কক্সবাংলা ডটকম(২০ মে) :: মাইকেল জ্যাকসন তার গান এবং নাচ দিয়ে সারা বিশ্বকে বিমোহিত করে রেখেছিলেন। তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন ২০০৯ সালের ২৫ জুন তার মৃত্যুর পরপরই সেটা বোঝা যায়। তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সারা পৃথিবীতে তার লাখ লাখ ভক্ত শোকে স্তব্ধ হয়ে যান এবং পুরো গ্ল্যামার জগতই যেন থমকে যায়। মিউজিকের ইতিহাসে মাইকেল জ্যাকসনের অদ্বিতীয় স্থানটি তার মৃত্যুর সাথে সাথে সমাধীস্থ হয়ে যায়। তিনি এমন একজন গায়ক ছিলেন যার স্থান পূরণ করার মতো আর কেউ সত্যিকার অর্থে ছিল না। এবং নেইও।
২৬ জুন লস অ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত ‘দ্য গ্র্যামি মিউজিয়াম’ অতিদ্রুত ‘Michel Jackson: A Musical Legacy’ নামে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীটি ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত গ্র্যামির ‘Michael Jackson: HIStyle’প্রদর্শনীকে অনুসরণ করে করা হয়। ২০১০ সালে ৫২তম বার্ষিক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে গ্র্যামি পুরষ্কার বিজয়ী স্মোকি রবিনসন, সেলিন ডিওন, ক্যারি আন্ডারউড, উশার এবং জেনিফার হাডসন একসাথে মাইকেল জ্যাকসনকে উৎসর্গ করে ‘আর্থ সং’ গানটি গান। এর আগে মাইকেল জ্যাকসনকে ‘রেকর্ডিং অ্যাকাডেমি আজীবন সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাইকেল জ্যাকসনের অ্যালবামের ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং আরআইএএ কর্তৃক প্রকাশিত সর্বকালের সবচেয়ে বেশি অ্যালবাম বিক্রির তালিকায় মাইকেল জ্যাকসন ৭ম স্থানে ছিলেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক মাইকেল জ্যাকসনের ১০টি অর্জন যা তাকে ‘কিং অব পপ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মাইকেল জ্যাকসন এবং তার ভাইদের ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’ ব্র্যান্ডটি ইতিহাসের প্রথম পপ ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের প্রথম ৪টি একক গান ১ম স্থান অধিকার করে।
গান ৪টি ছিল ‘I Want You Back’, ‘I’ll Be There’, ‘The Love You Save’ এবং ‘ABC‘. পরবর্তী ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’ ব্র্যান্ডটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে ‘বেস্ট কন্টেমপোরারি ভোকাল পারফর্মেন্স’ ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পায়।
১৯৭৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন ‘অব দ্য ওয়াল’ অ্যালবামটি হিট হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি তার বিখ্যাত ‘থ্রিলার’ অ্যালবাম প্রকাশ করেন। মাইকেল জ্যাকসনের ২টি অ্যালবামই ২০০৮ সালে ‘গ্র্যামি হল অব ফেম’ এ জায়গা করে নেয়।
২টি অ্যালবাম হিট হলেও ‘থ্রিলার’ অ্যালবামকে মাইকেল জ্যাকসনের সবচেয়ে সফল অ্যালবাম হিসেবে মনে করা হয়। মাইকেল জ্যাকসন এবং কুইন্সি জোনস এই অ্যালবামটির সহ-প্রযোজক ছিলেন। অ্যালবামটি ‘বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড’ এর তালিকায় শীর্ষ ১০টির মধ্যে ৭ নম্বরে জায়গা করে নেয়। আরআইএএ প্রকাশিত সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবামের তালিকায় ‘থ্রিলার’ অ্যালবামটি ঈগলসের ‘দেয়ার গ্রেটেস্ট হিটস ১৯৭১-১৯৭৫’ অ্যালবামের সাথে যৌথভাবে ৭ম স্থান দখল করে।
মাইকেল জ্যাকসন তার ‘মুনওয়াক’ নাচের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। এটি তার একটি ‘ট্রেডমার্ক’ এর মতো ছিল। মাইকেল জ্যাকসন ১৯৮৩ সালের ১৬ মে দ্য লাবেলের ২৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে টিভি অনুষ্ঠান ‘Motown 25: Yesterday, Today, Forever’ এ তার ‘Billie Jean’ গানের সাথে প্রথম মুনওয়াক নাচটি পারফর্ম করেন।
পরে ঐ বছরের ডিসেম্বরে ‘থ্রিলার’ গানের মিউজিক ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে মিউজিক ভিডিওর জগতে নিয়ে আসেন বিপুল পরিবর্তন। প্রায় ১৪ মিনিটের মহাকাব্যিক মিউজিক ভিডিওটিরর মাধ্যমে মিউজিক ভিডিওর সীমাহীন সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসেন। মাইকেল জ্যাকসন এই মাধ্যমটিকে দৃঢ় এবং টেকসইভাবে টিকে থাকতে সহায়তা করেন।
১৯৮৪ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৮তম বার্ষিক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে প্রথম গায়ক হিসেবে মাইকেল জ্যাকসন ১রাতে ৮টি গ্রামি পুরষ্কার জেতার রেকর্ড গড়েন।
তার ‘থ্রিলার’ অ্যালবামটি ‘অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার’ এবং ‘বিট ইট’ গানটি ‘রেকর্ড অব দ্য ইয়ার’ পুরষ্কার পায়। মাইকেল জ্যাকসন ১১টি গ্র্যামি জিতে ‘৮০ এর দশকে সবচেয়ে বেশি গ্র্যামি জয়ীদের মধ্যে একজন হন।
মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন প্রথম তারকা যিনি একই ক্যাটাগরিতে ২বার ‘হলিউড ওয়াক অব ফেম’ এ জায়গা করে নেন। একক শিল্পী হিসেবে এই সম্মাননা পাওয়ার আগে ১৯৮০ ‘দ্য জ্যাকসন’ ব্র্যান্ডের অংশ হিসেবে ‘হলিউড ওয়াক অব ফেম’ এ জায়গা করে নেন। দ্য জ্যাকসন ব্র্যান্ডের আগের নাম ছিল ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’।
১৯৮৮ সালে ২ মার্চ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘৩০তম বার্ষিক গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড’ এ মাইকেল জ্যাকসন একক পারফর্ম বা সলো গান করেন। গ্র্যামির ইতিহাসের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স ছিল এটি এবং মাইকেল জ্যাকসন The Way You Make Me Feel এবং Man In The Mirror গান ২টিতে পারফর্ম করেন।
এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫জন গায়ক ব্যক্তিগতভাবে সম্মানজনক গ্র্যামি লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। গানের জগতে যারা অবদান রেখে যাচ্ছেন এবং প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন তাদের ‘রেকর্ডিং অ্যাকাডেমি স্পেশাল মেরিট অ্যাওয়ার্ডের’ অধীনে ‘গ্র্যামি লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে মাইকেল জ্যাকসন ব্যক্তিগতভাবে ১০ম ব্যক্তি হিসেবে এই অ্যাওয়ার্ডটি পাওয়ায় খুবই সম্মানিতবোধ করেন।
মাইকেল জ্যাকসন তাদের ব্র্যান্ড দ্য জ্যাকসন ফাইভের সদস্য হিসেবে তার ভাই জ্যাকি জ্যাকসন, জার্মিন জ্যাকসন, মারলন জ্যাকসন এবং টিটো জ্যাকসনের সাথে ‘রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম’ এ প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০১ সালে একক গায়ক হিসেবে এই হল অব ফেমে প্রবেশ করেন।
মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর পরের সপ্তাহে, প্রথম কোনো গায়ক হিসেবে এক সপ্তাহে মাইকেল জ্যাকসনের ১মিলিয়নের বেশি ডিজিটাল ট্র্যাক বিক্রি হয়। সর্বমোট ২.৬ মিলিয়ন ডিজিটাল ট্র্যাক বিক্রি হয়, যেটি পূর্বের রেকর্ডকে অনায়াসে ভেঙে দেয়।
একই সাথে প্রথম শিল্পী হিসেবে এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ৩টি অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড গড়েন। দুই সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ১০টি অ্যালবামের মধ্যে মাইকেল জ্যাকসনের ৬টি অ্যালবাম স্থান করে নেয়।
২০১৪ সালের ২১ মে মাইকেল জ্যাকসন ইতিহাসের প্রথম শিল্পী হিসেবে ৫টি আলাদা আলাদা দশকে ‘বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড’ এর তালিকায় ১০টি গানের তালিকায় তার গান নাম লেখায়। মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর পর প্রকাশিত Xscape অ্যালবামে Love Never Felt So Good ৯ নম্বরে উঠার পরপরই মাইকেল জ্যাকসন এই রেকর্ড গড়েন।
Featured Image: isleofwight.com
Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২০ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta