কক্সবাংলা ডটকম(২১ এপ্রিল) :: যুক্তরাজ্যের বাকিংহাম প্রাসাদে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাসাদের উইন্ডসোর ক্যাসেলে শুক্রবার এ আলোচনায় উপদেষ্টা আর ব্যক্তিগত সহকারীদের ছাড়াই উপস্থিত হয়েছিলেন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।
এ সময় তারা বিগত দিনের সাফল্য ও আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বৈশ্বিক ও কমনওয়েলথের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এখানেই পরবর্তী কমনওয়েলথ প্রধান হিসেবে প্রিন্স চার্লসের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন কমনওয়েলথ নেতারা। এর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছে সংস্থাটির এবারের শীর্ষ সম্মেলনের।
এ ছাড়া শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে বাকিংহাম প্রাসাদে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এবারই শেষবারের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নিলেন রানী এলিজাবেথ।
লন্ডনে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া শীর্ষ সম্মেলন শুক্রবার শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৩টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেন এ সম্মেলনে। এবারে সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য গড়ব একই ভবিষ্যৎ’।
বৃহস্পতিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে রানী এলিজাবেথ কমনওয়েলথের প্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করার পর ব্রিটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসকে এ পদে বসানো হচ্ছে।
জানা গেছে, রানী এলিজাবেথ কমনওয়েলথ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পর তার পরবর্তী উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে উইন্ডসোর ক্যাসেলে কমনওয়েলথ নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। কমনওয়েলথ সনদ অনুসারে কমনওয়েলথ প্রধানের পদটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রিন্স চার্লস পাবেন না। সদস্যদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হয়।
বৈঠকে কোনো কোনো নেতা এমন প্রস্তাবও দেন যে, পদটি ৫৩টি সদস্য দেশের মধ্যে আবর্তন করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। তবে শেষ পর্যন্ত ৬৯ বছর বয়সী প্রিন্স চার্লসের ব্যাপারেই ঐকমত্য হয়।
জানা গেছে, ব্রিটিশ ও কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী চার্লসকে সমর্থন দেন। কমনওয়েলথ প্রধানের পদটি আলঙ্কারিক। সর্বোচ্চ পাঁচবার একজন এ পদে থাকতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, ‘শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রাতে বাকিংহাম প্যালেসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।’
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর অন্যান্য সরকারপ্রধান ও নেতার সঙ্গে রানীর দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে উইন্ডসোর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস হলে বিভিন্ন রিট্রিট সেশনে যোগ দেন।
শুক্রবার কমনওয়েলথ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেন শেখ হাসিনা। শনিবার তিনি রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে সরকারপ্রধানদের সংবর্ধনা এবং রানী এলিজাবেথের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক সহযোগিতার অন্যতম পুরনো সংস্থা কমনওয়েলথ। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনে থাকা দেশগুলোই এই সংস্থার সদস্য।
গত সোমবার থেকে বিভিন্ন ফোরামে বাণিজ্য, নারী, তারুণ্য ও নাগরিক সমাজকে থিম হিসেবে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সপ্তাহের শুরুতে নারী ফোরামে ‘ক্ষমতায়নে শিক্ষা’ শীর্ষক এক সেশনে ভাষণ দেন। ওই ভাষণে নারী শিক্ষায় নিজ দেশের অর্জন তুলে ধরেন তিনি। সেতুবন্ধ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় সব অগ্রগতি অর্জিত হলেও সবার জন্য শিক্ষা আমাদের মূল লক্ষ্য হিসেবে বজায় থাকবে।’
শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ৩০ মিনিটের এক বৈঠকে অংশ নেন। এতে সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে দুই নেতা বিস্তারিত আলোচনা করেন। ওই আলোচনায় উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে দুই নেতা বিশেষভাবে আলোকপাত করেন।
শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর সংস্থা কমনওয়েলথের সচিবালয়সহ এর বিভিন্ন কার্যক্রম ও ভূমিকার আমূল সংস্কারের প্রস্তাব দেন। সদস্য দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে এই সংস্কার অপরিহার্য বলে মনে করেন তিনি।
Posted ২:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta