কক্সবাংলা ডটকম(২৯ ডিসেম্বর) :: দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রসিদ্ধ সংবাদমাধ্যম ও সাময়িকীতে প্রকাশ হয়েছে বেশকিছু নিবন্ধ। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচনকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সম্প্রতি ‘ব্যাটল ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক নিবন্ধ প্রকাশ হয়। নিবন্ধে সাংবাদিক মানস ঘোষ লেখেন, শেখ হাসিনার গত এক দশক ধরে বাস্তবায়িত নীতি ও কর্মসূচিগুলোর জন্য এক লিটমাস টেস্ট হচ্ছে এবারের নির্বাচন। নিবন্ধে বলা হয়, নির্বাচনে শেখ হাসিনার এসব কর্মসূচির ইতিবাচক প্রভাব পড়া উচিত। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ, বিশেষ করে দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি তার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এতে আরো বলা হয়, বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, দলটি সাংগঠনিকভাবে একেবারেই ছত্রভঙ্গ। নির্বাচনমুখী দল হয়েও ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তটি ছিল বিএনপির জন্য আত্মহত্যার শামিল।
দি ইনডিপেনডেন্ট: ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি দীর্ঘ এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সংবাদমাধ্যমটির এশিয়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডাম উইথনাল এতে লেখেন, বিরোধী দলের কর্মীদের জন্য এক ধরনের ভয়ের পরিবেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন।
নিবন্ধে বলা হয়, গত এক দশক ধরে ক্রমেই কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের দিকে ঝুঁকেছে আওয়ামী লীগ। বিরোধীদের দমন করেছে কঠোরভাবে। আবার অন্যদিকে অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুবাদে গোটা অঞ্চলে সাফল্যের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
চ্যাথাম হাউজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. গ্যারেথ প্রাইসকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যেহেতু বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে কোনো নির্ভরযোগ্য জরিপ পরিচালিত হয়নি, তাই ভোট দেয়ার সময় ভোটাররা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন, তা বলা মুশকিল।
ড. গ্যারেথ প্রাইসকে উদ্ধৃত করে এতে আরো বলা হয়, যদি প্রত্যাশামাফিক ভোটে শেখ হাসিনা জেতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সেখানে কিছু বিক্ষোভ হবে, যা দমনও করা হবে।
দ্য মিন্ট: ভারতীয় বিজনেস ওয়েবসাইট দ্য মিন্টে লন্ডনভিত্তিক লেখক সলিল ত্রিপাঠির একটি বিশ্লেষণে বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরে না আসে, সেটা বেশ অবাক করা ব্যাপার হবে।’
নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ: জাপানভিত্তিক সাময়িকী ‘নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ের’ গত সপ্তাহের সংখ্যার মূল নিবন্ধ ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব বাংলাদেশ’-এ বলা হয়, সব ধরনের প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে বিশ্বের অন্যতম এক সাফল্যের কাহিনী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গল্প। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশক ধরে ৬ শতাংশের উপরে, গার্মেন্ট শিল্পে চীনের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে, মাথাপিছু আয় ২০০৯ সালের পর থেকে তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫০ ডলারে। চরম দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ৯ শতাংশের নিচে।
এতে বলা হয়, ‘যে সরকারের অধীনে এ ধরনের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় সে সরকারের প্রতি ব্যাপক সমর্থন থাকার কথা। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিরোধীদলীয় কর্মীসহ মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনে কারচুপি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। পর পর পাঁচ বছরের দুটি মেয়াদের পর এখন কিছু ভোটারের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
টাইম: মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’স আয়রন লেডি ফেসেস এ হবলড অপজিশন অ্যাজ শি সিকস হার ফোর্থ টার্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়, ‘রোববারের নির্বাচনে রেকর্ড চতুর্থবারের মতো জয়লাভ করতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমৃদ্ধ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজের সমর্থন আদায় করছেন তিনি। অন্যদিকে দক্ষিণ এশীয় দেশটির অসাধারণ অর্থনৈতিক সাফল্য ভঙ্গুর গণতন্ত্রের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন তুলছেন তার সমালোচকরা।’
ফোর্বস: ফোর্বসে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ: হোয়্যার এ ডারউইনিয়ান ব্যাটল ফর পলিটিক্যাল সার্ভাইভ্যাল ইজ আন্ডারওয়ে’ শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়, ‘শুধু অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতিপথ নয়, বাংলাদেশে বিদেশী কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ আসন্ন নির্বাচন। আওয়ামী লীগ যদি বিরোধী দলগুলোর জন্য আরো বেশি মাত্রায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে না পারে, সেক্ষেত্রে দলটির সম্ভাব্য বিজয় সেক্যুলারিস্ট ও ইসলামিস্টদের মধ্যে আদর্শগত বিভেদকে আরো প্রকট করে তুলতে পারে, যা সামনের বছরগুলোয় নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মীয় দলগুলোর সদস্যদের উগ্রপন্থাকে আরো উস্কে দিতে পারে।
দ্য গার্ডিয়ান: ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে গতকাল প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ইলেকশন: শেখ হাসিনা হেডস ফর টেইন্টেড ভিক্টরি’ শীর্ষক এক নিবন্ধে বলা হয়, ‘যার তত্ত্বাবধানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ, আবার যার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য রোববার ভোট দেবেন বাংলাদেশীরা।’
Posted ১২:২৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta