কক্সবাংলা ডটকম :: মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজুর প্রতিদ্বন্দ্বী দল এমডিপি।
দেশটির অনলাইন নিউজ পোর্টালে সান জানিয়েছে, নির্বাচনে পাঁচ হাজার ৩০৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন এমডিপি প্রার্থী। কিন্তু মুইজুর দল পিএনসির প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার ৩০১ ভোট।
ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মুইজু সরকারের তিনজন উপমন্ত্রীর বিরূপ মন্তব্যের প্রভাব পড়েছে নির্বাচনে। কিন্তু বরখাস্ত হওয়া উপমন্ত্রীদের অবমাননাকর মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে যে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, নির্বাচনে তার প্রভাব যে পড়েনি তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মুইজু সরকারের উপমন্ত্রীদের অবমাননাকর মন্তব্য শুধু কূটনৈতিক বিষয় হয়েই ছিল না। যেহেতু এমডিপির জন্য তা একটি সুযোগ হিসেবে পরিণত হয়েছে। মেয়র নির্বাচনের ঠিক আগে সরকারপক্ষের এমন মন্তব্য সময়কে তাদের অনুকূলে এনেছে। ফলে জনসাধারণ দ্রুত ও ক্ষমাহীন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
অবশ্য এই পরিস্থিতির উদ্ভব বুঝতে মালদ্বীপ ও ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কে নজর রাখা জরুরি। ভারত দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপের বিশ্বস্ত মিত্র। তাই দেশটির প্রতি মালদ্বীপের নাগরিকদের অনুভূতি ইতিবাচক। এছাড়া আস্থা ও অভিন্ন মূল্যবোধের ওপর গড়ে উঠেছে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক।
ফলে মালদ্বীপে না যেতে ভারতীয় পর্যটকদের আহ্বান জানানোর বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে নেয়নি সে দেশের বাসিন্দারা। মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের খবর ছড়িয়ে পড়লে তাতে জনরোষ আরও বাড়ে। এ সময় উপমন্ত্রীদের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তারা।
এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ নাগরিক, প্রভাবশালী এবং এমনকি মালদ্বীপের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরাও।
ঠিক এমন সময় এমডিপি ভারত-মালদ্বীপ বন্ধুত্বের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে, যা চীনের সঙ্গে মুইজু সরকারের সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান প্রকাশ করে। এমডিপি প্রার্থীর বিপুল ব্যবধানে জয় ইঙ্গিত দেয় মালদ্বীপের নাগরিকরা ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন।
যদিও মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট মুইজু দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তবে এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল কূটনৈতিক বিপর্যয় রোধ করা, যা মুইজু সরকারের অভ্যন্তরীণ বিরোধও তুলে ধরে। অপেশাদার মন্তব্যের কারণে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা কেবল প্রশাসনের মধ্যে সংহতির অভাবই নয়, অভ্যন্তরীণ চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের ব্যর্থতাও তুলে ধরে।
ফলে নির্বাচনী প্রচারণায় এমডিপি নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয় যা কূটনৈতিক সূক্ষ্মতাকে অগ্রাধিকার দেয়, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বকে সম্মান করে এবং ভারতের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধনকে গুরুত্ব দেয়।
এক্ষেত্রে মুইজুর দল পিএনসি যে নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে তা বিভেদ সৃষ্টির বক্তব্য, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে।
এখন মালদ্বীপের রাজনীতির পরবর্তী অধ্যায় নির্ভর করছে কীভাবে নবনির্বাচিত নেতৃত্ব এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, পুরনো সিদ্ধান্তের পরিণতি যাচাই এবং কূটনৈতিক সূক্ষ্মতা ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার ওপর।
বলা যায়, মালদ্বীপের মেয়র নির্বাচন রাজনৈতিক জটিলতা উন্মোচন করেছে। ফলে এমডিপির বিজয় কেবল নেতৃত্বের পরিবর্তনই নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক কম্পাসের সম্ভাব্য পুনর্বিন্যাসের প্রতীকও।
Posted ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta