কক্সবাংলা ডটকম(২৬ মার্চ) :: ইসরাইলের সাথে এয়ার ইন্ডিয়ার প্রথম সরাসরি ফ্লাইটের খবরটি বিশ্ব মিডিয়ায় হেডলাইন হয়েছে একটিই মাত্র কারণে। সেটা হলো সৌদি আরব এই ফ্লাইটের জন্য তার আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইসরাইলগামী কোন বাণিজ্যিক ফ্লাইটকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিলো সৌদি আরব। গত নভেম্বরে রিয়াদ-তেল আবিব রুটে যাতায়াত করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এয়ার ফোর্স ওয়ান, কিন্তু সেটা ছিল ভিভিআইপি ফ্লাইট।
এটা এখনও দেখার বিষয় যে ইসরাইলী এয়ালাইন্স এল আল এয়ার ইন্ডিয়ার মতো অনুমতি পায় কি-না। সম্ভবত পাবে না। তেল আবিবে এরইমধ্যে কিছু যন্ত্রণা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে কারণ এল আলের চেয়ে কম টিকেট খরচ অফার করবে এয়ার ইন্ডিয়া।
কিন্তু ইসরাইলগামী ফ্লাইটের জন্য সৌদি আরবের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়া নিয়ে যে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হয়েছে, বিষয়টি তার চেয়ে অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটা দিক হলো, এই সুবিধাটা ভারতই প্রথম পেলো। এটা থেকে বোঝা যায় যে বর্তমান সরকার পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে কূটনীতির ক্ষেত্রে সফল হয়েছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের সাথে (কারণ সম্প্রতি সৌদি-পাকিস্তান এবং ভারত-ইরান সম্পর্ক বেশ ঘনীভূত হয়েছে)।
দিল্লীর ক্ষমতাসীন সরকার ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক রক্ষার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। বিস্মিত হওয়ার এখানে কিছু নেই। মোদি সরকার ইসরাইলের সাথে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়েছে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো এতে নাখোশ হয়নি। মোটের উপর, এটাই প্রথমবারের মতো দেখা যাচ্ছে যে পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর সাথে কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারতের কিছু পরিপক্কতা এসেছে।
সম্ভবত, আরেকটি একই ধরনের সাফল্যের গল্প হলো ভারতের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা যেন আরও বেশি, কারণ এখানে আলস্য ছেড়ে পুরনো সময়টাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপার রয়েছে। আবারও, প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার কারণেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। মনে হচ্ছে যে, দিল্লীর দরবারে এমন কথা ছড়িয়ে পড়েছে যে প্রধানমন্ত্রী ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আবার চাঙ্গা করার ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী। (প্রধানমন্ত্রী মোদি সেইসব রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্য অন্যতম, যারা রোববারের রাশিয়ার নির্বাচনে পুতিন পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে সবার আগে অভিনন্দন জানিয়েছেন)।
ইকোনমিক টাইমস এক রিপোর্টে জানিয়েছে যে, রাশিয়ার অত্যাধুনিক এস-৪০০ এয়ার প্রতিরক্ষা সিস্টেম কেনার ব্যাপারে বাণিজ্যিক চুক্তি চুড়ান্ত হওয়ার পথে এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের রাশিয়া সফরের সময় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। প্রায় দুই বছর ধরে চুক্তিটি নিয়ে দর কষাকষি চলছে। চীন ও তুরস্কের কারণে রাশিয়ার সাথে এস-৪০০ সিস্টেম কেনার চুক্তিটি ঝুলে ছিল।
মজার ব্যাপার হলো, ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গি বিমান কেনার বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতার বিষয়টি মস্কোতে সীতারামনের এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে লবিটি এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে, তারা এখন নিশ্চয়ই হতাশ হয়ে পড়েছে। এছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াতেও এটা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চলে আসছে, অন্যান্য প্রতিযোগীরা যেগুলো উসকে দিয়েছে। আশার দিক হলো প্রতিরক্ষা খাতে কিছু কেনাকাটার তালিকায় ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগীরাও রয়েছে।
তবে, ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের আসল অর্জনটা নির্ভর করবে তারা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের জায়গাটাতে কতটা মনোযোগ দিতে পারে তার উপর। ভারতকে বড় কিছু ধারণা নিয়ে ভাবতে হবে। একটা সম্ভাবনাময় দিক হতে পারে ভারত ও ইরানের মধ্যে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন, যেটা নিয়ে বহু বছর ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে।
রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফট গত বছর ইরানের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এসারে ভারতের একটি কোম্পানির মালিকানাও রয়েছে রোসনেফটের কাছে। ভারতের পেট্রোলিয়াম বাজারেও তাই বড় ভূমিকা রাখার আগ্রহ রয়েছে তাদের। ভারতের জ্বালানি তেলের বাজারে রয়্যাল ডাচ শেল এবং বিপি’র পর রোসনেফটই হবে তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। সুলভ অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য গুজরাটের ৫৮ মিলিয়ন টন ধারণ ক্ষমতার ভাদিনার বন্দরটি অধিগ্রহণও করেছে রোসনেফট। ভারতের ব্যাবসাকে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ হিসেবে দেখছে রোসনেফট যেখান থেকে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন্সসহ বিভিন্ন দেশে তেল রফতানি করা যাবে।
ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্য বাস্তবতার ভিত্তিতে যত্নশীল পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এজন্য এ চিন্তাকে কৌশলে রূপ দেয়ার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। এই জায়গাতেই ভারত-রাশিয়া-ইরান সহযোগিতার জন্য পরিবেশটা এখন দারুণ অনুকূল। ইরান বিশেষ করে রাশিয়ামুখী আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চিন্তা করছে। ইরানের মসলিসের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কমিটির প্রধান সেখানকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা আলায়েদ্দিন ব্রাউজেরদি। তেহরানে তিনি বলেছেন, “ইসলামিক রিপাবলিক ও ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নীতি গ্রহণের দিকে এগুচ্ছে আমেরিকা। আমাদেরকে প্রাচ্যের সাথে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে হবে, বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার সাথে।”
Posted ৯:০৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta