কক্সবাংলা ডটকম(২৮ জুন) :: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর দুই দেশের গণমাধ্যম তো বটেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে। বিবিসির ভাষ্যমতে, ট্রাম্প শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে। মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরটি ঘিরে চলমান ঘটনাগুলো সেই পর্যবেক্ষণকেই জোরালো করছে।
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগ মুহূর্তেই ভারতের বহুকাঙ্ক্ষিত প্রিডেটর ড্রোন দিতে রাজি হয়েছেন ট্রাম্প। ভারতের কাছে ২২টি গার্ডিয়ান ড্রোন বিক্রি করবে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে মনে করছেন। তাদের মতে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ারই ইঙ্গিত এটি।
ড্রোনগুলোর দাম পড়বে ২০০-৩০০ কোটি রুপি। এর মাধ্যমে ভারতের ৭ হাজার ৫০০ কিলোমিটার উপকূল রেখা বরাবর নজরদারি চালাতে পারবে ভারত। ‘ন্যাটো’ জোটের বাইরে কোন দেশের সঙ্গে এই প্রথম এ ধরনের চুক্তি করল যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মার্কিন অস্ত্রের অন্যতম বড় ক্রেতা ভারত। গত বছর পেন্টাগনের কাছে এ ব্যাপারে তিনবার আবেদন করেছিল ভারত।
এছাড়া গত সোমবারের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমনে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন মোদি ও ট্রাম্প। এ ব্যাপারে দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা সৈয়দ সালাউদ্দিনকে সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি চরম অন্যায়। পাকিস্তান কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকবে না।
এদিকে ভারত-মার্কিন যৌথ বিবৃতির সমালোচনা করেছে ভারতের বিরোধী দলগুলোও। তারা বলছেন, এতে নতুন কিছু নেই। আর ইসলামি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমেরিকার মতামতকেই কার্যত মেনে নিতে হয়েছে ভারতকে। যৌথ বিবৃতিতে ভারতের স্বার্থবাহী কিছু নেই।
মোদি-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে চীনের উদ্বেগও খুব স্পষ্ট। এ বৈঠক চীনের প্রতি হুঁশিয়ারি বলেই মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, ভারত যদি মনে করে থাকে চীনের মোকাবিলা করতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আউটপোস্ট (দেশের বাইরে ঘাঁটি) হিসেবে কাজ করবে, তাহলে ভুল করবে। এই সিদ্ধান্ত ভয়াবহ বিপর্যয়ের সামিল হবে।
পত্রিকায় আরও লেখা হয়, ভারত যদি নিজেদের নির্জোট অবস্থান থেকে সরে এসে চীনকে রুখতে আমেরিকার মিত্র হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তারা কূটনৈকতিক কৌশলগত সমস্যায় পড়বে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের সৃষ্টি হবে।
এর কয়েক দিন আগেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করে কয়েকটি অস্থায়ী সেনা বাঙ্কার ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন কৈলাস মানস সরোবরগামী ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের তিব্বতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সাতচল্লিশের পর থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ। যদিও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়া ভারতের পক্ষ নিলে প্রায় ছিন্ন হয়ে যায় সম্পর্ক। এরপর ভারত-রাশিয়া মিত্রতা অটুট ছিল বহুদিন। সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ মস্কো সফর করে সেই সম্পর্ককে আবার স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সাথে নতুন করে মিত্রতা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী পাকিস্তান।
আর চীনের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক সেই ১৯৫০ সাল থেকেই অত্যন্ত নীবিড়। ওই সময় তাইওয়ান ইস্যুতে যখন শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো চীনের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে তখন পাকিস্তান পিপলস রিপাবলিক অব চায়নাকে স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতার প্রধান মিত্র হয়ে ওঠে চীন।
এক সময় আদর্শিক ও কূটনৈতিক বিরোধ মিটিয়ে চীন ও রাশিয়াকে বন্ধু বানানোর মধ্যস্থতা করে উভয়ের সুদৃষ্টি পায় পাকিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও দেশটির সামরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাড়ছে। গত বছরের শেষ নাগাদ কাশ্মীর ইস্যুতে পাক-ভারত উত্তেজনা যখন তুঙ্গে সেই মুহূর্তে পাকিস্তানের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া করেছে রাশিয়া।
অপরদিকে তালেবান ইস্যুতে রাশিয়ার অবস্থানও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ রূপে দেখা দিয়েছে। আফগান তালেবানদের ‘স্বাধীনতাকামী’ আখ্যা দিয়েছে পুতিন প্রশাসন। তাছাড়া আফগানিস্তানে বিনিয়োগ নিয়ে চীন ও ভারত দ্বন্দ্ব চলছে অনেক দিন ধরেই। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তো রয়েছেই।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে গেলেন মোদি। সেখানে দীর্ঘ বৈঠক, করমর্দন, আলিঙ্গন, সন্ত্রাসদমন নীতি, বাণিজ্য, অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা যেমন নজর কাড়ছে তেমনি প্রতিপক্ষের কপালের ভাঁজ আরো গভীর হচ্ছে।
শনিবার থেকে ত্রিদেশীয় সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। প্রথমে গিয়েছিলেন পর্তুগাল। পরবর্তী গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ত্রিদেশীয় সফরের শেষ গন্তব্য নেদারল্যান্ডস।
Posted ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৮ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta