কক্সবংলা ডটকম :: মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা সরকারের অনুগত বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির তিন সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠনের জোট- ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’।
গত রবিবার রাতে জোটের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা খুব শিগগিরই আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করবেন।
২০১৯ সালের জুনে আত্মপ্রকাশ করা এই জোটের তিন সদস্য হলো- আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।
রবিবার রাতে তাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে ঢাকাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘নারিনজারা নিউজ’।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত আরাকানের কিছু গণতন্ত্রপন্থি লোকজন ২০০১ সালে এই সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বিবৃতির বরাত দিয়ে ‘নারিনজারা নিউজ’ জানায়, রাখাইনে সামরিক বাহিনীর ছোট-বড় যত ক্যাম্প আছে, প্রায় সবগুলোই আরাকান আর্মির দখলে।
এসব ক্যাম্পের জান্তা অনুগতরা শিগগিরই আত্মসমর্পণ করবেন। এর বাইরে যেসব ক্যাম্প এখনো আত্মসমর্পণ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তে গোলাগুলির যে শব্দ আসছিল, তা অনেকটাই কমে গেছে। গতকাল সকালের পর থেকে গুলির শব্দ ‘তেমন শোনাই যায়নি’।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে গত মাস থেকে লড়াই চলছে।
এ কারণে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এবং কক্সবাজারের উখিয়ার রহমতের বিল ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাচ্ছিলেন স্থানীয়রা।
টেকনাফ বাদে বাকি সীমান্ত এলাকাসমূহে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, গত রবিবার সকালে শাহ পরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর রাতে এবং গতকাল সকালে কিছু গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর থেকে গুলির শব্দ তেমন শোনা যায়নি।
টেকনাফের সেন্টমার্টিনেও গোলাগুলির শব্দ কম শোনা গেছে। স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা দশ থেকে পনেরোবার গুলির মৃদু শব্দ শুনেছেন।
রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল মংডুর মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর কমান্ডাররা। ওই বৈঠকে সেনা কমান্ডাররা মুসলিম নেতাদের প্রস্তাব দিয়েছেন, যদি তারা জান্তা বাহিনীর হয়ে কাজ করেন; তাহলে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত এক মুসলিম নেতার বরাতে সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মংডুর ময়ো থু গি গ্রামের ৫নং বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বৈঠকটি হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জান্তার ডিভিশন কমান্ডার থুরেন তুন এবং বিভাগীয় প্রশাসক নায়ো ও। তাদের আয়োজিত এ বৈঠকে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ওই মুসলিম নেতা নারিনজারা নিউজকে বলেছেন, বৈঠকে কমান্ডার থারুন তুন আমাদের বলেছেন, রাখাইনের মানুষের (বৌদ্ধ আরাকান আর্মি) কারণে আমরা মুসলিমরা ভুগছি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অস্ত্র তুলে নেওয়া উচিত। এমনকি এই কমান্ডার আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, যদি আমাদের গ্রামের কাছে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সেনারা আমাদের গ্রামে হামলা চালাবে না। তারা শুধুমাত্র রাখাইনের গ্রামে হামলা চালাবে। এজন্য আমরা যেন জান্তার হয়ে কাজ করি।
তবে বৈঠকে উপস্থিত মুসলিম নেতাদের একটি অংশ বলেছেন, যদি তাদের সত্যিকার অর্থে মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়; তাহলে তারা এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবেন। তবে বেশিরভাগ নেতা এতে রাজি হননি।
ওই নেতা নারিনজারাকে আরও বলেছেন, কিছু নেতা আমাদের সত্যিকার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে রাখাইনের মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বেশিরভাগ নেতা। তা সত্ত্বেও সেনা কমান্ডার তাদের আহ্বান জানিয়েছেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে।
নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জান্তার কমান্ডাররা। সেখানেও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে মুসলিমদের উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।
এদিকে রাখাইনের মুসলিমদের হাতে জান্তা বাহিনীর অস্ত্র তুলে দেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়টি এমন সময় সামনে এলো— যখন জানা যাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জান্তাকে হটিয়ে পুরো রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেবে বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
Posted ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta