কক্সবাংলা ডটকম(২২ মে) :: ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এক্সিট পোল তথা ভোটকেন্দ্র ফেরতদের নিয়ে করা সমীক্ষার পূর্বাভাস বলছে, নির্বাচনে জয়লাভ করে আবারো সরকার গঠন করতে পারে বিজেপি। এ খবর প্রকাশের পর থেকে স্বস্তি দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি শিবিরে। তবে ভোট-পরবর্তী করণীয় নিয়ে উত্কণ্ঠায় আছে বিরোধী শিবির। খবর আনন্দবাজার।
এক্সিট পোলের অধিকাংশ সমীক্ষার ইঙ্গিত, ৩০০-এর বেশি আসনে জিতে সরকার ধরে রাখবে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। দু-একটি সমীক্ষায় এতটা নিশ্চিত ফলাফল পাওয়া যায়নি। তবে সেগুলোও বলছে, ৩০০-এর বেশ কম আসন জুটবে এনডিএর ভাগে। তবে এনডিএ জোটের জয়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে সবগুলোতেই। এছাড়া নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, এমন আভাস কোনো সমীক্ষাতেই পাওয়া যায়নি।
তবে এক্সিট পোলের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বিরোধী শিবিরের প্রায় সব নেতা। জোর দিয়ে তারা বলছেন, অতীতে এসব সমীক্ষার পূর্বাভাস বহুবারই ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
এর পরও বিজেপিবিরোধী শিবিরে এখন দেখা যাচ্ছে কিছুটা স্তিমিত ভাব। দিল্লিতে অ-বিজেপি সরকার গঠনের উপযুক্ত রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরির তত্পরতাতেও খুব একটা চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে না। একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু।
এদিকে এনডিএ জোটের সব শরিক দলকে দিল্লিতে আজ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শরিকদের নিয়ে অশোক হোটেলে এক ডিনার পার্টির আয়োজন করেছেন তিনি। মূলত নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর জোটের কৌশল নিয়ে আলোচনা সারতেই তিনি এ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে তাত্পর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ভোট শেষ হওয়ার পরে নয়, বুথফেরত সমীক্ষাগুলোর ফলাফল সামনে আসার পরই এ ডিনার পার্টির আয়োজন হয়েছে। বিজেপি সূত্র বলছে, আজকের নৈশভোজের টেবিলকে অঘোষিতভাবেই বিজয় উদযাপনের টেবিল করে তুলবে বিজেপি। একই সঙ্গে এ উদযাপনের আবহের মধ্যেই পরবর্তী সরকার গঠনসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব আলোচনাও সেরে নেয়া হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সমীক্ষার ফলাফলের কারণেই এতটা স্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। অন্যথায় অমিত শাহ এ পার্টির আয়োজন করতেন কিনা, সে বিষয় নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। এনডিএর সংখ্যাগরিষ্ঠতার আভাস না পেলে অমিত শাহর মধ্যে এতটা তৃপ্ত মনোভাব দেখা যেত না। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই বিজেপির প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড়ের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিতেন বিজেপি নেতারা।
এক্সিট পোলের পূর্বাভাসে বিজেপি যে অনেকটাই নির্ভার, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। জয়ের ইঙ্গিত পাওয়ার পরদিনই রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে এনডিএ শরিক সুহেলদেব ভারতীয় সমাজবাদী পার্টির (এসবিএসপি) প্রধান ওমপ্রকাশ রাজভরকে বরখাস্ত করেছেন তিনি। ওমপ্রকাশ রাজভরের অপরাধ, বিজেপিকর্মীদের নিন্দা করেছিলেন তিনি।
গেরুয়া শিবিরের স্বস্তির বিপরীত ছবি দেখা যাচ্ছে বিরোধী শিবিরের একাংশে। বিজেপিবিরোধী শক্তিগুলোকে এক প্লাটফর্মে আনার বিষয়ে কংগ্রেসের উৎসাহেও যেন কিছুটা ভাটা পড়েছে। রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধী ইচ্ছুক আঞ্চলিক বা রাজ্যকেন্দ্রিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন ঠিকই; কিন্তু সরকার গঠনের জন্য কংগ্রেসের যে প্রস্তুতি বা তত্পরতা থাকার কথা ছিল, দলটির মধ্যে তার অনেকটাই অনুপস্থিত।
তবে বৃহস্পতিবার বিকালের আগে চূড়ান্ত ফলাফল হলফ করে বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনো। এর পরও বুথফেরত সমীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে স্বস্তির আবহ বিজেপি শিবিরে। বিহারে বিজেপির ‘অবাধ্য’ হিসেবে পরিচিত শরিক নীতীশ কুমারও এরই মধ্যে ভোল পাল্টে ফেলেছেন। শেষ দফার ভোটগ্রহণের দিন দুপুরেই বিজেপির বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে সম্পর্কে বিজেপি নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বেশ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রোববার সন্ধ্যার পরই বেশ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, এনডিএ জোট ছাড়ার কোনো ইচ্ছাই নেই তার।
মানতে না চাইলেও বিজেপিবিরোধী শিবিরকে উত্কণ্ঠায় ঠেলে দিয়েছে এক্সিট পোলের পূর্বাভাস। উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রধান মায়াবতী বিজেপিবিরোধী জোটের অন্যতম শক্তি হয়ে উঠবেন বলে এতদিন প্রত্যাশা করা হচ্ছিল। গত এক-দেড় মাসের কার্যকলাপে সে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি নিজেও। এ কয়দিনে বিজেপি এবং মোদি-শাহ জুটির সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছিলেন। শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বিজেপির সংঘাতের বিষয় নিয়েও মুখ খুলেছিলেন তিনি। কিন্তু এক্সিট পোলের পূর্বাভাস প্রকাশের পর থেকেই বেশ সাবধানী অবস্থানে মায়াবতী।
গতকালই দিল্লিতে রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তার। আচমকাই সে পরিকল্পনা বাতিল করেছেন মায়াবতী। বিজেপি ইস্যুতে উত্তর প্রদেশের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে এতদিন একযোগে লড়াই চালিয়েছেন তিনি। সেই অখিলেশ যাদবকেও মায়াবতীর দেখা পেতে ছুটতে হয়েছে তার বাড়িতে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আশঙ্কা, এ পূর্বাভাসের আড়ালে নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হতে পারে। প্রশাসনকে চাপ দিয়ে ইভিএম বদলানোর প্রয়াস থেকেই এ অপচেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে বলব ইভিএম পাহারা দিন। যাতে একটিও ইভিএম বদল না হয়। এছাড়া ইভিএম কারচুপির আশঙ্কা জানিয়ে দিল্লিতে রাহুল গান্ধীকেও এসএমএস পাঠিয়েছেন তিনি।
অনেকটা উত্কণ্ঠা থেকেই হোক বা আত্মবিশ্বাস থেকেই হোক, এ মুহূর্তে বিজেপির সরকার গঠন ঠেকাতে সবচেয়ে তত্পর ভূমিকা রাখছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। দলটি যাতে ক্ষুদ্র কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর সমর্থন না পায়, সেটি নিশ্চিত করতে বেশ কর্মমুখর দিন পার করছেন তিনি। রোববারই বিষয়টি নিয়ে রাহুল গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। একই দিনে বৈঠক করেছেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। দুপুরের খাবার খেয়েছেন সিপিএম নেতা সিতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে। আগের দিন শনিবার বৈঠক করেছেন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব ও মায়াবতীর সঙ্গে।
বিজেপি ঠেকাতে মরিয়া চন্দ্রবাবু নাইডু ব্যস্ত দিন পার করেছেন গতকালও। পশ্চিমবঙ্গে গতকাল স্থানীয় মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তার কালীঘাটের বাড়িতে সাক্ষাৎ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরের রণকৌশল ঠিক করা নিয়েই দুজনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
Posted ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ মে ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta