শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মিয়ানমারে সঙ্ঘাতের পথে সু চি’র এনএলডি ও সামরিক বাহিনী

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯
161 ভিউ
মিয়ানমারে সঙ্ঘাতের পথে সু চি’র এনএলডি ও সামরিক বাহিনী

কক্সবাংলা ডটকম(১৮ জুলাই) :: মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারকে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাতময় অবস্থানে ঠেলে দেয়ার আশঙ্কা নিয়েই পার্লামেন্টের একটি কমিটি চলতি সপ্তাহে দেশটির সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।

প্রস্তাবে সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধানে ৩,৭০০-এর বেশি পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিশালী রাজনৈতিক ভূমিকা হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ২০১৫ সালে বিপুল নির্বাচনী বিজয় লাভ করে। তারা ওই সময় উচ্চকক্ষের ১৬৮টি আসনের মধ্যে ১৩৫টি, নিম্নকক্ষের ৩২৩টির মধ্যে ২৫৫টিতে জয়ী হয়।

এ ধরনের বিপুল জয়ের পরও সামরিক বাহিনী সংবিধানে তাদের জন্য থাকা বরাদ্দকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি কক্ষের ২৫ ভাগ আসন নিজেদের করে নেয়।

এনএলডি নির্বাচনের সময় সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছিল। ২০২০ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি হবে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়।

এনএলডি অনেক দিন ধরেই সংবিধানের ৪৩৬ ও ৫৯ (চ) ধারা পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলে আসছিল। ৪৩৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন করতে হলে ৭৫ ভাগ এমপির সমর্থন প্রয়োজন। সামরিক বাহিনীর ২৫ ভাগ সদস্য থাকায় ৭৫ ভাগ এমপির সমর্থন পাওয়া কঠিন বিষয়। ওই ধারায় সামরিক বাহিনীকে কার্যত ভেটো শক্তি দেয়া হয়েছে।

আর ৫৯(চ) ধারায় বলা হয়েছে, দেশের প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই মিয়ানমারে জন্মগ্রহণ করতে হবে এবং তাদের বিদেশী স্বামী/স্ত্রী বা সন্তান থাকতে পারবে না।

দৃশ্যত অং সান সু চি’কে প্রেসিডেন্ট হতে না দেয়ার লক্ষ্যেই সংবিধানে এই ধারা যুক্ত করা হয়েছে। মিয়ানমারের এই নেত্রীর দুই ছেলে ব্রিটিশ নাগরিক, আরেকজন আমেরিকার। সু চির ব্রিটিশ স্বামী শিক্ষাবিদ মাইকেল আরিস ১৯৯৯ সালে পরলোকগমন করেছেন।

এনএলডি এর ফলে সু চির জন্য স্টেট কাউন্সিল পদ নির্ধারণ করে। এতে করে দেশের রাষ্ট্রপতির পদটি আলংকারিকে পরিণত হয়েছে।

স্টেট কাউন্সিলর পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল সু চির আইনজীবী কো নির পরামর্শে। কো নি চেয়েছিলেন দ্রুত সংবিধান সংশোধন করতে।

কো নি ২০১৭ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন। ফলে সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে এনএলডিকে সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির বিরুদ্ধে নামতে হবে।

নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এনএলডির ইয়াঙ্গুন ও গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোতে সমর্থন অব্যাহত রাখলেও জাতিগত সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে তাদের সমর্থন হ্রাস পেয়েছে। সরকারি উদ্যোগ তাদের জন্য কল্যাণকর হয়নি বলেই তারা মনে করছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধন প্রয়াস কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

পার্লামেন্টে যদি সংশোধনী প্রস্তাবগুলো পাসও হয়, তবুও এ নিয়ে গণভোট হতে হবে। অর্ধেক ভোটার অনুমোদন করলেই কেবল সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কার্যকর করা সম্ভব হবে। কিন্তু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী শক্তিশালী অবস্থানে থাকার প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষভাবে গণভোট আয়োজন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

মিয়ানমারে ২০০৮ সালে জেনারেলরা যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, তাতে তাদের স্বার্থ ব্যাপকভাবে সুরক্ষিত রাখা হয়েছিল। এখন তাদের স্বার্থ খর্ব করা হলে তারা স্বাভাবিকভাবেই তাতে বাধা দেবে। এতে করে সামরিক বাহিনীর সাথে এনএলডির মুখোমুখি সঙ্ঘাত সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাপানি পত্রিকা আসাহি শিমবুনের সাথে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মিয়ানমারের সামরিক প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং বলেছিলেন যে নীতিগতভাবে আমরা সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংবিধানের এমন কোনো পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়, যা সংবিধানের মূল বিষয়টিই ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তিনি এর মাধ্যমে রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে সামরিক বাহিনীর ভোগ করে আসা ক্ষমতার কথাই বলেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, সামরিক বাহিনীর স্বার্থ খর্ব করা কোনো কিছু তারা মেনে নেবেন না।

অর্থাৎ সামরিক বাহিনী তাদের হাতে থাকা ক্ষমতা হ্রাস করে, এমন কোনো নির্বাচন বা গণতান্ত্রিক সরকার মেনে নেবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সম্মানহানি ঘটেছে :  মিয়ানমার সেনাবাহিনী

২০১৮ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কুচকাওয়াজে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং

মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং ও আরো তিন সেনা কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন।

মঙ্গলবার রাতে জারি করা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্যরা হলেন ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই কর্মকর্তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যদি তাদের ব্যক্তি মালিকানায় কোন সম্পদ থাকে সেগুলো সব জব্দ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও এর সংশ্লিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে পারবে না তারা।

নিষেধাজ্ঞার ওই ঘোষণায় মিয়ানমারের পরিবর্তে ‘বার্মা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও বলেন, তারাই প্রথম কোন দেশ যে কিনা বার্মিজ সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে হত্যা ও সহিংসতার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দুই বছর আগের সেই সহিংসতার যথেষ্ট প্রমাণও রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় সেনাপ্রধান মিন অং লায়িংসহ অন্য কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে৷

রোহিঙ্গাদের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সৈন্যদের মুক্তির বিষয়টিও বিবৃতিতে উঠে এসেছে৷ সেনাপ্রধান মিন অং লায়িং-এর নির্দেশে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়৷ এই ঘটনা ‘সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাবের একটি গুরুতর উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

এই নিষেধাজ্ঞা পুরো সামরিক বাহিনীর উপর একটি আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র৷

তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান, যা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত বিভিন্ন আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নয়, এটা পুরো সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা৷

তবে তিনি ইরাবতী পত্রিকাকে বলেন, মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন না। তাদের সেখানে যাওয়ার দরকারও নেই। ফলে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে কিনা সেই প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু এটা সেনাবাহিনীর সম্মানহানি করেছে।

জ মিন তুন বলেন, বিভিন্ন দেশ বা যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করেছি এবং আমরা যা করছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তার প্রতি সম্মান দেখানো।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আয়োজনে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সের প্রথম দিনে যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘোষণা দেয়। সম্মেলনে মাইক পম্পেও ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহণ করেন।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে অচলাবস্থা দেখা দেয়ায় গত মাসে কংগ্রেসের এক শুনানিতে এশিয়া-প্যাসিফিক সাব কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস সদস্য ব্রাডলি শেরম্যান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব করেন।

থাইনিয়াং ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক উ থেইন ও বলেন যে, এখন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কঠোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করেছে মিয়ানমার।

তিনি বলেন, ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তার প্রভাব হবে সীমিত।

পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখলেও দেশটি চীনের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে আসছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সম্প্রতি ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান চালানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক ধাপে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছে এই রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের মিশন এর আগে জানিয়েছে যে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা বন্ধে যদি আরও আগে পদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে এই বার্মিজ সেনাদের দুই বছর আগেই দোষী সাব্যস্ত করা যেত।

161 ভিউ

Posted ৭:১০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com