কক্সবাংলা ডটকম(৩০ আগস্ট) :: যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে স্থগিত থাকা শুল্ক্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বা জিএসপি ফেরত পেতে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু তৎপরতা থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একরকম নীরবতা পালন করা হচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২০১৫ সালের পর জিএসপি পুনর্বহালের কোনো আবেদন পায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
জিএসপি স্থগিত কিংবা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) পরিচালক আরনাল্ড হারপিনডাল বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিনিধি দলকে সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকেই এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
নতুন করে আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকার নতুন করে জিএসপি সংক্রান্ত আর কোনো আবেদন করবে না। এর আগে বিভিন্ন ফোরামে প্রসঙ্গক্রমে তিনি বহুবার বলেছেন, ইউএসটিআরের সব শর্ত পালন করার পরও অন্যায়ভাবে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করার আদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। একটার পর একটা শর্ত দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
জিএসপি স্থগিত হওয়ার পর কর্ম পরিবেশ এবং শ্রম অধিকার উন্নয়নসহ ১৬টি শর্ত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এসব শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে ইউএসটিআরের বছরে দু’বার এ বিষয়ে পর্যালোচনার কথা। তবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের পর আর এ নিয়ে কোনো শুনানিই হয়নি।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো চুক্তির (টিকফা) ওপর গত তিন বছরে তিনটি বৈঠক হলেও এসব বৈঠকে জিএসপি নিয়ে আলোচনা হয়নি। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় টিকফার পরবর্তী বৈঠকেও বিষয়টি এজেন্ডায় নেই বলে জানা গেছে।
জিএসপি পুনরুদ্ধারে সরকারি পর্যায়ে তৎপরতা না থাকলেও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু উদ্যোগ রয়েছে। পোশাক খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশের জিএসপি ফিরিয়ে দিতে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদক এবং রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ।
ট্রাম্প প্রশাসনকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটকে লেখা বিজিএমইএর এক চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে আসছে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক উৎপাদনে এসব তুলা ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান তুলা আমদানিকারক দেশ। মোট তুলা আমদানির এক-তৃতীয়াংশই আনা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় তৈরি হওয়া পোশাকে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হলে দেশটি থেকে তুলা আমদানি আরও বাড়বে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জিএসপি নিয়ে নতুন করে তৎপরতা আপাতত বেসরকারিভাবেই করছেন তারা। এ প্রক্রিয়া একটা পর্যায়ে এগোলে অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসন প্রাথমিকভাবে সম্মত হলে পরে দু’দেশের সররকারি পর্যায়েই বাকি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রফতানি বাড়ছে খুব ধীর গতিতে। বড় বাজার হওয়ায় বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ বিবেচনা থেকেই নতুন করে জিএসপি নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন তারা।
রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নি দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিকের প্রাণহানিতে আন্তর্জাতিক মানের শ্রম পরিবেশ না থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেয় ওবামা প্রশাসন।
২ জুলাই মার্কিন প্রকাশনা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে এটি প্রকাশ করা হয়। এর ৬০ দিন পর অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর থেকে জিএসপি স্থগিত কার্যকর হয়। সে সময় স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়নসহ বাংলাদেশকে ১৬ শর্ত পূরণের কথা বলা হয়।
সরকারের দাবি, এসব শর্তের সবই পূরণ করা হয়েছে। এরপর তিন দফা শুনানির পরও বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি।
জিএসপি স্থগিতের আওতায় পণ্য সংখ্যার দিক থেকে ৯৭ শতাংশ হলেও এসব পণ্য বাংলাদেশের রফতানি তালিকার মূল পণ্য নয়। তারপরও রফতানি কমে যাওয়ায় রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিএসপিভুক্ত পণ্যের রফতানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। এ কারণে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান কমেছে। গত অর্থবছরের বাংলাদেশের রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
আগের অর্থবছরে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের ৫৮৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। আগের বছরের তুলনায় রফতানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত বছর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।
স্থগিতের আগে প্লাস্টিক সামগ্রী, সিরামিকসহ রফতানি তালিকার ছোটখাটো আরও কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পেত। তবে প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক, চিংড়ি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ওষুধ কখনোই জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না। এ সব পণ্যে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক্কারোপ রয়েছে।
Posted ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta