নীতিশ বড়–য়া,রামু(২২ নভেম্বর) :: রামু উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের প্রয়াত অধ্যক্ষ প্রজ্ঞামিত্র মহাথের’র ১২তম মৃত্যু বার্ষিকী ও দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসবে বাংলাদেশের বৌদ্ধদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভুষিত, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার উপ-সংঘরাজ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেছেন, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মধ্যে একতা যতকাল থাকবে ততকাল পর্যন্ত এলাকায় সুখ-শান্তি ও আদর্শ বিরাজ করবে।
গৌতম বুদ্ধের অহিংস নীতি মেনে চলে হিংসা ত্যাগ করে অহিংসার মাধ্যমে একতা ও আদর্শকে রক্ষা করতে হবে। পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেছেন, প্রয়াত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের আজীবন সকল মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখে ছিলেন।
দুর্গম এলাকায় গিয়ে তিনি ধর্ম প্রচার করতেন। তাঁর শিষ্য ও গ্রামবাসি প্রতি বছর আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে পুজা করে মহত্বের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। এ রকম যারা গুরুপুজা করে তারাও সম্মানিত হয়। তিনি বিশ্বের সকল প্রাণীর মঙ্গল ও বাংলাদেশ সরকারের সমৃদ্ধি কামনা ও সকল জীবের প্রতি আশির্বাদ প্রদান করেন।
বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের সকালের অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিকালের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চন্দনাইশ উপজেলার সুচিয়া সুখানন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ অতুলানন্দ মহাথের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেছেন,‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ প্রতিপাদ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। অনুরূপ ভাবে আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি’র নেতৃত্বে কক্সবাজারের সদর ও রামু উপজেলা সম্প্রীতির বন্ধনে উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
উন্নয়ন ও সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে আগামীতেও সাইমুম সরওয়ার কমলকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। তিনি বলেন, তাঁর দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে বিহার, মন্দির ও মসজিদের উন্নয়নে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। আগামীতে ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তিনি ভুমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম আরো বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পবিত্র ঈদুল ফিতরে কক্সবাজারের মুসলমানদের জন্য যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপহার দিয়েছেন, তেমনি হিন্দুদের সারদীয় দুর্গোৎসবে ও বৌদ্ধদের প্রবারণা পুর্ণিমায় শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেছেন। যা ছিল বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রামু উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ লুৎফুর রহমান।
কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পুণ্যানুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন, প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ সারমিত্র মহাথের। প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন, চকরিয়া মানিকপুর নব বিজয়ানন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞামিত্র থের।
এতে ধর্মদেশনা করেন, রামু বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ও একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধমুর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুনাশ্রী মহাথের, হাজারীকুল বোধিরতœ বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ সৌরবোধি ভিক্ষু, স্মরণপ্রিয় থের, জ্যোতিমিত্র ভিক্ষু প্রমুখ ভিক্ষুসংঘ। করুনাপ্রিয় ভিক্ষু’র পবিত্র ত্রি-পিটক থেকে মঙ্গলাচরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত মহতী ধর্মানুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মানসী বড়–য়া ও রাজিব চৌধুরী। ধর্মসভায় পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন কল্যাণ বড়–য়া।
রামু উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার পরিচালনা কমিটি ও গ্রামবাসির সার্বিক সহযোগিতায় দিনব্যাপি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো- ভোরে বিশ্ব শান্তি কামনায় সুত্রপাঠ, বুদ্ধপুজাসহকারে গ্রাম প্রদক্ষিন, ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, সকালে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, স্বদ্ধর্ম্ম সভা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, অষ্টপরিষ্কার ও মহাসংঘদান উৎসর্গ, ভিক্ষুসংঘের পিন্ডদান, অতিথি ভোজন।
দুপুরে কঠিন চীবর ও কল্পতরু নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিন, দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দান আরম্ভ, সদ্ধম্মোদেশনা ও আলোচনা সভা, চীবর পরিক্রমা, কঠিন চীবর ও কল্পতরু উৎসর্গ এবং সন্ধ্যায় বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত উপাসনা।
দিনব্যাপি মহতী ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুন্দর ও শান্তিপুর্ন ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুন্যার্থীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামবাসির পক্ষে বাবুল বড়–য়া, রনজিত বড়–য়া, নীতিশ বড়–য়া, টিটু বড়–য়া, সিপন বড়–য়া, শ্যামল বড়–য়া, অমিয় বড়–য়া, প্রবীন বড়–য়াসহ বড়–য়া পাড়ার যুব সমাজ।
Posted ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta