শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বিপজ্জনক পথে সৌদি আরব

মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭
285 ভিউ
বিপজ্জনক পথে সৌদি আরব

কক্সবাংলা ডটকম(২১ নভেম্বর) :: বয়স্ক সৌদিরাজ ক্ষমতার উত্তরাধিকার হিসেবে বেছে নিয়েছেন তরুণ যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে। প্রিন্স সালমান তারুণ্যে আর ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতায় একের পর এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। কি কি ঘটনা ঘটাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ? তার নমুনা দেখা যেতে পারে।
.
এক. তার সম্ভাব্য রাজ-প্রতিদ্বন্দ্বী রাজপরিবারের ক্ষমতাধর অনেক সদস্যকে বন্দী করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। ১১ জন রাজকুমার, চার মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছেন। ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী রাজকুমার আওয়ালিদ বিন তালালকেও গ্রেপ্তার করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডকে তার রাজনৈতিক সংস্কার হিসেবে ঘোষণা দেয়ার চেষ্টা চলছে।

দুই. সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে তার মনস্তাত্ত্বিক ও বাস্তবিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। ইরানি বিপ্লবের প্রভাব যাতে সৌদি বলয়ে প্রবেশ করতে না পারে তার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে সৌদি আরব। অনেক দিন ধরে ইরানকে একটা পাল্টা আঘাত হানার ইচ্ছে সৌদি আরবের। হালে আমেরিকা ও ইসরাইলের প্রত্যক্ষ মদদে ইরানকে কোণঠাসা করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে লেবাননকে অস্থির করতে চাইছে সৌদি যুবরাজ।

তিন. শিয়া ও সুন্নির দ্বন্দ্ব ঐতিহাসিক এবং পুরনো। সৌদি আরব সুন্নি প্রধান দেশ। নিজেকে সে সুন্নি উম্মার নেতাও ভাবে। অন্যদিকে শিয়া প্রধান দেশ ইরান। ফলে ইরান সৌদি দ্বন্দ্বের একটা ধর্মীয় কারণ বিদ্যমান। ধর্মীয় ভাবগত এই বিরোধ যা শিয়া-সুন্নি বিরোধ নামে পরিচিত। তাতে বিভক্ত সৌদি আরব এবং ইরান। রাজনৈতিকভাবে ইরান পলিটিক্যাল ইসলামের সমর্থক। ইসলামি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গত ত্রিশ বছর ধরে ইরান শাসন করছে রাজনৈতিক ইসলামের ঝাণ্ডাধারীরা।

সৌদি যুবরাজ এর পাল্টা হিসেবে ‘মডারেট ইসলাম’কে খাড়া করার পায়তারা করছেন নিজ দেশে। নতুন করে সংস্কার কর্মসূচির আওতায় দেশের মধ্যে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কট্টর রক্ষণশীলতার বদলে শিথিল সামাজিক অনুশাসন চালুর কথা ভাবছেন যুবরাজ সালমান।

চার. যুবরাজ সালমান দেশের অর্থনীতির সংস্কার কর্মসূচি চালু করতে চাইছেন। তেল নির্ভর অর্থনীতির বদলে এক ধরনের পশ্চিমা ধাঁচের মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার কথা ভাবছেন। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা নিচ্ছেন। ‘অর্থনৈতিক হাব’ হিসেবে সৌদি আরবকে আকৃষ্ট করতে ভিশন ২০৩০ চালু করেছেন।

পাঁচ. লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে সৌদি আরবে আটকে রেখে তাকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করেছেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিবেশী ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে একটা শক্তিমান অবস্থান যাতে চালু থাকে তার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইয়েমেনে চলছে সৌদি ও ইরান প্রক্সি ওয়ার।

ইয়েমেনের সরকারের পক্ষে সৌদি আরব এবং হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষে ইরান সেখানে প্রক্সি ওয়ার চালাচ্ছে। সাদ হারিরির পদত্যাগের ঘোষণার মধ্য দিয়ে লেবানন ও ইরানের বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ারের আরেকটা নতুন ফ্রন্ট চালুর উদ্যোগ নিলেন সৌদি যুবরাজ সালমান।

০২.
সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান যেসব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিচ্ছেন তার লক্ষ্য দুটো। প্রথমত, নিজ দেশে তার ক্ষমতা শক্ত করা। দুই, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমশ বাড়ন্ত ইরানকে একটা শক্ত প্রতিরোধের আওয়াজ দেয়া। যুবরাজ সালমানের এই কাজে প্রধানতম সহায় কি? এক, ইসরাইল ও মার্কিন মিত্রতা। দুই, নিজ দেশের তরুণ সমাজকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সৌদি যুবরাজের এই নতুন চিন্তা এবং নতুন কর্মপন্থা কতটা টেকসই হবে। সৌদি যুবরাজ নির্বিঘ্নে তার চিন্তা বাস্তবায়নের সুযোগ পেলে, একটা পরিবর্তিত সৌদি আরব হয়তো দেখা যাবে। কিন্তু সেই পরিবর্তিত সৌদি অরব, তার চারপাশে কি প্রভাব ফেলবে।
চারপাশের মধ্যপ্রাচ্যের অপরাপর দেশগুলোই বা কীভাবে নেবে এই সম্ভাব্য পরিবর্তনকে। এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে সৌদি যুবরাজের সামনের দিনগুলো সুখময় হবে; না, প্রতিরোধের বিষময়তায় তিনি আরও বিপদাপন্ন করে ফেলবেন তার দেশকেই।

০৩.
এখন দেখা যাক, সৌদি আরব নিজে কি ধরনের সংকটের মধ্যে আছে।

এক. প্রথম বিষয়টি অর্থনৈতিক। সৌদি পেট্রোডলার নির্ভর অর্থনীতি ক্রমশ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে। সৌদি আরবকে তাই বিকল্প অর্থনীতির খোঁজ করতে হবে। অন্যদিকে সৌদি জনগণের একটা বড় অংশ এখন তরুণ সমাজ। নিকট ভবিষ্যতে তাদের স্বস্তিময় কর্মসংস্থান করার কাজটিও জরুরি। শুধু তেলনির্ভর অর্থনীতি এই কাজে স্বস্তি দেবে না। সে অর্থে সৌদি সমাজ এক পরিবর্তন উন্মুখ ট্রানজিশন কাল পার করছে।

অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা খাতে সৌদি ব্যয় কমার বদলে বাড়ছেই। এটি তার সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় একটা বাড়তি চাপ ফেলছে।

দুই. সৌদি আরব মক্কা ও মদিনার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে নিজেদের দাবি করে। আদর্শগত বা দর্শনগতভাবে বিশ্বে মুসলমানদের ওপর সৌদি আরবের কোনো প্রভাব নেই। অধিকন্তু ওয়াহাবি ঘরানার ব্যাপ্তি ঘটায় সৌদি আরবের অভ্যন্তরে যে সমাজ তৈরি হয়েছে, তার সঙ্গে রাজতন্ত্রের বিকাশ সাংঘর্ষিক। দেশের ভেতরে ও বাইরে সৌদি আরব তাই আদর্শিক চিন্তা বিস্তারে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।

এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তো বটেই আরব দুনিয়াজুড়ে আরব বসন্তের প্রভাবকে জোর করে পার করতে হয়েছে এবং হচ্ছে সৌদি আরবকে। অন্যদিকে ইরানি বিপ্লবের ত্রিশ বছর ব্যাপী শক্তিমান সামর্থ্যকেও এড়িয়ে চলতে হয়েছে। এই দুই প্রবল স্রোতকে উপেক্ষা করতে গিয়ে, নিজেদের ভেতর যে মতাদর্শিক অন্তঃক্ষরণ তা ঠেকাতে বিপুল শক্তি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে সৌদি আরবকে। ফলে যুবরাজ সালমান নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।

তিন. প্রতিবেশী ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে একটি পক্ষ নিতে হয়েছে সৌদি আরবকে। একটু দূরে সোমালিয়ায় রাজনৈতিক ইসলামের যুদ্ধ চলছে। প্রতিবেশী ইরাক, তুরস্ক, মিসর, সুদান, সিরিয়ায় চলছে নানান রাজনৈতিক ওলটপালট। যে কোনো সময় এসব দেশের যে কোনো সংকটের প্রভাবজনিত অগ্নিবলয় উথালপাতাল করে দিতে পারে সৌদি জীবন। নিজ দেশে তো বটেই প্রতিবেশী প্রায় সকল দেশের ভয়ের জীবন সৌদি সমাজকে দারুনতরভাবে পাল্টে দিতে পারে।

০৪.
বর্ষীয়ান রাজা তাই যুবরাজ সালমানকে নিয়ে এক রাজনৈতিক জুয়ার আসরে নেমেছেন। কথা উঠেছে অচিরেই বৃদ্ধরাজা, যুবরাজকে নতুন রাজা হিসাবে ঘোষণা দিয়ে উপদেষ্টার ভূমিকা নেবেন। এই কথা সত্যি হলে বুঝতে হবে, যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান বাঘের পিঠে চড়েছেন। এই বাঘ হচ্ছে খোদ আমেরিকা এবং ইসরায়েল। যুবরাজ তাই খুবই ক্ষিপ্র এবং অস্থির। তার নিজের শত্রু এবং কথিত বন্ধুদের শত্রুকে বধ করতে হবে তাকে।

সৌদি আরবের চারপাশ জুড়ে দেশে দেশে যে প্রতিকূল ঝড়ো হাওয়া তার বিরুদ্ধে প্রবহমান, তখন সৌদি আরবকে লড়তে হবে সেই স্রোতের বিরুদ্ধেও, নানা ফ্রন্টে। আমেরিকা এবং ইসরায়েলের ফাঁদে পড়ে ইরানকে ঘায়েলে আরেকটু সম্মুখ সমর বেছে নিলে মূল বিপদ শুরু হবে তখনই।

কেননা তখন সৌদির অপরাপর শত্রুরা সুযোগ নেবে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে রাশিয়া এবং চীন তখন রাখঢাক না করেই মাঠে নামতে পারে। সৌদি যুবরাজ এই ফ্রন্ট খুললে খোদ সৌদি আরবের অভ্যন্তরে যে শক্তিরা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারেনি এতকাল, তারা নানা অজুহাতে মাঠে নামার সুযোগ পাবে।

এই হট্টগোলে সৌদি আরবে বাড়ন্ত প্রতিরক্ষা বাজারের বিস্তার ঘটাবে আমেরিকা -ইসরায়েল। এই চাপ কি সইতে পারবে সৌদি আরব? বলা বাহুল্য সৌদি যুবরাজ যত আগ্রাসি হবেন ঘরে বাইরে তার শত্রুরাও ততটাই ক্রিয়াশীল হবে। আপাতত এই বিপদজনক পথ থেকে সৌদি আরবকে ফেরানোর কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

285 ভিউ

Posted ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com