কক্সবাংলা ডটকম(১৩ সেপ্টেম্বর) :: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে আরোপিত শুল্ক এড়াতে ‘মেড ইন চায়না’ লেবেল ঝেড়ে ফেলতে চাইছে চীনে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলো। এ কারণে ভিয়েতনাম, সার্বিয়া ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোয় উৎপাদন কার্যক্রম স্থানান্তর করছে এসব কোম্পানি।
চলতি বছরের গ্রীষ্মে চীনের ৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করার পর বেইজিংও পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর পর থেকেই বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপদে পড়েছে চীনের কোম্পানিগুলো। কারণ চীনে তৈরি যেকোনো ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে রফতানি করতে হলে তাদের বিপুল শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
শুল্ক থেকে বাঁচতে বাইক থেকে শুরু করে টায়ার, প্লাস্টিক ও বস্ত্র সব ধরনের পণ্যের কোম্পানিগুলো তাদের শিল্প-কারখানার কার্যক্রম এখন চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে বলে সরকারি তথ্যে দেখা গেছে।
শেনজেনে নিবন্ধিত বাইকের যন্ত্রাংশ নির্মাতা কোম্পানি এইচওয়ান করপোরেশন গত মাসে বিনিয়োগকারীদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, শুল্কের কারণে উৎপাদন কার্যক্রম ভিয়েতনামে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগস্টে ই-বাইকে শুল্ক আরোপের পর বাইসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশের ওপরও নতুন শুল্কারোপের পরিকল্পনা চলছে। এ অবস্থায় শুল্কের প্রভাব ‘হ্রাস ও কৌশলে এড়িয়ে’ যাওয়াই শ্রেয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, নতুন করে চীনের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শিগগিরই শুল্ক কার্যকর হবে। বাণিজ্য বিষয়ে তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পানজিভার সাপ্লাই চেইন এক্সপার্ট ক্রিস্টোফার রজারস বলেন, ‘নতুন শুল্কের কারণে কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের সাপ্লাই চেইনের কার্যক্রম অবশ্যই পর্যালোচনা করে দেখবে। সত্যিকার অর্থে, এসব কোম্পানি বর্তমানের তুলনায় ২৫ শতাংশ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।’
ক্রমবর্ধমান শ্রম ব্যয় এবং পরিবেশসংশ্লিষ্ট সুরক্ষা ব্যয়ের কারণে সম্প্রতি শিল্প-কারখানা কার্যক্রমের দিক থেকে চীন তার আবেদন হারিয়ে ফেলেছে, ফলে সাপ্লাই চেইনগুলো এরই মধ্যে চীনের বাইরে থেকে তাদের রসদ জোগাড় শুরু করে দিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক এই আগুনে আরো ঘি ঢেলেছে।
চায়না সোসাইটি অব ডব্লিউটিও স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক চুই ফ্যান বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিবাদ আন্তর্জাতিক ভ্যালু চেইনের আকৃতি পরিবর্তন করে দিচ্ছে। শ্রমঘন শিল্পের কাজ দেশের বাইরে স্থানান্তরিত হলে বেকারত্বের সমস্যা বাড়বে এবং এ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।’
শুধু স্থানীয় কোম্পানিগুলোই নয়, চীন থেকে কার্যক্রম সরিয়ে নিচ্ছে এমন বিদেশী কোম্পানির তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। এর মধ্যে খেলনা প্রস্তুতকারী কোম্পানি অলিম্পাস, সু ব্র্যান্ড স্টিভ ম্যাডেনের নাম উল্লেখযোগ্য, যা বেইজিংকে রীতিমতো শঙ্কিত করে তুলেছে।
চীনের শিল্প-কারখানার মধ্যে ঝেজিয়াং হাইলাইড নিউ মেটারিয়াল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুতা, টায়ার কর্ড ফ্যাব্রিক ও প্রিন্টিং সামগ্রীর সিংহভাগ তাদের ঝেজিয়াং প্রদেশের কারখানা থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি দেশে সরিয়ে নিয়েছে।
গত মাসে কোম্পানিটির নির্বাহী কর্মকর্তারা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কোম্পানির সব উৎপাদন কার্যক্রমই চীনে সম্পন্ন হয়। অ্যান্টি-ডাম্পিং মামলা এবং শুল্ক বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়াতে আমরা ভিয়েতনামে কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট কারখানাটিতে সাড়ে ১৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করা হচ্ছে উল্লেখ করে জানান, ‘আমরা এর নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রত্যাশা করছি এবং আশা করছি, ভবিষ্যতে মার্কিন বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদন এখান থেকেই সম্পন্ন হবে।’
শুল্কের ভয়ে অন্য দেশে কার্যক্রম স্থানান্তর করেছে, এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি বস্ত্র কোম্পানি মিয়ানমারে চলে গেছে। এছাড়া একটি ম্যাট্রেস কোম্পানি থাইল্যান্ডে কারখানা খুলতে যাচ্ছে এবং একটি ইলেকট্রনিক মোটর নির্মাতা কোম্পানি উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মেক্সিকোর একটি কারখানা অধিগ্রহণ করেছে। টায়ার নির্মাতা কোম্পানি লিংলং টায়ার সার্বিয়ায় ৯৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একটি কারখানা নির্মাণ করছে।
চীনের উঠতি শিল্প ই-বাইক ইন্ডাস্ট্রি শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (ইইউ) শুল্কের মুখে পড়েছে। জুলাইয়ে চীনের নির্মিত ই-বাইকে ২২-৮৪ শতাংশ পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ইইউ। অভিযোগ করা হয়, চীনা কোম্পানিগুলো সস্তা অ্যালুমিনিয়াম ও রাষ্ট্রের অন্যান্য ভর্তুকি সুবিধা পাচ্ছে। চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর রাষ্ট্রের এ পৃষ্ঠপোষকতা ট্রাম্পের শুল্কারোপের অন্যতম কারণ।
এএফপি
Posted ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta