কক্সবাংলা ডটকম(২৮ জুলাই) :: দেশে দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্র প্রতারণা করে যে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে তা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করে ১২টি ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। এদের মধ্যে দেশের দুটি শীর্ষ ব্যাংক ডাচবাংলা ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ, দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তির সঙ্গে যোগসাজশে কতিপয় বিদেশি প্রতারকের কয়েকটি চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রটি কখনো লটারি জয়, কখনো বিদেশি বিনিয়োগ কিংবা আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে অর্থ পাঠানোর কথা বলে সাধারণ মানুষ প্রলুব্ধ করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। এছাড়া প্রেমের ফাঁদে ফেলেও অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
প্রেমের ফাঁদে ফেলে তারা প্রতারণা করছে এমন একটি চক্রের ৭ সদস্যকে শনিবার গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪ নাইজেরিয়ান রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান এদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারণার অর্থ দেশের কয়েকটি নামকরা ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে পাচার হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গ্রেপ্তারকৃত ওই প্রতারকদের বিষয়ে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিরা আমাদের দেশের নাগরিকদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করছে। তারা তাদের প্রতারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রেমের ফাঁদসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রলভোনের মধ্যমে তারা প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, বিদেশি এসব প্রতারকদের প্রতারণার অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের এমন ১২টি ব্যাংক শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
আব্দুল বাতেন বলেন, বিভিন্ন কৌশলে তারা এসব ব্যাংকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে দেশের বাইরে টাকা পাচার করছে। চিহ্নিত ১২টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশিরা প্রতারণার টাকা সংগ্রহ করেন। এসব টাকা তারা হুন্ডির মাধ্যমে পাকিস্তানি নাগরিক দানেশ রিজভির কাছে পাঠানো হয়ে থাকে।।
এসব কাজে বাংলাদেশিরাই তাদেরকে সহায়তা করে থাকে। বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতারকচক্রের আলাদা আলাদা ৮ থেকে ১০টি করে অ্যাকাউন্ট রয়েছে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা। তবে তিনি উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করেননি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া বিদেশি নাগরিকদের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংকের একটি তালিকা করা হয়েছে। ওই তালিকায় সিটি ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নাম রয়েছে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে ভেরিফিকেশনের জন্য নানা ধরনের ডকুমেন্ট দিতে হয়। তবে তারা কীভাবে একাধিক ব্যাংকে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলেছে সেটি তদন্ত করা হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর যে কোনো বিষয়ে তদন্তের দায়ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। আশা করছি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ নাইজেরিয়ানসহ ৭ প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নাইজেরিয়ার নাগরিক জন অগডি ইউজিও, মাইকেল ইউজিনি ব্রাউন, নামডি কেলভিন, আফেজ এবং বাংলাদেশি লিজা আক্কার ওরফে অ্যাসতা, মহসিন শেখ ও তাসমিয়া পারভিন শিমু।
কামরুজ্জামান নামে একজন ভুক্তভোগীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কামরুজ্জামানের সঙ্গে ফেসবুকে প্রিসকা খালিফা নামে এক কথিত বিদেশী নারীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। ওই মেয়ে তার মৃত বাবার অ্যাকাউন্টে ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার দেখিয়ে বাংলাদেশে ভিকটিমের মাধ্যমে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে। এই বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য কিছু টাকা প্রয়োজন বলে জানায়।
আব্দুল বাতেন বলেন, এরপর লিজা আক্তার এবং মোহসিন নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে ২৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৪৪ টাকা হাতিয়ে নেয়। একইভাবে গ্রেপ্তারকৃত মাইকেল ও নামডি জানায় তারা দীর্ঘদিন যাবৎ গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে কিছু বাংলাদেশিদের সহায়তায় বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রচুর পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।
Posted ২:২৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta