কক্সবাংলা ডটকম(১১ নভেম্বর) :: মাস কয়েক আগে কর্ণাটকের এক দুর্গের তলা থেকে উদ্ধার হয় কিছু যুদ্ধাস্ত্র। অন্তত হাজার খানেক অস্ত্র বেরিয়ে এসেছিল মাটির তলা থেকে। যেগুলি অষ্টাদশ শতকের কোনও যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। তবে যেমন-তেমন অস্ত্র নয়, সেগুলি আসলে লোহার মোড়কে থাকা রকেট। আর এসব অস্ত্র টিপু সুলতানের আমলের। ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধকৌশলের পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সেই মিসাইল রকেট ছুঁড়ে দিতেন টিপু সুলতান ও মাইসোরের আর্মি। যে ফর্মুলা আজ ব্যবহৃত হয় আধুনিক অস্ত্রে। আধুনিক অস্ত্র প্রযুক্তিতে টিপু সুলতানের সেই অবদান মনে রেখেছে খাস আমেরিকাও। তাই নাসার একটি অফিসের দেওয়ালে শোভা পায় টিপু সুলতানের সেই ছবি।
নাসার দেওয়ালে ভারতের এই সুলতানের ছবির কথা উল্লেখ করেছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আব্দুল কালাম আজাদ। এক বিশেষ ট্রেনিং প্রোগ্রামের জন্য তিনি গিয়েছিলেন নাসায়। সব শেষে তিনি যান ইস্ট কোস্ট, ভার্জিনিয়ার ওয়ালপ আইল্যান্ডে। সেখানে রয়েছে নাসার ‘ওয়ালপ ফ্লাইট ফেসিলিটি’। এই সেন্টারেই হয় নাসার সাউন্ডিং রকেট প্রোগ্রাম।
নাসার ওই সেন্টারের দেওয়ালে একটি ছবি চোখে পড়ে তাঁর। একটি আঁকা ছবি। যেখানে কয়েকজন সেনা রকেট লঞ্চ করছে। কিন্তু এটা দেখেই অবাক হয়েছিলেন যে যারা রকেট লঞ্চ করছে তারা কালো চামড়ার মানুষ। বেশ কয়েকদিন ধরে ছবিটি তাঁকে আকর্ষণ করছিল। একদিন ছবিটির কাছে যান সেটি খুঁটিয়ে দেখতে। ভালভাবে দেখেন, ছবিটিতে আঁকা রয়েছে, ব্রিটিশ আর্মির সঙ্গে লড়াই করছেন টিপু সুলতান। আব্দুল কালাম লিখেছেন, ”যে ঘটনার কথা টিপুর নিদেশও ভুলে গিয়েছে।” অথচ নাসায় রকেটের উদ্ভাবক হিসেবে সম্মানিত হচ্ছেন এক ভারতীয়।
পিতা হায়দার আলির মৃত্যুর পর মহীশুরের মসনদে বলেন টিপু সুলতান৷ ব্রিটিশদের সঙ্গে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করে লড়েছিলেন তিনি বলে ইতিহাস জানায়৷ তিনিই প্রথম সুলতান, যিনি সেনাকে অত্যাধুনিক সমর কৌশল শিখিয়েছিলেন৷ অষ্টাদশ শতকেই প্রথম ব্যবহার করেছিলেন রকেট৷ এই রকেটগুলি দিয়ে প্রায় ২ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করা যায় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ রকেটের ভিতরে থাকত ধারাল তলোয়ার। সেটাই উড়ে গিয়ে আঘাত করতে পারত শত্রুপক্ষকে। এই অস্ত্র মাইসোরিয়ান রকেট নামেও পরিচিত।
২০০২ সালে এই বিদানুরু দুর্গেই খোঁড়াখুঁড়ির সময় ১৬০টি অব্যবহৃত মরচে পড়া রকেট পান প্রত্নতাত্ত্বিকরা। পাঁচ বছর পর তাঁরা পরীক্ষায় জানতে পারেন সেগুলি টিপু সুলতানের আমলের। এরপরই ওই এলাকায় আরও অস্ত্র পোঁতা থাকতে পারে, এই সন্দেহে খননকার্য চালাতে শুরু করে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং শ্রমিকদের ১৫ জনের একটি দল।
খোঁড়াখুঁড়ির সময় ওই শুকনো কুয়োর মাটি থেকে গানপাউডার, পটাশিয়াম নাইট্রেট, কাঠকয়লা এবং ম্যাগনেশিয়াম পাউডারের গন্ধ পাওয়া যায়৷ তারপরেই তাঁরা নিশ্চিত হন যে সেখানে যুদ্ধাস্ত্র পোঁতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১৭৮০ সালে দ্বিতীয় অ্যাংলো মহীশূর যুদ্ধের সময় এই রকেটগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল৷ ব্রিটিশদের কাছে টিপু সুলতানের এই সমর কৌশল বড়সড় চ্যালেঞ্জ ছিল৷
Posted ৬:৩১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta