বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

করোনাভাইরাস : ভিয়েতনাম পারলে আমরা কেন নয় ?

সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০
275 ভিউ
করোনাভাইরাস : ভিয়েতনাম পারলে আমরা কেন নয় ?

আব্দুল কুদ্দুস রানা

(১৩ এপ্রিল) :: ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পযর্ন্ত কারো মৃত্যু হয়নি-এ খবর নিশ্চয় আপনার জানা আছে। কিন্তু কেন ? সেটা জানা নেই অনেকে।

সহজ উত্তর হচ্ছে-করোনাভাইরাস যখন দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েনি, তার আগেই গোটা দেশটা লকডাউন করে দিয়েছিল ভিয়েতনাম। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। করোনার ক্ষতিকর দিকগুলো মানুষের ঘরেঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল দ্রুত। লোকজনকে ঘরে নিরাপদে থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। মানুষজনও সরকারের নীতি, নির্দেশনা মেনে গৃহবন্দী ছিলেন এবং আছেন। যে কারণে সেখানে প্রাণহানী ঘটছে না। যদিও ভিয়েতনামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫১ জন। এরমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২৬ জন। আক্রান্তদের বেশিরভাগ এসেছিল চীনের উহান সিটি থেকে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, করোনাযুদ্ধে ভিয়েতনাম জয়ী হতে পারলে, বাংলাদেশ কেন নয় ? উত্তরটা আপনারও ভালো জানা আছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের রগ বেশি টেরা। তাঁরা সহজে সবকিছু মেনে চলতে অভ্যস্ত না।

শুরু থেকেই সরকার করোনা সংক্রমণরোধে যত কৌশল-নির্দেশনা, প্রচারণা, প্রণোদনা ঘোষণা দিয়ে আসছে, তা ভিয়েতনামের তুলনায় কোনো অংশে কম ছিল না। সরকার বলছে ছুটির দিনগুলোতে ঘরেই থাকুন, নিরাপদে থাকুন। কিন্তু আমরা সরকারের সেই নির্দেশনা মানছি না। শহরের হাটবাজার, সড়ক, অলিগলি ঘুরলে তার প্রমাণ পাই। পুলিশ, সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসনের লোকজন প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে লোকজনকে ঘরে পাঠানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু কৌতুহলী জনতা ঘর ছেড়ে বেরোচ্ছেন-শহরের লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে। অযথা পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে কেউ কেউ যে পুলিশের আদর-যত্ন পাচ্ছেন না, তেমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম না। তারপরও আমাদের শিক্ষা হচ্ছে না।

বাংলাদেশে এ পযন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৩ জন। মারা গেছেন ৩৯ জন। এরমধ্যে রাজধানীসহ ঢাকা জেলায় আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি। তারপর চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে ছয় জেলাতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ১২ জন, কুমিল্লায় ৯ জন, ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় ৬ জন, চাঁদপুরে ৬ জন। কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুরে আছে একজন করে।
তবে এখন পযর্ন্ত পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং ফেনী ও নোয়াখালীতে রোগী শনাক্ত হয়নি। এটা খুশির খবর।

কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন করা হয় ৮ এপ্রিল থেকে। লকডাউনের কারণে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, যানবাহন চলাচল, নির্মাণকাজ, আয়-রোজগার বন্ধ আছে। কোয়ারেন্টিন, লকডাউনে গৃহবন্দী লাখ লাখ মানুষ। প্রাণঘাতী করোনা থাবায় লন্ডভন্ড দেশ। হুমকিতে দেশের অর্থনীতি । অর্থনীতি যেন স্থবির হয়ে না পড়ে তারজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রণোদনা। এই প্রণোদনা কারা পাচ্ছেন সে হিসাব অনেকের মুখস্থ। কিন্তু যাঁদের সাথে ব্যাংকের যোগাযোগ নাই, করোনা সংকটে যাঁরা ইতিমধ্যে পেশা হারিয়ে, কাজ হারিয়ে, চাকরি হারিয়ে ঘরে বেকার ও গৃহবন্দী অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন-তাঁদের কী হবে ?

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে ৫৫ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রায় চার কোটি মানুষ। ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। কক্সবাজারে এর সংখ্যাটা কত হতে পারে-জানা নাই। তবে চার থেকে পাছ লাখতো হতেই পারে। তাঁদের জন্য আমরা কী করছি ?

