বিশ্বকাপ ফুটবলে ফরাসি বিপ্লব : বিশ্বজয়ী ফ্রান্স, স্বপ্নভঙ্গ ক্রোয়েশিয়ার
রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮
394 ভিউ
কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জুলাই) :: বিশ্বকাপ ফুটবলে বিশ্ববাসী দেখল আরও এক ফরাসি বিপ্লব। বিশ্বকাপের মেগা ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হল ফ্রান্স।
রাশিয়ার সেই বাঘমামার মতো কথার দাম রাখতে পারল না ভালুক মামা। এ যেন ভালুক মামার কথার খেলাপ হল। ক্রোয়েশিয়ার জয়ের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী ধোপে টিকল না লুজনিকি স্টেডিয়ামে।
১৯৯৮ সালের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির সাক্ষী রইল আইফেল টাওয়ারের দেশ। শুধু কী তাই, জাগালো-বেকেনবাওয়ারের কৃতিত্বের শরিক হলেন দেঁশ। অধিনায়ক ও কোচ এই দুই অবতারেই বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে উঠল এমবাপেদের কোচের। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ২০ বছর বাদে বিশ্বকাপ জিতল ফ্রান্স।
অন্যদিকে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন মদ্রিচরা। ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে টক্কর দিলেও শেষ মুহূর্তে দেঁশর ছেলেদের কাছে হার স্বীকার করতে হল দালিচের ছেলেদের। তবে বিশ্বকাপের মেগা ফাইনালে হেরে গিয়েও ফুটবলপ্রেমীদের মনে অবশ্যই ছাপ ফেললেন ক্রোটরা।
এদিন খেলার শুরুতে মান্দজুকিচের হাত ধরে ভুল করেছিলেন ক্রোটরা। বিশ্বকাপ ফাইনালে আত্মঘাতী গোল খেয়ে ১৮ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সের কাছে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। এর ঠিক ১০ মিনিটের মাথায় পেরিসিচের গোলে সমতা ফেরান মদ্রিচরা। তবে ক্রোয়েশিয়ার স্বস্তি ১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হল না। ৩৮ মিনিটের মাথায় গ্রিজমানের গোলে ২-১ ব্যবধানে ফের এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
এরপর আর ফ্রেঞ্চ খেলোয়ারদের ধরে রাখতে পারেননি ক্রোটরা। ৫৯ মিনিটের মাথায় পোগবার গোল ও ৬৫ মিনিটের মাথায় এমবাপের গোলে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে সাাঁড়াশি চাপে রাখে ফ্রান্স। ৬৯ মিনিটের মাথায় চমকপ্রদ গোল করে মান্দজুকিচ দলকে একঝাপ এগিয়ে দিলেও সমতা ফেরাতে পারেননি।
৪-২ ব্যবধান ভাঙতেই পারেননি মদ্রিচরা। যদিও চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি তাঁরা। কিন্তু ফরাসি ফুটবলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের কাছে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠতে পারলেন না ক্রোটরা। নির্ধারিত সময়ে রেফারির বাঁশির শব্দে যখন ফরাসি বিপ্লব ঘটল লুজনিকি স্টেডিয়ামে, তখন একটা ছোট দেশ প্রথমবার বিশ্বজয়ের দোরগোড়ায় এসে নবজাগরণ ঘটাতে পারল না।
একদিকে জয়ের আনন্দে উল্লাস এমবাপেদের, অন্যদিকে পরাজয়ের গ্লানিতে চোখের কোণে জল টলমল ক্রোটদের…এ এক অন্য অনুভূতির সাক্ষী হয়ে রইল লুজনিকি স্টেডিয়াম।
আর ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শেষ ৯০ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববাসী দেখল আরও একটি ফরাসি বিপ্লব।
টুর্নামেন্টের সেরা মদ্রিচ, সোর উঠতি ফুটবলার এমবাপে
বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল জিতলেন লুকা মদ্রিচ৷ ক্রোয়েশিয়ার ১০ নম্বর জার্সি টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন৷ শেষবার জিতেছিলেন আরেক এল এম টেন৷ আর্জেন্তাইন মেসি তথা এল এম টেন৷ এবার জিতলেন ক্রোয়েশিয়ান লুকা মদ্রিচ টেন৷
রাশিয়ার মঞ্চে গোল্ডেন বুট জিতলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেন৷ ২০১৮ বিশ্বকাপে তাঁর গোলের সংখ্যা ৬৷ সেমিফাইনাল বা তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে অবশ্য গোল পাননি হ্যারি৷ বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থানে শেষ করে তাঁর দল৷ চার গোল করে গোল্ডেন বুটের দৌড় ছিলেন বেলজিয়ামের লুকাকু৷ ফাইনালে একটি গোল করেন ফ্রান্সের এমবাপে৷ চার গোল করে এমবাপেও গোল্ডেন বলের দৌড় ঢুকে পড়েছিলেন৷ শেষটায় অবশ্য সোনালী বুটে দেশে নিয়ে যাচ্ছেন হ্যারি কেন৷
টুর্নামেন্টে সেরা উঠতি ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে৷ টুর্নামেন্টে চারটি গোল করেছেন এই টিনএজ৷ ফাইনালের মঞ্চেও ফ্রান্সের হয়ে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে গোল পেয়েছেন এমবাপে৷
অন্যদিকে গোল্ডেন গ্লাভস পেলেন বেলজিয়ামের গোলকিপার কুর্তোয়া৷ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর হাতের কাছে ম্যাচ হেরে বসেছিল সেলেকাওরা৷ ম্যাচের অতিরিক্ত সয়মে নেইমারের শট পোস্টের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন কুর্তোয়া৷ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হলেন বেলজিয়াম কিপার৷
বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন পাবে কত টাকা?
কী ভাবছেন, লড়াইটা শুধু ৬ কেজি ওজনের সোনার ট্রফিটার জন্য? ট্রফি তো আছেই, সঙ্গে ‘কিঞ্চিৎ’ অর্থযোগও থাকছে। আজ হুগো লরিস বা লুকা মদরিচ—কোনো একজনের হাতে সোনালি ট্রফির সঙ্গে ৩৮ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৩১৮ কোটি টাকা) একটি চেকও উঠবে। রানার্সআপ পাবে ২৮ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা)। ২০০৬ বিশ্বকাপে জয়ী দল পেয়েছিল ২০ মিলিয়ন ডলার, রানার্সআপ ১৮ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতে ফেরেনি বাকি ৩০ দলের কোনোটিই। তৃতীয় হওয়া হ্যাজার্ড-লুকাকুদের বেলজিয়াম পাবে ২৪ মিলিয়ন ডলার। চতুর্থ দল ইংল্যান্ডের ভান্ডারে যাবে ২২ মিলিয়ন ডলার। কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট প্রতিটি দলের জন্যই বরাদ্দ ১৬ মিলিয়ন ডলার, দ্বিতীয় পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া দলগুলো পাবে এর অর্ধেক। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়া প্রতিটি দলের জন্যই থাকছে ৮ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানি বিশ্বকাপের।