মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বেলাল চৌধুরী’র একগুচ্ছ কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮
519 ভিউ
বেলাল চৌধুরী’র একগুচ্ছ কবিতা

কক্সবাংলা ডটকম(২৬ এপ্রিল) ::

 যে ধ্বনি চৈত্রে, শিমুলে

দিন আসে দিন যায় দ্রুত

কোলাহল আর হাওয়ার রটনায়

গোধূলিতে গোলাপি মেঘের গুঁড়ো গুঁড়ো

ফোঁটায় সঞ্চিত সে শুধু সুন্দর;

শিমুলের পাঁজর ফাটা বিষম লাল

এই বারুদগন্ধী ফেব্রুয়ারি কিম্বা চৈত্রে

ওড়ে ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, প্যাম্ফলেট, স্লোগান…

ওড়ে এই বাংলার তুমুল গাঢ় সবুজ সমাচার

ভাষারিক্ত মৌন মিছিলে একাকার বুড়িগঙ্গা

দিন যায় দিন আসে ফের- আমরা ভাগাভাগি করি সুন্দরকে

অন্ধকার বীজতলায় বোনা দুঃখকেও।

মুক্তাজননী আকাশে ফোটা

স্বর্গের আলোর ডিম ভেঙে

আমরা তার সঙ্গে মিশিয়ে দিই

এই বাংলার শোণিত প্রবাহ।

মানুষের বিষয় হৃদয়

পৃথিবীর গোধূলিতে যেখানে আজও হরিণেরা

ভাঙে পিপাসিত হৃদয়ের আমলকী

তার তীরে নদী এক নদীর মতন অবিরাম

স্পন্দিত জীবন-ছন্দে কল কল্লোলিনী…

আর আমরা তখন তাঁর সেই উষ্ণ সংবেদী

দাবদগ্ধ নীল ঠোঁট থেকে

প্রবাহিত শব্দাবলির সুমুখে

ন্যস্ত করি আমাদের যত বিহ্বলতা

বোধ বোধি প্রেম প্রণয় পিপাসা;

আর শিশুর মতোন পরিষ্কার টলটলে চোখ মেলে

তিনি তার মর্মভেদী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকেন

আমাদের এই রণরক্ত পৃথিবীর দিকে অনিমেষ

আর আমাদের হৃদয়ে তখন অঘ্রাণ হেমন্তের

যত বিপণ্ন বিষাদ।

আসমুদ্রহিমাচল

খর রৌদ্র আর হাওয়ার তোড়ে শুষে নেয় আমার সমস্ত প্রতিরোধ

ভেতরে ভেতরে টের পাই ডানার কম্পন, জীবনের অবারিত সম্ভাবনা,

চঞ্চল চিত্তের যাবতীয় দ্রোহ, রোষ কষায়িত মায়ারজ্জু…

ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কোণে কোণে আত্মভোলা এক আত্মবিস্তৃতি,

হাওয়ার গহ্বরে গড়ে তুলতে চাই কীর্তিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ,

স্পর্শ-উষ্ণ প্রস্তর ফলক– আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে;

কখনও নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, কখনও স্বপ্নাবিষ্ট ঔচিত্যবোধের

গণ্ডদেশে শালা শুয়ারের বাচ্চা বলে ক্যাত করে সজোর চপেটাঘাতে

অবগাহন করতে চাই গঙ্গা পদ্মার একই ঘোলা জল প্রবাহে

সোদরপ্রতিম পড়শি প্রতিবোধনে…

বাল্যকালের গন্ধমাখা নীল জামাটি

চোখের সামনে আজও কেমন স্পষ্ট অমলিন

বাল্যকালের গন্ধমাখা আমার নীল জামাটি,

দুরন্তপনার হাজার চিহ্ন আঁকা নীল পতাকা,

রোদে পোড়া ঘামে ভেজা হাওয়ায় ওড়া-

যেন অস্থির এক প্রজাপতির রঙিন প্রগলভতা;-

নীল পাহাড়ের নিরুদ্দেশে মেঘের রেশম-স্বাধীনতা!

অভিমানী এক কিশোরের চোখের জলে ভেজা

অই নীল জামাটি আমার বাল্যকালের লাল দোপাটি

দাঁত-কপাটি হাবুডুবু শালুক খোঁজা, বুকের দুরুদুরু,

পায়ের নিচে পক্ষীরাজের খুরধ্বনি

চোখের সামনে তেপান্তরের সম্মোহন;

নীল জামাটির কেশর ধরে আস্তিনে চোখ মুছতে মুছতে

বনবাদাড়ে যখন-তখন ছুটাছুটি উধাও দুপুর তুমুল দাপদাপি-

সেই যে কবে সেই যে কবে গেছে নির্বাসনে

শরীর থেকে গেছে ঝরে অনেক লোনা, ঝাপসা স্মৃতি;

চোখের সামনে আজও কেমন স্পষ্ট অমলিন

বাল্যকালের গন্ধমাখা সুদূর আমার ঐ নীল জামাটি।

জলবিষুবের পূর্ণিমা

মেঘ ভেসে যায় মেঘের ভেতর

ঘর ভেঙে যায় ঘরের ভেতর;-

চাইছে কেউবা মেঘের ভেতর ঘরের বসত

কেউবা ঘরের ভেতর মেঘকে আনে টেনে;

মেঘের সীমা ঘরের সীমা

দুটোই সমান সুদূর এবং নিরুদ্দেশ,

মেঘের যেমন নেই ঠিকানা

ঘরেরও ঠিক নেই সীমানা;

ছেঁড়া খোঁড়া মেঘে শুধু তছনছ

ভাঙাচোরা ঘরে শুধু নয় ছয়

ঘরপোড়া গরু যে কেবলি

ডরায় সিঁদুরে মেঘে।

আত্মহত্যার বিবেচনা

‘স্বচ্ছ বারি, শীতল জল-নিচে নক্ষত্র নাচিতেছে…’

একটি স্থির আনন ভেঙে হাজার লহরী ভেসে যায়

কম্পমান জলের শিহরে

একটি লহরী ভেঙে হাজার আননের অস্ফুট গুঞ্জন

ছোট ছোট তরঙ্গশীর্ষে নাচে অসংখ্য হীরের স্ফটিক কুঁচি-

মাছের রুপালি আঁশ, জলের গভীরে নিবিড় বুদ্বুদ।

একটি কথার শরীর ফেটে দিগ্বিদিকে শব্দের দাবানল

একটি ফলের খণ্ডিত পেশিতে গাঁথা আমূল ছুরির ডগা

একটি নক্ষত্র ঘিরে হাজার, কণ্ঠের বিদীর্ণ কোরাস

একটি মানুষের হৃদয় জুড়ে জ্বলন্ত একটি তমালকালো

অনন্ত অঙ্গারে উড়ন্ত শিমুলের তুমুল রক্তোচ্ছ্বাস

একটি শিখার শিকরে মোহ্যমান একটি

শারীরী প্রতিমা-

আজ রণরক্ত দ্রাঘিমায় হানছে চমক

অনবরত, স্বচ্ছ বারি, শীতল জল… …

প্রথম বৃষ্টির আঘাত

ঘরময় ঘোরে আরশোলা, দিগ্বলয়ে সূর্য ডুবুডুবু,

সখের প্রাণ গড়ের মাঠ হৃদয়ে কৃকলাস;

পরকীয়া কেচ্ছার খই ফোটে তিন যুবকের মুখে-

কবেকার ন্যতানো কাঠে অনর্গল ধোঁয়া।

অপরাহ্নের আরশোলাময় স্মৃতির অন্তর্দাহ

গভীর রাতের শয্যা খুঁড়ে তোলে তীব্র জীবাণুনাশক;

তমোনাশী বিলোল জিহ্বায় ঝরে ফোঁটা ফোঁটা আঠা

শটিত গাত্রাবরণ খসে উড়ে যায় ফাঁপা ফোলা

মেঘে মেঘে, ঝরে অবিরল প্রেম ও অপ্রেম

যার মাঝে করাতের কঠিন বাঁকা দাঁতের কামড়

বসে যায় আগ্রাসী সৎ-কামনার চিহ্নের মতো

-লাল মাটির ওপর প্রথম বৃষ্টির আঘাত।

লালকেল্লায় ভোর

বাইরে তাকিয়ে দেখি মখমল সবুজ ঘাসের গালিচায়

এলিয়ে রয়েছে পৃথিবীর কোমল নরম রূপ:

আর পেঁজাতুলোর মতন সাদা মুক্তোদানা

বিন্দু বিন্দু শিশিরের ফোঁটা যেন মানুষের স্বেদ;

ভোর ভাঙছে ক্রমশ লালকেল্লার মাথায় ইটরঙা

যেন একটা খোসা ছড়ানো হিমশীতল কমলালেবু

রক্তিমাভ রসে টইটুম্বুর শিরা উপশিরার

-প্রায় লাফিয়ে ছুটতে শুরু করি নীরবে দ্রুত চরণে

জেগে ওঠা প্রথম দিনের সেই আদিম মানব আর

চলে যাওয়া মানুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে

অন্তহীন বিষাদ আর দুঃখ মাড়িয়ে মাড়িয়ে,

-লালকেল্লার ভোরটি কিন্তু সেগুলির একটাও নয়।

বাল্যশিক্ষায় ভালোবাসা

‘ভ’য়ে আকার ভা

‘ল’য়ে ওকার লো

‘ব’ এবং

‘স’য়ে আকার

যথাক্রমে বা

এবং সা

দিয়ে তৈরি শেকলে

যেসব ‘আলো’র মতো

বাক, শব্দ, শক্তি তেজে ভরা

রূপ, সুধা, ছন্দ দ্বন্দ্ব আছে

তেমনই

ভাত, ভাষা, ভান, ভাগা

লোক, লোচ্চা, লোহা, লোহু

বাক, বাক্য, বাগ, বাঘ, বাংলা

সাং, সাকি, সাক্ষী, সাঙ্গ, সাজ

সাত সাড় সাধ সাধ্য সাদি

সান্ত্রী সাপ সাফ সান্য সায়া

সারি সাল্লু সাস্না দিয়ে হয় তবে সাঙ্গ

আমাদের শূন্য ঘরের শূন্যতায়

কুয়াশার মতো নৈঃশব্দ্য এসে

বাঁধে নিবিড় কঠিন বন্ধনে

আমাদের শূন্য ঘরের শূন্যতায়

এখন শুধু প্রজাপতি পাখনার অস্থির শিহরণ!

পারস্পারিক স্পর্শের নীরবতা হয়ে ওঠে একটি শরীরী ব্যঞ্জনা,

তপ্ত ওষ্ঠ-ব্রেল পদ্ধতি বাজে স্নায়ুতন্ত্রীতে,

বেপথুমানা রাত্রি এখন নীল নভোতলে

চোখজোড়া আরো উসকে তোলে অন্ধকারকে।

দীর্ঘ পথযাত্রা শেষে পায়ের পাতায় ফোস্কা

অশ্রুবিন্দু কি শীতল করতে পারে জ্বলন্ত ত্বককে?

স্বপ্ন বিজড়িত প্রহর

অদ্ভুত স্বপ্নের মধ্যে বন্দী হয়ে আছি আমি;

ধরা যাক এই প্রাচীরের নেই কোন ঘনত্ব ও তৌল-

শুধু শূন্যতাই এর একমাত্র গভীরতা,

প্রাচীন প্রাচীরগুলো হয় যেমন প্রহর

আর প্রহরগুলি তেমনি হয়ে ওঠে বিষম অবাধ্য

আর এই প্রহরগুলির মধ্যে সময়,

কত যে সন্তাপ, শোক আর দুঃখ জমিয়ে তোলে,

তা আর বলার মতন নয় বোধ হয়।


এই কবিতাগুলো বেলাল চৌধুরীর “যে ধ্বনি চৈত্রে, শিমুলে” কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রকাশ করা হলো। বইটির প্রকাশকাল : একুশে বইমেলা ২০০৮।

519 ভিউ

Posted ৮:১১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com