জেলা প্রশাসক জনাব মো. কামাল হোসেন বললেন, ইতিমধ্যে কক্সবাজারের আটটি উপজেলার ৭১ ইউনিয়নে প্রায় ৩৫ হাজার দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের কাছে ত্রাণসহায়তা এবং প্রায় ৭ হাজার পরিবারে ২৮ লাখ টাকা বিতরণ হয়েছে। ৮৮ হাজার পরিবারে ১০ টাকা দামে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি চলছে। রাজনৈতিক দল, সরকারি দপ্তর, আইনশৃংখলা বাহিনী, ব্যক্তিবিশেষ, সামাজিক সংগঠন ও বেসরকারি প্রতিষ্টানের উদ্যোগেও চলছে ত্রাণসহায়তা। সবার আগে আমাকে জনস্বার্থকেই বিবেচনায় রাখতে হবে।

ফেসবুকে আমার বন্ধুভাই মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম লোকজনকে সতর্ক করে বারবার লিখছেন, ‘প্রাণ বিষিয়ে উঠলেও বৈশ্বিক এই বিপযয়ে ঘরেই থাকুন। কারণ বাইরে যে মৃত্যুর হাতছানি’।

অনেকে লিখছেন-ধনীরা ব্যাংকে জমানো টাকায় চলছেন। দরিদ্ররা পাচ্ছেন ত্রাণসহায়তা। কিন্তু মধ্যবিত্ত যাঁরা, তাঁরা কোথাও যেতে পারছেন না। কোথায়ও গিয়ে তাঁরা হাতও পাততে পারছেন না । তাঁদের জীবনের কী হবে ? তাঁদের ঘরে দ্রুত খাবার পৌঁছে দিতে হবে। অন্যতায় মানবিক বিপযর্য় দেখা দিতে পারে।

অদৃশ্য শত্রু করোনা-ধনী-গরিব, সাদা কালো কিছুই মানছে না। আমাদের মনমানষিকতার কেন পরিবর্তন হবে না। সংকটের সময় মানুষের মানবিকতা, ভালো মন্দ প্রকাশ পায়। ভাবতে হবে এখনই, আমরা কি কেবল নিজের জন্য বাঁচবো, নাকি সবাইকে নিয়ে বাঁচবো ? নইলে জীবন ও জীবিকা দুটোই হুমকিতে পড়বে।

# উহানের পথে হাঁটুন :

বর-কনের ছবিটা খেয়াল করেছেন ? সৃদর্শন বরের সাথে লাল কাপড়ে সজ্জিত কনের আকর্ষণীয় ছবিটা চীনের উহান শহরের। ‘ উহানে বিয়ে’-এই শিরোনামে বর-কনের পোজের এই ছবিটি আজ প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। টানা ৭৬দিন পর গত বুধবার উহান শহরে লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়। এরপর শুরু হয় বিয়ের হিড়িক।

গত বছরের ডিসেম্বরে এই উহান থেকেই প্রথম করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল । এখন বিশ্বের অন্তত ২০৯টি দেশ ও অঞ্চল করোনার ভয়াবহতা দেখছে। এখন পযন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৮৫ জন মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন। সবদেশকে ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৪১৮ জন। আক্রান্ত ৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৯ জন।

উহানে করোনা আক্রান্ত হন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। মারা যান আড়াই হাজারের বেশি। চীনে মারা যাওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই উহারের। অথচ এই উহান শহরের মানুষ এখন মুক্ত, স্বাধীন। সরকারের নির্দেশনা মেনে চলেছেন বলেই তা সম্ভব হয়েছে। তবে উহানে আগের মতো গায়ে গা লাগিয়ে চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে। যেখানে ভিড় সেখানে মানুষকে মাস্ক পরতে এবং দুরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলছে রোবট।

আর আমরা করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোকাবিলার চতুর্থ ধাপে অবস্থান করছি। উহানের মানুষ রোবটের নির্দেশনা মেনে ভবিষ্যত ঠিক করছেন। অথচ আমরা সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছি না। তাহলে আমরা করোনা থেকে মুক্তি পাব কী করে ? আমাদের লকডাউনতো জীবনেও শেষ হবে না।

করোনাভাইরাস আপনার বাড়িতে এমনি এমনি গিয়ে হাজির হবে না। আপনি যদি বাইরে গিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরেন, ঘরে নিরাপদে থাকা প্রিয়জনদের শরীরেও ছড়িয়ে দেন, তার দায় সরকার নেবে কেন ?

করোনাযুদ্ধে জিততে হলে ভিয়েতনামের পথ অনুসরণ করুন। উহানের পথেই হাঁটুন। তবেই সম্ভব-করোনামুক্ত কক্সবাজার, করোনামুক্ত বাংলাদেশ গড়া ।

# বুদ্ধি দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না। মন জয় করতে লাগে হৃদয়। আর হৃদয়বানরাই হয় মানবিক মানুষ। মানবিক মানুষ দিয়েই সম্ভব অসম্ভবকে জয় করা। আসুন, মানবিক হই-দাঁড়াই করোনাযুদ্ধে কর্মহীন, সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের পাশে।

লেখক : আব্দুল কুদ্দুস রানা,
প্রথম আলো কক্সবাজার অফিস (১৩ এপ্রিল-২০২০)

 

275 ভিউ

Posted ৪:৫২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com