছে ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি জোট রাজনীতিও গতি পেয়েছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে নির্বাচন কমিশনও।

এমন পরিস্থিতিতে দেশে নির্বাচনী আলোচনার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। এর মধ্যে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্ভার থাকলেও বেশ বেকায়দায় ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। কঠিন সময় পার করছে দলটি। দিন যত যাচ্ছে দলের নির্বাচনী রাজনীতিতে সংকট ততই বাড়ছে। ঠিক এই মুহূর্তে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মোটা দাগের তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে দলের সামনে।

আর এসব কারনে বিএনপিতে ফের গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দলের মধ্যম সারি থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই এখন ঘরছাড়া।  বিএনপি বলছে, ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতে চায় সরকার। এ কারণে গ্রেফতার অভিযানের পাশাপাশি পুরনো মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে ১৮ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ৭৮ হাজার মামলা ঝুলছে। নতুন মামলাও হচ্ছে। আবার পুরনো মামলাগুলো সচল করেও কাউকে কাউকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এর মধ্যে দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই ৩৫টি মামলা রয়েছে।

লন্ডন অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর বড় অংশই মানহানির মামলা। দুর্নীতির এক মামলায় তাঁকে ৭ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ও দোরগড়ায়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা রয়েছে।

এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১৪, ড. খন্দকার  মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ২০, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১০টি করে, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধশত করে মামলা রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১ সেপ্টেম্বর ঘিরে নেতা-কর্মীদের ওপর নতুন করে মামলা ও গ্রেফতারের খড়গ নেমে আসে। এখন শুনছি পুরনো মামলাগুলোও সচল করা হচ্ছে। আবার নিত্য নতুন মামলা করা হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে ব্যাহত করতেই সরকার আতঙ্কিত হয়ে এ কাজ করছে।’

পুলিশের সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) রুহুল আমিন  বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা থাকলে পুলিশ তার কর্তব্য কাজ করতে বাধ্য। এর বাইরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারও বাড়িতে হানা দিচ্ছে বা কাউকে গ্রেফতার করছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি যখন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে তখনই সরকার গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করেছে। সরকার চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কারণ, বিএনপি নির্বাচনে এলে সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিই জামানত হারাবে। তবে মামলা-হামলা বা গ্রেফতার যাই হোক বিএনপি পিছপা হবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে বিএনপির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। এর মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের বাসায় দুই দফায় অভিযান চালায় পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। অবশ্য ১ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে জনসভায় হঠাৎ দেখা মেলে তার। জনসভায় বক্তব্য দিয়ে আবারও আড়ালে চলে যান বিএনপির এই নেতা।

এ ছাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অনেক নেতার বাসায় অভিযান চালানো হয়।

এ কারণে মধ্যম সারি থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগরের তৃণমূলের নেতারাও এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশব্যাপী আবারও নতুন করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অথবা নিজেরাই নাশকতার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঈদের পর থেকে এ পর্যন্ত সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নতুন মামলা হয়েছে কয়েক হাজার। সরকার মূলত আতঙ্কে ভুগছে।

বিএনপি জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, তার ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন, আনোয়ার হোসেন মজুমদার, আবু নাসের ফকির, জাফর আহমেদ, বাবুল তালুকদার, সুমন আহমেদ, রাকি সরদারসহ ৬০-৬৫ জনের নামে নতুন করে নাশকতার মামলা করা হয়েছে। একইভাবে শ্যামপুর থানায় ৯৮ জন, ডেমরা থানায় ১০৫ জন, ওয়ারী থানায় ২২৫ জন, সূত্রাপুর থানায় ১৩ জন, যাত্রাবাড়ী থানায় ৯৯ জন এবং তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। বিএনপি বলছে, ককটেল বা অন্যান্য বিস্ফোরক বস্তু দেখিয়েও বিএনপি নেতাদের নামে নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে।

সারা দেশে সাম্প্রতিক সময় নতুন মামলার চিত্র তুলে ধরে বিএনপি জানায়, বগুড়ায় জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও জীবন বিপন্ন চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। এ ছাড়া যুবদল নেতা সোহাগ, সজীব, শৈবাল, প্রবাল, রাহী, টফিন, মামুনসহ অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করে।

শাহজাহানপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশারসহ ৩৩ জনের নামে মামলা দায়ের করে পুলিশ। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট সদর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার, শ্রমিক দল নেতা মনিরুল সরদার, জামাল শেখ, যুবদল নেতা মো. মোদাচ্ছের মেম্বারকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

এ ছাড়া দলীয় পোস্টার লাগানোর অপরাধে শতাধিক নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পৌর বিএনপির হাজী আমিনুল ইসলাম আমিনসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া হালুয়াঘাট উপজেলায় ৪৫ জন এবং ধোবাউড়ায় ৪৩ জন, তারাকান্দা ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর, শেরপুর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুরে ৫০ জনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি লিটন আকন্দ, ছাত্রদল সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনসহ ১৫৫ জনের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক মামলা দায়ের করা হয়। নেত্রকোনা জেলায় ১৫৭ জন, নড়াইলে ৩৫ জন, নওগাঁয় ৪০০ জন, ঝিনাইদহে ১০১ জন, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, বিএনপি নেতা কাজী মনির ও মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপুসহ ৫৭ জন এবং সুনামগঞ্জের তাহেরপুরে ৪ শতাশিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা বিএনপির চার শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মো. মোবারক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক সংকটও বেশ ভাবনায় ফেলেছে বিএনপিকে। বিশেষ করে দলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভালো না। গত ১০ বছরেও দলকে নির্বাচনী সংগঠনে রূপ দেওয়া যায়নি। দলের পুনর্গঠনও কাক্সিক্ষত মাত্রা পায়নি। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিভিন্ন জেলা ও থানা কমিটি গঠন থেমে আছে। কোন্দল ও প্রতিবাদের ভয়ে ছাত্র ও যুবদলের কমিটি ঘোষণা দিতে পারছেন না দলের হাইকমান্ড। মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পরও কমিটি ঘোষণা হয়নি ছাত্রদলের।

দলের শীর্ষ দুই কান্ডারী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনের আগে দল ও জোটকে অটুট রাখার বিষয়ও বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলেছে। দলের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে সরকারি দল বিএনপিকে যেমন ভাঙার চেষ্টা করবে, আবার টেকনোক্রেট কোটায় জোটের দুই-একজনকে সরকারের নেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়েও অবগত বিএনপির হাইকমান্ড। এমন অবস্থায় নিজের জোট ধরে রাখার বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কারারুদ্ধ চেয়ারপারসন।

দলের ও জোটের নেতাদের কাউকে কাউকে বাগে নিতে পারলে বিএনপিকে সরকার দুর্বল করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিএনপি অংশ না নিলে জোট ও জোটের বাইরের কিছু রাজনৈতিক দল সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এমনকি বিএনপিরও একটি খন্ডিত অংশকেও নির্বাচনে নিতে সক্ষম হতে পারে সরকার।

327 ভিউ

Posted ২:২২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com