কক্সবংলা ডটকম(৪ জানুয়ারি) :: টানা তিন মেয়াদে গণতান্ত্রিক ধারা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জনকল্যাণমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণে আওয়ামী লীগ লীগ সরকার অবদান রেখেছে উল্লেখ করে তার ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, আবার সরকার গঠন করতে পারলে ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় টানা তিনবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই দীর্ঘ চলার পথে যতটুকু অর্জন, তার সবটুকুই আপনাদের অবদান। আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এ অর্জন সম্ভব হতো না। চলার পথে যদি কোনো ভুলভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন— এটাই আমার আবেদন।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সরকারের তিন মেয়াদের উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামল এবং বিএনপির ১৯৯১ সালের শাসনামলের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। মানুষ আজ স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের, স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বাঁচার।
বাংলাদেশ সংঘাত নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়— এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাস করি, এই নীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে উন্নত করেছি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন জোগাবেন না।
একই সঙ্গে আইনের মাধ্যমে এবার প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করছে। তার সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় নৌকা মার্কায় ভোট শেখ হাসিনা বলেন, আপনারাই আমার পরিবার, আমার ওপর ভরসা রাখুন। আসুন, সবাই মিলে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণ করি।
আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও ব্যাপক হারে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত তিন মেয়াদে সরকারের পদক্ষেপের কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়নে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমানো, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ সরকারের মেগা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনীতির যেকোনো সূচকে ২০০৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। ২০০৯ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৭ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত ২২ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ ছিল, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ, যা মোট প্রদত্ত ঋণের ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
সমালোচকেরা জাতির সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরে না বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা তাদের চরিত্র। মনে হয়, বাংলাদেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি দেখলে তারা বিমর্ষ হয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে, তা টেকসই করে আরো উন্নত জীবন যাতে মানুষ পায়, সেই চেষ্টা প্রয়োজন। আজকে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এই উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবনমান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই।
নির্বাচনী ইশতেহারে আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১২টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান শেখ হাসিনা। সেগুলো হলো সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার করা; দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার আওতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া; কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা; উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ ও উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া; কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা; গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত অবকাঠামো এবং শিল্পকলকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা; ব্যাংক–বিমা ও আর্থিক খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা; সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করে ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা ও তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা।
Posted ১২:১২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta