কক্সবাংলা ডটকম(১৭ এপ্রিল) :: যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করোনার পরীক্ষামূলক ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ গ্রহণকারী রোগীরা দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। বেশিরভাগ আক্রান্তের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদ ওয়েবসাইট স্টাট নিউজ এসব তথ্য জানিয়েছে।
‘রেমডিসিভির’ নিয়ে গবেষণাকারী দলের সদস্যদের মধ্যকার অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ওয়েবসাইটটি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ওষুধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্যকরী ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথও বেশ কয়েকটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এরই একটি হলো রেমডেসিভির ওষুধ। গিলিয়াড সায়েন্সেস-এর তৈরি এ ওষুধটি ইবোলার বিরুদ্ধে পরীক্ষা করা হলেও এতে সফলতা এসেছিলো খুবই কম। তবে বিভিন্ন পশুর শরীরে চালানো বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে কোভিড-১৯, সার্স ও মার্সসহ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এ ওষুধ কার্যকরী।
ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, রেমডেসিভির ওষুধটির সম্ভাবনা আছে।
এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ৪০০০ করোনা আক্রান্তের মধ্যে রেমডেসিভিরের পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে ২৪০০ গুরুতর ও ১৬০০ কম উপসর্গের আক্রান্ত রয়েছেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যাথলিন মুলেন এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
গত সপ্তাহে তিনি ও তার সহকর্মীদের মধ্যকার একটি আলাপের ভিডিও বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে স্টাট নিউজ।
ভিডিওতে মুলেন বলেছেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ রোগীর অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের বেশিরভাগই ছয়দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারছি ১০ দিন ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। মুলেন আরও বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো খবর হলো আমাদের বেশিরভাগ রোগী এরইমধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে, এটা খুব দারুণ খবর। আমাদের ওষুধ গ্রহণকারী মাত্র দুইজন রোগী মারা গেছে।’
এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য সিএনএন-এর পক্ষ থেকে মুলেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পরই তারা এ নিয়ে কথা বলবে।
গিলিয়াড জানিয়েছে, এ মাসের শেষ নাগাদ করোনার চিকিৎসায় রেমডেসিভির-এর পরীক্ষার আনুষ্ঠানিক ফল পাওয়া যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষা শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রাণীর উপরে কোভিড-১৯ টিকা প্রয়োগ করে আশার আলো দেখে বিজ্ঞানীরা মানবদেহে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগে চীন দুটি টিকা পরীক্ষার অনুমতি দেয়। খবর গার্ডিয়ান ও ডেইলি মেইলের।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ১৮-৫৫ বছর বয়সী ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবী আগামী সপ্তাহে টিকা নিতে সম্মত হয়েছেন। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা এই টিকার ব্যাপারে খুবই আশাবাদী। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই টিকা নিয়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণঘাতী ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পাবে বলে তাদের বিশ্বাস।
অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জির শরীরে সার্স কোভ-২ ভাইরাস ইঞ্জেকশন দিয়ে শিম্পাঞ্জির শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করেন। এই অ্যান্টিবডিই টিকা হিসেবে মানুষের শরীরে দিলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হবে বলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল নিশ্চিত হয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রাণীদেহে এই টিকা ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য ফল মিলেছে। এবারে মানবদেহে পরীক্ষার পর এই টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দল ভ্যাকসিনটির সাফল্যের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০টি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে কাজ চলছে। অক্সফোর্ডের গবেষণা তার মধ্যে একটি।
গত সপ্তাহে অক্সফোর্ডের এই গবেষকদলের পক্ষে ভ্যাক্সিনোলজিস্ট সারা গিলবার্ট দাবি করেছিলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা করোনাভাইরাসের টিকা আনতে সমর্থ হবেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক লিপস্টিচ জানান, মহামারির বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে টিকাটি দ্রুত বিশ্বের মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৃতীয় ধাপের সমীক্ষা কিছুটা কম করা যেতে পারে।
Posted ১:০১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta