কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জুলাই) :: রাশিয়ার সামরিক বিমান শিল্প আবারও ভারতীয় বিমান বাহিনীকে সুখোই সু-৫৭ জঙ্গি বিমান যৌথভাবে তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। এটা রাশিয়ার প্রথম নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ জঙ্গি বিমান।
রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর মিলিটারি অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশানের ডেপুটি ডিরেক্টর ভ্লাদিমির ড্রোজজভ ৯ জুলাই বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি যে আমরা এই প্রকল্পটি আবারও শুরু করতে পারি, রাশিয়া এ ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে প্রস্তুত এবং আমাদের ভারতীয় অংশীদারদেরকে আমরা এর প্রস্তাব দিচ্ছি”।
আর মস্কো ব্যাপক মাত্রায় সু-৫৭ বিমানের গণ-উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভারতীয় বিমান বাহিনী এখন রাশিয়ার পঞ্চম প্রজন্মের এই জঙ্গি বিমান কেনার ব্যাপারে সতর্ক ইঙ্গিত দিয়েছে।
রাশিয়ান মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাতকারে ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রধান বিরেন্দর সিং ধানোয়া সম্প্রতি বলেছেন: “আপনি যদি পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গি বিমানের কথা বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে এটা নিয়ে এখনও আমরা পর্যালোচনা করিনি। আপনাদের সশস্ত্র বাহিনীতে যখন এটা যুক্ত হয়, কেবল তখনই আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। আমরা এটা পার্ফর্মেন্স দেখার পর এবং এটা আমাদের কাছে রিভিউয়ের জন্য আসার পরেই কেবল এটা কেনার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো”।
রাশিয়া সু-৫৭ বিমান বিক্রির জন্য ভারতের কাছে বেশ কয়েক দফা প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে নয়াদিল্লী ২০১৮ সালে রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে সু-৫৭ বিমান তৈরির প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসে। উভয়ে মিলে যে বিমান তৈরির কথা ছিল, সেটা এফজিএফএ নামে পরিচিত। ধানোয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য যে ভারতীয় বিমান বাহিনী তাদের সম্ভাব্য আমদানির তালিকা থেকে সু-৫৭ বিমানকে এখনও সরিয়ে রাখেনি।
এফজিএফএ প্রকল্প বিলুপ্তির পেছনে প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা বলা হলেও এর আসল কারণ মূলত রাজনৈতিক। নয়াদিল্লী মূলত তাদের মেক ইন ইন্ডিয়া পদক্ষেপ এগিয়ে নেয়ার জন্যই এফজিএফএ কর্মসূচির সাথে যুক্ত হয়েছিল। বিমানের ডিজাইন ব্লুপ্রিন্ট এবং উৎপাদন বিশেষজ্ঞ বিষয়ক সমস্ত প্রযুক্তি হস্তান্তর লক্ষ্য ছিল তাদের এবং একই সাথে উন্মুক্ত লাইসেন্সের অধিকারও চেয়েছিল তারা। ক্রেমলিন ভারতকে এই ধরনের সুবিধা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না বলেই কর্মসূচিটি বাতিল হয়ে যায়।
এফজিএফএ কর্মসূচিটি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টি এখন আর কারো বিবেচনায় নেই, কিন্তু সেটা রাশিয়ার পক্ষে কাজ করতে পারে। রাশিয়া যদি ভারতের কাছে সু-৫৭ রফতানি করতে পারে একটা পণ্য হিসেবে, যেখানে যৌথভাবে উৎপাদনের কোন বিষয় থাকছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে রাশিয়াকে আর সেই সব নিয়ম নীতি মানতে হবে না, যেগুলোর কারণে এফজিএফএ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বিমান বাহিনী প্রধানের বক্তব্য থেকে এটা বোঝা যাবে না যে আইএএফ সু-৫৭ বিমান যাচাই বাছাই ও এর পার্ফর্মেন্স পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সেটা কিনবেই, বরং তার বক্তব্য থেকে যেটা বোঝা গেছে, যেটা হলো নয়াদিল্লী সু-৫৭ বিমানকে ভিন্ন আমদানির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছে।
নয়াদিল্লী ও মস্কোর মধ্যে সদিচ্ছার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকার একটা বহিপ্রকাশ এটা, সেটার সূচনা হয়েছে ২০১৮ সালে ৫.৪৩ বিলিয়ন ডলারের পাঁচটি এস-৪০০ সার্ফেস-টু-এয়ার উইপন্স সিস্টেম এব রাশিয়ান অ্যাডমিরাল গ্রিগোরোভিচ-শ্রেণীর চারটি ফ্রিগেট ক্রয় চুক্তির মাধ্যমে। সেই সাথে রয়েছে উচ্চাকাঙ্ক্ষী কালাশনিকভের নতুন একে-২০৩ রাইফেল যৌথভাবে উৎপাদনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালে ভারত যৌথভাবে সু-৫৭ তৈরির প্রকল্প থেকে সরে আসে। ভারতে এটা প্রসপেক্টিভ মাল্টি-রোল ফাইটার (পিএমএফ) হিসেবে পরিচিত। এক দশকের পুরনো এই যৌথ প্রকল্পটি শুরু করেছিল ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ব হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (এইচএএল) এবং রাশিয়ার সুখোই এবং সু-৫৭ এর আরও উন্নত সংস্করণ তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল তারা। রাশিয়া বিমানের ফ্লাইট কম্পিউটারে ও মিশনের সোর্স কোড দিতে রাজি না হওয়ায় ভারত এখান থেকে সরে আসে। সোর্সকোড ছাড়া, ভবিষ্যতে রাশিয়ার সহায়তা না নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনী এটার আধুনিকায়ন করতে পারবে না।
ভারতীয় বিমান বাহিনী একই সাথে বিমানের পার্ফর্মেন্স নিয়েও বারবার অভিযোগ করেছে, বিশেষ করে বিমানের ইঞ্জিন নিয়ে। বিমানের নিচু এলাকায় পর্যবেক্ষণের সক্ষমতার ঘাটতির বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বিমান বাহিনী।
বিভিন্ন বিষয়ে নয়াদিল্লী ও মস্কোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে এই বিমান তৈরির বিষয়টি বিলম্বিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাজ ও মূল্য ভাগাভাগি, বিমানের প্রযুক্তি, কতটা বিমানের অর্ডার দেয়া হবে – এই ধরনের মৌলিক বিষয়। প্রথম পিএকে এফএ টি-৫০ প্রটোটাইপ বিমানের মূল্যায়নের পর, বিমান বাহিনী এতে ৪০টির বেশি পরিবর্তন আনার কথা বলেছিল। বিমানের ইঞ্জিন, স্টেলথ সিস্টমে, অস্ত্র বহনের সক্ষমতার জায়গাগুলোতে এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছিল তারা।
কতটি বিমান তৈরি করা হবে, এটা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে মতভেদ ছিল।
রাশিয়ান প্রতিরক্ষা শিল্প যদি বিমান বাহিনীকে সফটওয়্যার কোডে পুরোপুরি অ্যাকসেস দিয়েও দেয়, কিন্তু তারপরও এই সন্দেহ রয়েছে যে, সু-৫৭ বিমানের সীমাবদ্ধতাগুলো রাশিয়া কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না, যেটা দেখে ভারতীয় সামরিক বাহিনী সন্তুষ্ট হবে।
রাশিয়া ভারতকে একটি সু-৫৭ বিমানের রফতানি উপযোগী সংস্করণ দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে, যেটাকে বলা হচ্ছে সু-৫৭ই। তবে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন পর্যন্ত সু-৫৭ই বিদেশে রফতানির অনুমোদন দেননি।
উল্লেখ্য যে, রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিল য়ে, তারা সু-৫৭ বিমানের গণ উৎপাদনে যাবে না। তবে, গেলো মে মাসে পুতিন ঘোষণা দেন যে, ২০২৮ সাল নাগাদ রাশিয়ান বিমান বাহিনীতে ৭৬টি সু-৫৭ বিমান যুক্ত হবে।
Posted ৪:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta