কক্সবাংলা ডটকম(৮ মার্চ) :: কিছু দিন আগে সেলেশসে ভারতের নৌঘাঁটি নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছিল বলে খবর মিলেছে৷ বিক্ষোভ নাকি সেখানকার সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে৷ নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেলেশসে গিয়ে সেখানে নৌঘাঁটি গ়ড়ার ব্যাপারে কথাবার্তা বলে এসেছিলেন৷
এই প্রভাব বলয় কাটাতে যে সামর্থ্য দরকার তার জন্য ভারতকে হয় কোনও মহাশক্তিধর দেশের শরণাপন্ন হতে হবে৷ না হলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সঙ্গে জোট বাঁধতে হবে৷ বিশেষ করে যাদের চীনের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার সাহস আছে৷
এই ব্যাপারে ভারত যাদের সাহায্য সব চাইতে আগে পেয়েছে তারা হল ভিয়েতনাম৷ভারত মহাসাগরে চীনের নৌশক্তির গতিবিধি বাড়ার কারণেই পালটা ব্যূহ রচনার জন্য ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ভারত মহাসাগর ও সংলগ্ন সাগর ও উপসাগরগুলিতে চীনকে ঠেকাতে নতুন করে শক্তিবৃদ্ধি করতে হবে৷ কিন্তু চীনের পক্ষে যেটা সম্ভব, ভারতের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়৷
একদলীয় শাসন এবং প্রভূত সামরিক শক্তিতে বলীয়ান চীন তার বিপুল অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে মূলত সেদেশের সাধারণ মানুষকে ভূতের বেগার খাটিয়ে৷ যেটা ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে কখনই সম্ভব নয়৷ বেজিংয়ের যে পরিমাণ ইউয়ান উদ্বৃত্ত হয় সেই বিপুল অর্থ তারা সেই ঠান্ডা যুদ্ধের আমল থেকেই ভারত সংলগ্ন রাষ্ট্রগুলিতে ছড়াচ্ছে এবং তাদের প্রভাব বলয় এখন আফ্রিকার উপকূলে পর্যন্ত পৌঁছেছে৷
কিন্তু শুধু ভিয়েতনাম পাশে থাকলে তো হবে না৷ ভারত লাগোয়া সমু্দ্রে চীনের দাপট কমাতে হলে আশপাশের দেশগুলির সঙ্গে রণনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধুত্ব আগের চাইতে অনেক বেশি মজবুত করা দরকার৷ তাতে সহায় হতে পারে ভারত মহাসাগরের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি৷ আর সেই দেশগুলিতেই এখন ভারত-বিরোধী জিগির এমনভাবে তোলা হচ্ছে যে, সেইসব রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতায় যাঁরা রয়েছেন তাঁরাই ভয় পেয়ে যাচ্ছেন৷ চীনের চাপ সহ্য করতে না পেরে তাঁরা ভারতকেই বরং তফাতে থাকতে বলছেন৷ না হলে চীনের পোষা এজেন্ট প্রোভোকেচাররা দেশে দেশে আগুন জ্বালিয়ে দেবে৷ হয়তো কোথাও তারা আইএসআইএসের লাইনে তাণ্ডব করবে৷ কোথাও আবার, সেশেলসে যেমন, ঠিক সেই কায়দায় ভারত-বিরোধী আন্দোলনে নামবে৷
বহু দিন ধরেই আফ্রিকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের কাজটা চীন নিপুণভাবে চালিয়ে যাচ্ছে৷ কঙ্গো কিংবা অ্যাঙ্গোলায় যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তখন থেকেই৷ অ্যাঙ্গোলায় রাশিয়ার মদতপুষ্ট নেতা অগাস্টিনহো নেটো-র বিরুদ্ধে যে সাভিম্বির উত্থান ঘটেছিল তাকে যুগপৎ পরিপুষ্ট করেছিল চীন এবং তদান্তীন্তন মার্কিন প্রশাসন৷ সাভিম্বি ছিল মাওবাদী৷
পরবর্তীকালেও আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য চীনের সঙ্গে বিভিন্ন মহাশক্তির গোপনে যুদ্ধ হয়েছিল৷ তবে সেই যুদ্ধে চীন যার সঙ্গে কখনই এঁটে উঠতে পারেনি সেই দেশটির নাম হল ইজরায়েল৷ তা সত্ত্বেও একবিংশ শতক থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তার বিনিময়ে বিভিন্ন আফ্রিকান রাষ্ট্রের কাছ থেকে বশ্যতা আদায় করে আধিপত্যবাদী লাল চীন৷ অনেকটা অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির কায়দায়৷ কারণ, আফ্রিকার একাধিক দেশে তখন প্রবল অর্থনৈতিক সংকট চলছিল৷
এই সহায়তার বিনিময়ে মূলত যে দেশটির একাধিক বন্দর চীনের নৌশক্তি হাতে পেয়েছে সেই দেশটির নাম সোমালিয়া৷ সোমালিয়া এমনিতেই গৃহযুদ্ধে দীর্ণ৷ এই অবস্থায় তাদের বন্দর দখল করা চীনের পক্ষে কষ্টকর হয়নি৷ হর্ন অব আফ্রিকার বন্দর চীনের নৌবাহিনী ভারতকে ঘিরে ফেলার লক্ষ্যেই গ্রাস করেছে৷ কারণ, ভারতীয় উপমহাদেশের উপর নজর রাখতে হলে একদিকে আফ্রিকার পূর্ব উপকূল অন্যদিকে ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র সহ বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম উপকূল চীনের খুবই দরকার৷ আর এটাই পার্ল অব স্ট্রিংগস৷
এই মুক্তোর ছড়া কাটার জন্য ভারত মহাসাগরের বিশাল তল্লাট জুড়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে রণনৈতিক জোট ভারতের একান্ত দরকার৷ কিন্তু সেইসব দেশে এজেন্ট প্রোভোকেচারদের দিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে এখন এমন একটা অবস্থা চীনের রণনীতি বিশারদরা সৃষ্টি করছেন যে, সেইসব দেশ ভারতের পুরানো বন্ধুত্বের কথাই ভুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে৷ যেমন, মালদ্বীপ ভুলেই গেল : একদিন তাদের রাষ্ট্রনেতাকে জলদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিল ভারতের নৌবাহিনী৷ সম্প্রতি যখন সেখানকার রাষ্ট্রীয় সংকট মোচনে ভারতের সাহায্য চাওয়া হল তখন চীনের হুমকিতে শেষ পর্যন্ত দিল্লিকেই দূরে থাকতে বলল মালে৷
মালের পর এবার একই রকম অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্র সেশেলসে৷ কারণ, ভারতের সঙ্গে সেশেলসের রণনৈতিক বন্ধুত্ব পাকা হয়েছে৷ এটা চীন মেনে নিতে পারছে না৷ ভারতের প্রতিবেশী বাদবাকি প্রায় সব রাষ্ট্রকেই বেজিং ছলে বলে কৌশলে রণনৈতিক বলয়ে বেঁধে ফেলেছে৷ একমাত্র ভিয়েতনামকেই তারা সমঝে চলছে৷ কারণ তারা জানে সুসময় কিংবা দুঃসময়, সর্বদাই ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব অটুট৷ আর, চীনের হুমকিতে আর যে-ই ভয় পাক, ভিয়েতনাম অন্তত ঘাবড়ানোর পাত্র নয়৷ ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম আক্রমণ করে পালটা মার খাওয়ার কথা চীন এখনও ভোলেনি৷
চীনে এখন জি জিনপিং ডকট্রিনের যুগ শুরু হয়েছে৷ যে ডকট্রিনই সেদেশে আসুক না কেন, তার জন্য কি তারা ভারত মহাসাগরে নৌ-তৎপরতা কমাবে? ভারতে কারও কারও এখনও এমন ধারণা রয়েছে যে, ভোটে এদেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন হলে বোধহয় চীনের সাবমেরিনগুলি উলটো দিকে ঘুরে সোজা চীনা উপকূলের পোতাশ্রয়ে গিয়ে চুপ করে বসে থাকবে৷ যারা এখনও এসব ধুস্তুরি মায়ায় ভোগে তারা যে মূর্খের স্বর্গে বাস করে, সেটা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷
Posted ৩:১২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta