কক্সবাংলা ডটকম(১০ নভেম্বর) :: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, কয়েক মাস ধরে সেদিকেই ছিল সর্বোচ্চ মনোযোগ। এ দ্বন্দ্ব এশিয়ার কতগুলো দেশকে বিপদে ফেলতে পারে, তাও ছিল আলোচনায়। তবে এর চেয়েও বড় ঝুঁকি হচ্ছে, বাণিজ্যযুদ্ধের ডামাডোলে চীনে এশিয়ার অন্যান্য দেশের পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকেও সতর্ক করে বলা হয়েছে, দেশটির অর্থনীতি নিম্নমুখী হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। খবর সিএনবিসি।
এশিয়ার দেশগুলোর জন্য প্রতিবেশী চীনের ভোগ ব্যয় ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়া ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান লুইস কুইস বলেন, ‘চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এশিয়ার দেশগুলোর রফতানি সরবরাহ শৃঙ্খলের মাধ্যমে অপ্রত্যক্ষ রফতানির তুলনায় বাড়ছে। চীনের নিজস্ব অর্থনীতিতে এশিয়ার এ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রফতানির মাধ্যমেই বোঝা যায় এসব দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব কতটা পড়তে যাচ্ছে।’
তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে চীনের নীতিমালাগত পদক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক এড়াতে কিছু কোম্পানি তাদের উৎপাদন কার্যক্রম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সরিয়ে নেয়ার কারণে বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সিটিগ্রুপের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়, উদীয়মান বাজারগুলোর প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনার ক্ষেত্রে চীনের অর্থনীতি, ডলারের অব্যাহত শক্তিশালী অবস্থা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর চাপ— এ তিন ‘প্রধান ঝুঁকি’ বিরাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যাংকটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ চীনের আউটলুক নিয়ে ইতিবাচক আভাস দিলেও আমরা ধারণা করছি, পুরো উদীয়মান বাজার আগের তুলনায় কম গতিশীল থাকবে।’
বিএনপি পারিবাসের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ চি লু এবং স্টিভেন ফ্রিডম্যান বলেন, ‘প্রচলিত জ্ঞান’ অনুযায়ী বলা যায় শুল্কযুদ্ধ উদীয়মান বাজারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বেইজিংয়ের অভ্যন্তরীণ প্রণোদনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি উেস পরিবর্তন— এ দুয়ের সংমিশ্রণে এসব দেশ থেকে রফতানি আপাতত বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে না।
তবে অনেক অর্থনীতিবিদের কাছেই পরিস্থিতি পুরোপুরি নেতিবাচক নয়। অনেকেই মনে করছেন, বাণিজ্যযুদ্ধের এ সময়টিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জুতা, খেলনা ও পোশাকের মতো ‘কম দামি’ পণ্যের ক্রয়াদেশ ভিয়েতনাম, ভারত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোয় বাড়তে পারে।
এছাড়া ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির মতো দামি পণ্যগুলো উত্তর কোরিয়া থেকে কিনতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনীতিবিদরা আরো বলেন, ‘বাণিজ্যে ভিন্নমুখিতা ও চীনের চাহিদা এ দুয়ের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব কিছুটা কম অনুভূত হতে পারে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে মার্কিন কোম্পানিগুলোও উদ্বিগ্ন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ভোক্তাপণ্য কোম্পানি প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের (পিঅ্যান্ডজি) সিইও সতর্ক করে বলেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ ভোক্তা আচরণ ও তাদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। পিঅ্যান্ডজির সিইও ডেভিড টেইলর বলেন, ‘এটি ভালো কিছু নয়। আমাদের কোম্পানি মুক্ত ও উদার বাণিজ্যে বিশ্বাস করে।’
এদিকে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) তাদের অতি সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, বৈশ্বিক আর্থিক মন্দাকালীন সময়ের পর কোনো প্রান্তিকে এটি জিডিপির সবচেয়ে দুর্বলতর প্রবৃদ্ধি।
পিবিওসির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, তুলনামূলক ছোট ও প্রাইভেট কোম্পানিগুলোকে ঋণপ্রদান বাড়াতে তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দিচ্ছে। এর মাত্র একদিন আগেই চীনের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান গো শুকিং জানান, চীনের ব্যাংকিং খাত থেকে সরবরাহ করা ঋণের মাত্র ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাত পেয়ে থাকে। অথচ দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনে এ খাতের অবদান ৬০ শতাংশ।
Posted ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta