কক্সবাংলা ডটকম(২৭ জুলাই) :: ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য ২৬টি সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে সরকারের আর্থিক বিভাগ। যেখানে ঋণখেলাপি ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হবে।
তাছাড়া ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি খেলাপিঋণ-সংক্রান্ত কেসগুলো তদারকির জন্য প্রতিটি ব্যাংকে একটি করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি তদারকি সেল গঠন করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়’ শীর্ষক কর্মশালায় উঠে আসা সুপারিশগুলো থেকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরে ২৬ সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে সরকারের অর্থ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, ১০০ কোটি টাকা বা তার বেশি খেলাপিঋণ কেসগুলো তদারকির জন্য প্রতিটি ব্যাংকে একটি করে তদারকি সেল গঠন করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেও একটি তদারকি সেল গঠন করে ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের চাকরিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সূচকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতি তিন মাস পর পর ওই সূচকগুলো বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে
হবে। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সফলতা-ব্যর্থতার বিষয়টি তাদের এসিআরে প্রতিফলনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি ও সিইওদের বিভিন্ন সূচকে লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে তা মূল্যায়ন এবং সে মোতাবেক বোনাস, ইনসেনটিভ দেওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে। খেলাপিঋণ আদায়ে প্রণোদনা এবং ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়ন/সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণে জন্য সুপারিশ উঠে আসে।
উচ্চ আদালতে ব্যাংকের ঋণ-সংশ্লিষ্ট রিট মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন করার কথা বলা হয়। ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচ্য প্রার্থীদের শিক্ষা ও পেশাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয়ে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট করার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের আলোকে একটি গাইডলাইন প্রণয়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারি খাতে শেয়ার ছেড়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার বিষয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। ঋণ প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদনে বিদ্যমান পদ্ধতি রিভিউ করে পুনরায় জারি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন ধাপে ঋণপ্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
জমি বা ভূ-সম্পত্তিকে জামানত হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য জালিয়াতি প্রতিরোধে জামানত গ্রহণের বিষয়ে নীতিমালাসহ একটি কেন্দ্রীয় তথ্যকোষ গঠনের কথা হয়েছে। এলটিআর (লোন এগেইন ট্রাস্ট রিসিপ্ট) বা বিল পারচেজ ধরনের নন-ফান্ডেড ঋণসুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনাসহ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা জারি করতে পারে বলে সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারের অর্থ বিভাগের সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, জামানত হিসেবে ব্যবহার্য্য জমির মূল্যায়ন নির্ধারণের ক্ষেত্রে সার্ভেয়ার/ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির যোগ্যতা নির্ধারণসহ তালিকাভুক্তকরণ ইত্যাদি বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক অনুসরণীয় নীতিমালা প্রণয়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ঋণ শৃঙ্খলা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোগুলো জোরদার করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সনদধারী জনবল পদায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে নীতিমালা জারি ও তা অনুসরণসহ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সুপারিশে আরো বলা হয়, ঋণপ্রস্তাব মূল্যায়নের সময়ই পর্যাপ্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন বিবেচনায় এ-সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। ঋণগ্রহীতাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার) বা ইলেকট্রনিক ব্যাংক এ/সি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
”
Posted ২:০৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ জুলাই ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta