আগামী মাসে ওয়াশিংটনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে ‘২+২’ সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পেন্টাগনের একটি বিশেষজ্ঞ দল এখন নয়া দিল্লি সফর করছে। একটি ‘ভিত্তিমূলক’ সামরিক যোগাযোগ চুক্তির ভাষা নিয়ে সোমবার থেকে ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে দলটি।
সরকারের সূত্রগুলো এই পত্রিকাকে জানায়, আইনজ্ঞ, নীতি ও কারিগরি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ দলটি ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত আলোচনা চালাবে। আলোচনায় মর্কিন কর্মকর্তারা কমিউনিকেশন কমপেটিবিলিটি এন্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (কমকাসা) ’র খসড়া নিয়ে ভারতের পর্যবেক্ষণগুলো সমাধানের চেষ্টা চালাবেন।
কমকাসা নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরুর মধ্য দিয়ে এই চুক্তির ব্যাপারে ভারতের অবস্থানে অচলাবস্থা নিরসনের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। ২০১৬ সালে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সামরিক লজিস্টিক চুক্তি সই করে। এরপর নয়া দিল্লি আরো দুটি ‘ভিত্তিমূলক’ চুক্তি: কমকাসা ও বেসিক এক্সচেঞ্জ এন্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট ফর জিও-স্পাশিয়াল কোঅপারেশন (বিইসিএ) স্বাক্ষরের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিলো না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে যোগাযোগ নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ সহজতর করার জন্য একটি আইনি কাঠামো তৈরি করবে কমকাসা। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় বাহিনী এবং অন্যান্য যেসব বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে সেগুলোর মধ্যে ‘ইন্টারঅপারেবিলিটি’ তৈরি হবে। এই চুক্তির সাবেক নাম ছিলো ‘কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন অন সিকিউরিটি মেমরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট’।
তবে, ‘২+২’ সংলাপের উদ্বোধনী বৈঠকে কমকাসা’র ভাষা অনুমোদন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে না বলে কর্মকর্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে উভয় পক্ষের আলোচনার পর যে যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হবে তাতে নিকট ভবিষ্যতে কমকাসা সইয়ের ইচ্ছা ব্যক্ত করা হতে পারে।
আমেরিকান কর্মকর্তারা বলছেন যে, কমকাসা হলো সামরিক প্লাটফর্মে স্থাপনের উদ্দেশ্যে ভারতের কাছে হাই-ইন্ড সিকিউরড কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট বিক্রি সহজতর করা। এর ফলে সরঞ্জামগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হবে ক্রেতা রাষ্ট্র। তাদের যুক্তি হলো ভারতীয় সেনাবাহিনী বর্তমানে যোগাযোগের জন্য কম নিরাপদ এবং বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য সরঞ্জাম যেমন: সি-১৩০জে ও পি৮১ মেরিটাইম সারভেইল্যান্স এয়ারক্রাফট ব্যবহার করে। কিন্তু ওয়াশিংটনের কাছ থেকে অস্ত্রসজ্জিত সি গার্ডিয়ান ড্রোন কিনতে চাইলে ভারতকে বাধ্যতামূলকভাবে কমকাসা চুক্তি সই করতে হবে।
বিষয়টি মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতীয় পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কমকাসা চুক্তি স্বাক্ষরে অনীহা দেখিয়ে আসছেন। তাদের আশংকা এই চুক্তি হলে ভারতের সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশের পথ পেয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া বর্তমানে ভারত যে বিপুল পরিমাণে রুশ-অরিজিন ও স্থানীয়ভাবে তৈরি সামরিক প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে সেগুলো কমকাসার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৬ সালে ভারতকে ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অংশীদারের’ মর্যাদা দেয়। এরপরও বাস্তবিক পক্ষে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোন সামরিক প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়নি নয়া দিল্লি। আগামী মাসে ‘২+২’ সংলাপে যোগ দিতে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ওয়াশিংটন সফরে গেলে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো গুরুত্ব পাবে।