কক্সবাংলা ডটকম(৮ জুন) :: দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্টের মধ্যে ভারত অব্যাহতভাবে তার অস্ত্রভাণ্ডারকে বিভিন্ন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পারমাণবিক ও ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে দেশটি এই অঞ্চলকে অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এরপরও চীনের সহযোগীতায় পাকিস্তান কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভারতের অস্ত্র প্রতিযোগিতার উচ্চাকাঙ্খাটি রোধ করতে চাইছে।
মোদি সরকারের শীর্ষ এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রয়েছে সামরিক আধুনিকায়ন। ফলে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০১৩-১৭ সালের মধ্যে বিশ্বের অস্ত্র আমাদানির ১২% এককভাবে ভারতের। বিদেশী কোম্পানিগুলোকে ভারতে এসে অস্ত্র তৈরির জন্য উৎসাহিত করতে ৪৯% পর্যন্ত মালিকানার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ফলে বিদেশী অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলোর জন্য ভারত একটি লোভনীয় অস্ত্র বাজারে পরিণত হয়েছে। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, সুইডেনের মতো দেশগুলো ভারতের সঙ্গে কোটি কোটি ডলারের চুক্তি করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
২০১৭ সালের জনুয়ারি থেকে ভারত বহুরকম ক্ষেপনাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এগুলো মধ্যে রয়েছে ব্যালিস্টিক, ক্রুজ ও ইন্টারসেপ্টর মিসাইল। ভারত তার নিজস্ব তৈরি পারমাণবিক অস্ত্রবহনে সক্ষম আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র (আইসিবিএম) অগ্নি-৫ এর চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ পরীক্ষা চালিয়েছে।
নয়া দিল্লি ২১০৮ সালে স্বল্প পাল্লার ব্যলিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালিয়েছে তিনটি। এগুলো হলো ধানুস, পৃথি-২ ও অগ্নি-১। দেশটি ক্রুজ মিসাইল ব্রোহ্মস ও নির্ভয়েরও পরীক্ষা চালিয়েছে। এডভান্সড এরিয়া ডিফেন্স ইন্টারসেপ্টর ও হাই-অল্টিচুড ইন্টারসেপ্টর মিসাইল পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার ব্যলিস্টিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও তৈরি করছে।
মিসাইল টেকনলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর)-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ভারত শান্তিপূর্ণ মহাকাশ প্রযুক্তির আড়ালে উল্লেখযোগ্য সুবিধা হাসিলের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। এই প্লাটফর্ম ভারতকে অন্যান্য সদস্য দেশ থেকে ‘হাই-ইন্ড, ডুয়েল ইউজ টেকনলজি’ আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে।
ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের কোন মাথাব্যাথা নেই। যদিও দেশটি ইতোমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ও দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরির ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বেধে দেয়া সীমায় পৌঁছেছে।
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিনিময়ে বিশ্বশক্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ভারত অগ্নি-৫ পরীক্ষার পর নিজেকে বড় ধরনের ক্ষেপনাস্ত্র শক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। দেশটির পরবর্তী বড় কর্মসূচি হলো আইসিবিএম ‘সূর্য্য’। এর পাল্লা ১২,০০০ কিলোমিটার। এই পাল্লার মিসাইল পরীক্ষা ভারতের উচ্চাকাঙ্খাটিকে গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখিন করেছে।
ভারতের আইসিবিএম চীন, রাশিয়া ও বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় রাজধানীকে টার্গেট করতে পারবে বলে আশংকা তৈরি হলেও তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোন উচ্চবাচ্য নেই। আর এটাও কোন রাখঢাকের বিষয় নয় যে ভারতের আইসিবিএম-এ ব্যবহৃত স্পেস লঞ্চ ভেহিকেল টেকনলজি বিদেশী রাষ্ট্রগুলোরই দেয়া শান্তিপূর্ণ মহাকাশ কর্মসূচির জন্য।
ভারতকে তার পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম সবেচেয়ে বড় ক্ষেপনাস্ত্র তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জার্মানি সহযোগিতা দিচ্ছে।
ভারত কখনোই তার বেসামরিক ও সামরিক রকেট কর্মসূচিকে আলাদা করেনি। এরপরও দেশটির মহাকাশ সংস্থা ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিরবিচ্ছিন্ন সহায়তা পাচ্ছে।
ভারতের আইসিবিএম কর্মসূচি নিয়ে পাকিস্তান বিভিন্ন সময় গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই ক্ষেপনাস্ত্র উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় আঘাত হানতে সক্ষম হলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই।
তাছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকারী দেশটির কেন বেজিং,লন্ডন, ওয়াশিংটন, মস্কো ও প্যারিসে পারমাণবিক হামলা চালানোর মতো ক্ষেপনাস্ত্র প্রয়োজন বিশ্বের জন্য তা একটি রহস্যও বটে।
Posted ২:১৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta