কক্সবাংলা ডটকম(২৩ মে) :: টানা দ্বিতীয়বারের মতো নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই ভারতের কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ভারতীয় জনতা পাটির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। বৃহস্পতিবারের ভোটগণনায় স্পষ্ট হয়েছে, দ্বিতীয়বারের জন্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে মোদির দল। এর মধ্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা দু’বার সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবেন মোদি।
বৃহস্পতিবার ভোটগণনা অনুসারে, ৫৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপির এনডিএ জোট এগিয়ে আছে ৩৪৮টি আসনে। গতবারের চেয়ে মাত্র ৪টি আসন কম। আর বিরোধী ইউপিএ জোট গতবারের তুলনায় ২৬টি আসনে বেশি জয়লাভ করলেও ১০০ আসন পায়নি। এবার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন এই জোট পেতে যাচ্ছে ৯১টি আসন।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, লোকসভার ৫৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে ২৬০টি আসনে। এ জোটের প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন আরো ৬৬টি আসনে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে ৬৪টি আসনে। এর বাইরে আরো ২৪টি আসনে এগিয়ে রয়েছেন এ জোটের প্রার্থীরা। উত্তর প্রদেশে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ও সমাজবাদী পার্টির জোট জয় পেয়েছে চারটি আসনে। এগিয়ে রয়েছে আরো একটিতে। এর বাইরে অন্যান্য দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে ৬২টি আসনে। এ ধরনের আঞ্চলিক বা ছোটখাটো দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন আরো ৬১টি আসনে।
লোকসভা নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের জন্য কোনো দল বা জোটের জয়লাভের জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা ২৭২। এরই মধ্যে তিন শতাধিক আসনে জয় নিশ্চিত হওয়ায় নিরঙ্কুশভাবেই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপির এনডিএ জোট।
এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করলেও শেষ পর্যন্ত গেরুয়া ঝড়ে টালমাটাল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট। হারের শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন খোদ কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী নিজেই। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী গান্ধী পরিবারের জন্য সংরক্ষিত আসন হিসেবে পরিচিত আমেথিতে বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হয়েছেন তিনি। প্রতিপক্ষ স্মৃতি ইরানিকে জয়ের জন্য অভিনন্দন বার্তাও পাঠিয়েছেন রাহুল।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোটের কাণ্ডারিদের প্রায় সবাই বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ধরাশায়ী হয়েছেন নিজ রাজ্যেই। লোকসভা নির্বাচনে এখানকার ২৫ আসনের মধ্যে নাইডুর নেতৃত্বাধীন তেলেগু দেশম জয়লাভ করেছে বা এগিয়ে থাকতে পেরেছে মোটে তিনটি আসনে। বাকি ২২ আসনের সবক’টিই নিজের ঝুলিতে পুরতে যাচ্ছে আরেক স্থানীয় দল ওয়াইএসআরসিপি।
ভারতজুড়ে লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি একই সঙ্গে চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে চন্দ্রবাবু নাইডুর অন্ধ্র প্রদেশও অন্যতম। লোকসভার মতো স্থানীয় বিধানসভা নির্বাচনেও গো-হারা হেরেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু।
বিধানসভার ১৭৫টি আসনের মধ্যে তেলেগু দেশম পেয়েছে মোটে ২৬টি আসন। ওয়াইএসআরসিপি পেয়েছে ১৪৭টি। অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে চন্দ্রবাবু নাইডুর গতকাল রাতেই পদত্যাগ করার কথা ছিল বলে স্থানীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। অন্যদিকে ওয়াইএসআরসিপি প্রধান জগমোহন রেড্ডি এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজ দপ্তরের নামফলকও তৈরি করে ফেলেছেন।
মোদি বিরোধীদের বড় শক্তি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বিএসপি, অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন এসপি ও স্থানীয় আরেকটি দলের মধ্যে গড়ে তোলা জোটটিরও। শেষ পর্যন্ত এখানেও হার মানতে হয়েছে তাদের। উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে এ জোটের ভাগ্যে জুটেছে পাঁচটি আসন।
লোকসভা নির্বাচনে এবার বিজেপির সবচেয়ে বড় চমক ছিল পশ্চিমবঙ্গে। এ রাজ্যের অধিকাংশ আসনে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করলে বা এগিয়ে থাকলেও ব্যাপক উত্থান দেখা গেছে বিজেপির। এখানকার ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়লাভ করেছে অথবা এগিয়ে রয়েছে ২২টি আসনে। ২০১৪ সালে এ রাজ্যে তৃণমূলের জয় পাওয়া আসন সংখ্যা ছিল ৩৪। বিজেপি জয় পেয়েছিল মোটে দুটি আসনে। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে অথবা এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে দুটি আসনে। অন্যদিকে দীর্ঘকাল ধরে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা ধরে রাখা বামফ্রন্ট এবারের নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির শিকার হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গে একটি আসনও পায়নি বামফ্রন্ট।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে ইউপিএ জোটের জন্য একমাত্র সান্ত্বনা তাদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ইউপিএ জোট পেয়েছিল ৬০টি আসন। সে অনুযায়ী এবার লোকসভায় তাদের আসন বাড়তে যাচ্ছে ২৮টি। অন্যদিকে এনডিএ জোটের আসন ছিল ৩৩৬টি। সে হিসেবে বিজয়ী জোটটির এবার আসন সংখ্যা কমতে পারে ১০টি।
জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর এক টুইট বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, সবার বিশ্বাস অর্জন করে ও সবার বিকাশ ঘটিয়েই ভারত বিজয়ী হয়েছে। আমরা সবাই একসঙ্গে থেকেছি। একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। সবাই একজোট হয়েই আমরা শক্তিশালী দেশ গড়ে তুলব।
এরপর ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে আরেক টুইট বার্তায় মোদি লেখেন, আপনারা আমাদের জোটের ওপর যেভাবে আস্থা রেখেছেন, তা আমাদের আরো কঠোর পরিশ্রম করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছে।
অন্যদিকে ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এক টুইট বার্তায় বলেন, বিরোধীদের অপপ্রচার, মিথ্যাচার, ব্যক্তিগত আক্ষেপ ও ভিত্তিহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। আজকের এ ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে, ভারতবাসী জাতিবাদ, পরিবারতন্ত্র ও তুষ্টীকরণের রাজনীতি উপড়ে ফেলে উন্নয়ন ও রাষ্ট্রবাদকেই বেছে নিয়েছেন।
দিল্লিতে গতকাল রাতে বিজেপির সদর দপ্তরে দেয়া এক ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি আজ বলতে চাই, আপনারা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করব। দেশের জনসাধারণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন, তাই আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার গুরুত্ব আমি বুঝি। আপনারা এ ভিখারির ঝুলি তো ভর্তি করে দিয়েছেন, কিন্তু আপনাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আমি সবসময় থাকব।
অন্যদিকে নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এটা জনগণের সিদ্ধান্ত। জনগণ পরিষ্কারভাবে তাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, জনতাই মালিক।
নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার জয়লাভের জন্য এরই মধ্যে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা পেতে শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সন্ধ্যায়ই তাকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুও গতকাল মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।
Posted ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta