কক্সবাংলা ডটকম(২৭ জুলাই) :: কলম্বোর রানাসিঙ্গে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম যেন হয়ে উঠেছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কবিতা ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই—ছোটো সে তরী’। তবে প্রেমাদাসা মাঠ মোটেও ছোট নয়। ৩৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এ স্টেডিয়ামে ঠাঁই ছিল না তিল ধারণের। কিংবদন্তির পেসার লাসিথ মালিঙ্গাকে বিদায় জানানোর উপলক্ষের অংশীদার হতে চেয়েছিলেন লংকান ক্রিকেট ভক্তরা। এমনটা যে ঘটতে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আগেই। দুদিন আগেই বিক্রি হয়ে যায় বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচের সব টিকিট। প্রিয় মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচকে দারুণভাবে স্মরণীয় করে রাখলেন দুই কুশল (কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস)।
ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন পেরেরা। মাত্র ৯৯ বলে গড়া তার ১১১ রানে ভর দিয়ে ৩০০ পেরোল স্বাগতিক শ্রীলংকা। আর মেন্ডিস জেতালেন ক্রিকেটকেই। স্পোর্টসম্যানশিপের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মেন্ডিস। ক্রিকেটে অনেক সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি মানুষ ভুলে যাবে, কিন্তু মেন্ডিসের ৪৩ রানের ইনিংসটি বারবার উদাহরণ হিসেবে আসবে সামনে। পেসার রুবেল হোসেনের বল ঠিকঠাক খেলতে পারলেন না মেন্ডিস। বল জমা পড়ল উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। আবেদন করেননি বোলার রুবেল, এমনকি উইকেটরক্ষক মুশফিকও। আম্পায়ারও বিষয়টি আমলে নেননি। কিন্তু কুশল নিজেকে নিজেই যেন আউট ঘোষণা করলেন! হাঁটা ধরলেন প্যাভিলিয়নের পথে। তার ব্যাটের কানায় যে বল স্পর্শ করেছিল, এটা বুঝতে পেরেছিলেন কুশল। অনায়াসেই খেলে যেতে পারতেন। হয়তো হাফ সেঞ্চুরি এমনকি সেঞ্চুরিও পেতে পারতেন। কেননা লংকান ইনিংস শেষ হতে তখনো বাকি ছিল ১৬ ওভার। কোনো ব্যক্তিগত অর্জনের প্রলোভনে না পড়ে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যেতে বসা ‘ভদ্রলোকের খেলা’ নতুন করে ফিরিয়ে আনেন এই ২৪ বছর বয়সী।
শুক্রবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম হয়ে ওঠে মালিঙ্গাময়। এই পেসারের ছবিসংবলিত পোস্টার-প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে যায় গ্যালারি। ফ্লাডলাইটের আলো ছাপিয়ে ওঠে গ্যালারির আলো। দর্শকের অনেকেই ছিলেন মালিঙ্গার বেশে। অনেক ক্ষুদে ভক্তও অনুকরণ করেন মালিঙ্গার সাজ-বেশ। লংকান ইনিংসে সপ্তম উইকেট পতনের পর ঘটল অভূতপূর্ব ঘটনা। ব্যাটিংয়ে নামলেন মালিঙ্গা। তাকে সে দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে সেন্টার উইকেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া হলো। ৬ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকলেন মালিঙ্গা। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে লংকান স্কোরবোর্ডে উঠল ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান। লংকানরা বোলিংয়ে নামার সময় অজেয় মালিঙ্গাকে দেয়া হলো ‘গার্ড অব অনার’। তার ৬ রানে অজেয় থাকাটাও যেন হয়ে থাকল প্রতীকী। মালিঙ্গা চ্যাম্পিয়ন। একজন চ্যাম্পিয়ন সবসময়ই ‘অজেয়’।
টস জয় দিয়ে শুরু করেন লংকান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। চমত্কার ব্যাটিং উইকেটে আগে ব্যাট করতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি স্বাগতিক অধিনায়ক। যদিও ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল টাইগার শিবির। উইকেটে জমে ওঠার আগেই বিদায় নেন ওপেনার আভিষকা ফার্নান্দো (৭)। তাকে শিকারে পরিণত করেন দেশ থেকে উড়ে যাওয়া শফিউল ইসলাম। ১৪ দলের স্কোয়াডে দলে না থাকলেও এই পেসারকে ঢাকা থেকে উড়িয়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট। প্রথম উইকেট পাওয়ার স্বস্তি দ্রুতই মিলিয়ে যায় সফরকারীদের। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৭৩ বলের জুটিতে ৯৭ রান যোগ করেন পেরেরা ও করুনারত্নে (৩৬)। উইকেট পতন হলেও এ রান উত্সব আর থামেনি। ব্যাট হাতে নৈপুণ্য দেখান মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (৪৮), থিরিমান্নে (২৫), ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও (১৮)।
বিদায় শেষে মালিঙ্গা বলেন, ‘আমি মনে করি অবসরের এটাই সঠিক সময়। শ্রীলংকার হয়ে গত ১৫ বছর খেলেছি। লংকান দর্শকের সামনে খেলাটা সম্মান ও গৌরবের ছিল। বিদায়ের এটাই সময়, কেননা আমাদের (শ্রীলংকা) লক্ষ্য যে ২০২৩ বিশ্বকাপ।’
Posted ১০:২৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta