কক্সবাংলা ডটকম(১৫ এপ্রিল) :: হাস্যরসের মধ্য দিয়ে অনেক বাস্তব ঘটনা তুলে ধরা যায়। তার প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদের লেখা ও নওয়াজিশ আলী খানের প্রযোজনায় বিটিভিতে ১৯৮৮ সালে প্রচার হয় ‘বহুব্রীহি’। আজও এই নাটক প্রাসঙ্গিক ও জনপ্রিয়। ‘বহুব্রীহি’ নিয়ে নিজের কথা জানিয়েছেন গুণী এই শিল্পী
নাটকটির কাজ কবে করেছি, সময়টা ঠিক মনে পড়ছে না। সম্ভবত ১৯৮৮ বা ‘৮৯ সাল হবে। সঠিক সময়টি ধারাবাহিকটির প্রযোজক নওয়াজিশ আলী খান ভালো বলতে পারবেন। এই নাটকে আমি অভিনয় করেছিলাম ডাক্তারের ভূমিকায়।
গল্প অনুযায়ী আমার চরিত্রটি একটু বোকা বোকা স্বভাবের। নাটকটি দেখে সেই সময় ঢাকায় ডাক্তাররা মিছিল করেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, ডাক্তারদের কেন বোকাভাবে নাটকটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আমার সহশিল্পী ছিলেন লুৎফুন নাহার লতা। তাকে বিয়ে করে সোবহান সাহেবের [আবুল হায়াত] বাসায় চলে আসি। নাট্যকার ও প্রযোজক আমার চরিত্রটি ঘরজামাই করেছেন কৌশলে। যেহেতু সেই সময় লোকেশনের এত বৈচিত্র্য দেখানোর সুযোগ খুব কম ছিল বিটিভিতে।
সুতরাং চরিত্রকে এ বাড়িতে নিয়ে এলেই সুবিধা। আমার চরিত্রটির ব্যপ্তি খুব বেশি ছিল না। বিটিভির একটি ফ্লোরে নাটকটির সেট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ২-৩টা বেড রুম, একটি বড় ড্রয়িংরুম আর খাবার ঘর। এই ঘরগুলো আর দু’চারটি আউটডোর সিন ছাড়া, বাদ বাকি সবই ছিল ইনডোর। অনেকটা থিয়েট্রিক্যাল কম্পোজিশনে ঘরের ভেতরেই সব চরিত্রকে দিয়ে অভিনয় করানো হয়েছে। মঞ্চনাটকের জন্য যেমন হয়ে থাকে, সে রকমই।
নাটকের গল্পে দেখা যায়, অবসরপ্রাপ্ত বিত্তবান সোবহান এবং একমাত্র কন্যা মিলিকে নিয়ে তার সংসার। সেই সংসারে আরও থাকেন অর্ধ প্রকৃতস্থ এক মামা [আলী যাকের]। তাদের দু’জন কাজের লোক। বাড়িতে ওপরতলায় আসাদুজ্জামান নূর তার এক ছেলে ও এক কন্যাকে নিয়ে এসে ভাড়া থাকেন। একটা সময় গ্রাম থেকে ইমদাদ খোন্দকার নামের একজন তার বিবাহযোগ্য কিশোরী নাতনি পুতুলকে নিয়ে এই বাড়িতে আসেন। সুতরাং সব চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটে একটি বাড়িতে এবং নানা রকম উদ্ভট ও অপ্রকৃতিস্থ ঘটনার জন্ম হতে থাকে একের পর এক।
এ নাটকে মামার বেশ কিছু চমৎকার সংলাপ বের করে এনেছেন নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ। যেমন- ‘কথার মধ্যে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না দুলাভাই’, ‘আপনি প্রতিভা চিনতে পারলেন না’, ‘বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না’, ‘পাবলিকের মুখ তো আর বন্ধ করা যাবে না’; এসব। বাংলাদেশ টেলিভিশনে এর আগে কোনো নাটকে এমন হাসির দৃশ্য কেউ দেখেনি।
নাটকটির শেষের দিকে ছিল মুক্তিযুদ্ধের কথা। সোবহান সাহেবের বাসায় গ্রাম থেকে আসা আশ্রিত বদলোক ইমদাদ খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করার পর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে পুরো পরিবার। মামা বুদ্ধি বের করেন। টেপ রেকর্ডারে ‘তুই রাজাকার’ রেকর্ড করে শোনানো হবে তিনটি টিয়া পাখিকে এবং ৭ দিনের মধ্যে তারা শিখেও ফেলবে। দুটো পাখি মারা যায়, তৃতীয় টিয়া এক সময় বলে ওঠে ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’।
১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশ টেলিভিশন বা রেডিওতে রাজাকার শব্দটি ব্যবহার হয়নি। কেন করেননি আমরা জানি না, কিন্তু জানি যে, এই নাটকের মাধ্যমে ‘তুই রাজাকার’ শব্দটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রথম প্রচার হয়।
Posted ৩:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta