কক্সবাংলা ডটকম(৪ সেপ্টেম্বর) :: আয়করে বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বিপরীতে আয়ের পুরো অর্থের উপর আয়কর হিসাব করেনি। এর ফলে সরকার আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটির কাছ থেকে একশ’ কোটি টাকার আয়কর পায়নি।
এর মধ্যে ২০১৪ সালে ১৭ কোটি টাকা ও ২০১৫ সালে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি সরকারি বিনিয়োগ খাতে অর্জিত নগদ আয়ের উপর আয়কর হিসাব করলেও বকেয়া আয়কে হিসাবভুক্ত করেনি।
এক্ষেত্রে বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশের সংশ্লিষ্ট ধারার লঙ্ঘন হয়েছে এবং এর ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ সময়মত পায়নি বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইস্যুটি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ ব্র্যাক ব্যাংককে আয়কর আইনের বিধি-বিধানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সতর্ক করে। অন্যান্য ব্যাংক সরকারি বিনিয়োগ খাতে পুরো আয়কে অন্তর্ভুক্ত করে (নগদ ও বকেয়া আয়) আয়কর হিসাব করলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল ব্র্যাক ব্যাংক।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে এনবিআরের কাছ থেকে আইনের বিধি-বিধানের আলোকে স্পষ্টীকরণ ও দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আহমদ আলী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ব্র্যাক ব্যাংকের আয়কর সংক্রান্ত বিস্তারিত অনিয়ম তুলে ধরা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল কর্তৃক ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উপর ২০১৬ সালের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ১শ’ কোটি টাকা কম আয়কর প্রদান সম্পর্কিত অনিয়মের বিষয়টি উত্থাপিত হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ আহমদ আলী বলেন, আয়কর অধ্যাদেশের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী এটি ব্যাংকের অনিময়। আইনে বলা আছে, অ্যাক্রুয়াল (বকেয়া) ফলো করতে হবে। কিন্তু ব্যাংকটি তা করেনি।
এ প্রক্রিয়ায় কেউ তো সরকারের পাওনা টাকা দুই কিংবা তিন বছর নিজের কাছে ধরে রাখতে পারে না। ব্র্যাক ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলো এভাবে আয়কর হিসাব করেনি। যদিও ব্র্যাক ব্যাংক বলছে, এটি (আয়কর পরিগণনা) ঠিক আছে। এখন আমরা এনবিআরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ সম্পর্কিত চিঠি এখনো তাদের হাতে আসেনি। চিঠি পাওয়ার পর তারা আইনানুগ ব্যাখ্যা দেবেন। তবে তিনি বলেন, আয়কর সম্পর্কিত বিষয়ে পরিদর্শন কিংবা দাবিনামা জারির এখতিয়ার কেবল এনবিআরের।
আয়কর অধ্যাদেশের ৩৫ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি বিনিয়োগ খাতে অর্জিত পুরো অর্থই প্রদেয় আয়কর হিসাবায়নে বিবেচ্য হবে। অর্থাত্ কোন ব্যাংক ট্রেজারি বিল, বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ হতে সংশ্লিষ্ট বছরে অর্জিত আয় বাবদ প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান হিসাবে যে স্থিতি প্রদর্শিত হয়, প্রদেয় আয়কর হিসাবায়নের সময় উক্ত স্থিতিই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক সিকিউরিটিজ হতে অর্জিত আয়ের মধ্যে কেবল আদায়কৃত আয় সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরে আয় হিসেবে বিবেচনা করেছে। বকেয়ার চাইতে নগদ আয় অনেক কম হওয়ায় ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে পরিদর্শন প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্যও ব্যাংকটিকে সতর্ক করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
Posted ২:০৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta