শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ চার ব্যাংকে এলসি নিয়ে টানাপড়েন

সোমবার, ০৪ মার্চ ২০১৯
187 ভিউ
রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ চার ব্যাংকে এলসি নিয়ে টানাপড়েন

কক্সবাংলা ডটকম(৩ মার্চ) :: দুই বছর আগেও রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এলসি (ঋণপত্র) খুলতে উন্মুখ থাকত ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকও ছিল এ তালিকায়। কিন্তু ডলার সংকটে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আগেই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। এবার অনীহা প্রকাশ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও। এ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ চার ব্যাংকের মধ্যে টানাপড়েনও শুরু হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত গড়িয়েছে।

দেশে সরকারি এলসির সিংহভাগই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) এবং প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের (ডিজিডিপি)। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেট্রোবাংলার এলএনজি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতুসহ দেশের বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের এলসি।

এসব বড় এলসির দায় পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে ডলারের চাহিদার একটি অংশ পরিশোধ করা হয় ব্যাংকগুলোকে। বাকি ডলার ব্যাংকগুলো বাজার থেকে সংগ্রহ করে। ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দরে খোলা বাজার (কার্ব মার্কেট) থেকে ডলার সংগ্রহ করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের এলসির দায় মেটাতে গিয়ে লোকসান বাড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের।

এ নিয়ে কথা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী, ট্রেজারি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তারা বলছেন, লোকসান সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে বিপিসি, বিপিডিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসি খুলতে হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় আমানত আছে। এলসি না খুললে সে আমানত নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আবার এলসি খুলে দায় পরিশোধ করার মতো ডলার নেই ব্যাংকগুলোর কাছে। এজন্য যথাসময়ে এলসির দায়ও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের দিকে ঠেলে দেয়ার প্রবণতা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের সম্পর্কেও টানাপড়েন তৈরি করছে।

এলসি খুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনীহার বিষয়টি জানিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, প্রতি মাসে বিপিসির ৬২ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলারের এলসি খুলতে হয়। সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত লোকসান দিচ্ছি। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত দরে বিপিসির এলসি খুলতে চাইছে না। তারা লোকসানের কথা বলে কার্ব মার্কেটের ডলারের দরে এলসি খুলতে চায়। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে আমাদের পক্ষে এটি সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসি দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ ডলার সরবরাহ করার কথা। কেন ব্যাংকগুলো কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনছে, তা আমাদের জানা নেই। যথাসময়ে এলসি দায় পরিশোধ না করায় আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে ১৯ হাজার ৮৩৬ ডলার বিলম্ব চার্জ করেছে। এর ফলে রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিষয়টি আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বাজার থেকে বড় অংকের ডলার কিনতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংককে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটি ডলার কিনতে ২৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। একই দিন অন্য ব্যাংকের সঙ্গে সোয়াপ করতে হয়েছে ৫৪২ কোটি ডলার। অথচ ওই দিনই দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অগ্রণী ব্যাংককে কলমানি, রেপোসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ধার করতে হয়েছে। সোয়াপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার ধার করেছে সোনালী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংককেও ২২ মিলিয়ন ডলার সোয়াপ করতে হয়েছে।

লোকসান হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসি খুলছেন বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, লোকসান হলেও আমরা যথাসময়ে সরকারি এলসির দায় পরিশোধ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ডলারের জোগান দিচ্ছে। বাকিটা বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সরকারি এলসি হলো সাগরের মতো বিশাল। এখানে হাবুডুবু খেতে খেতে আমরা কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। গত কয়েক মাসে অনেক বেশি চাপ ছিল। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো শুধুই লাভের পেছনে ছুটছে। সরকারি এলসি খুললে এখন লোকসান গুনতে হয়। এজন্য কোনো বেসরকারি ব্যাংকই সরকারি এলসি খোলার ঝুঁকি নিচ্ছে না।

চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকও। এজন্য তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসিতে অনীহা প্রকাশ করছে। জনতা ব্যাংকের এমডি মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, চাহিদা অনুযায়ী জোগান না থাকায় ডলারের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। সোয়াপ করেও বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। তবে লোকসান হলেও আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলসি দায় পরিশোধ করছি। জাতীয় স্বার্থেই লোকসান মেনে নিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বেশি দর দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স কিনে নিচ্ছে। সরকারি ব্যাংক হওয়ায় আমরা এ সুযোগও নিতে পারছি না। বেশি দরে ডলার কেনায় রেমিট্যান্স হাউজগুলো লাভবান হলেও প্রবাসীদের কোনো উপকার হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি দেখা দরকার।

ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোকে কড়া নজরদারিতে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ফোন করে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়। এর পরও তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ডলারের দর বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডলারের মূল্য বেড়ে ৭৯ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ৮২ টাকা ৯৫ পয়সায় উন্নীত হয়। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া মূল্যে বাজারে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ৮৪ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত ঘোষণা করেছে কোনো কোনো ব্যাংক। ঘোষিত মূল্যের চেয়েও বেশি দরে ডলার বিক্রির অভিযোগ আছে অনেক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। প্রতি ডলার কিনতে সাড়ে ৮৪ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এ হিসাবে গত তিন বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৭ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে।

যদিও ডলারের দরকে নিয়ন্ত্রিত না রেখে চাহিদা ও জোগানের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত দরে এলসির দায় পরিশোধ করতে চায়। কিন্তু বাজারে এ দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বড় লোকসান দিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষে সরকারি এলসি খোলা সম্ভব নয়।

ডলারের দর বাজারের চাহিদা ও জোগানের ওপর ছেড়ে দেয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে এটি পুরোপুরি ছেড়ে দিলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। বাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলারের জোগান বাড়ালে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকবে।

বাজারে ডলারের দর স্বাভাবিক রাখতে চলতি অর্থবছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৬৬ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেকর্ড ২৩১ কোটি ডলার বিক্রি করতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজারে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ক্রয় করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার বিক্রির দরকার হয়নি। যদিও ওই অর্থবছর বাজার থেকে ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের কয়েক অর্থবছরেও দাম পড়ে যাওয়া ঠেকাতে বাজার থেকে অতিরিক্ত ডলার কিনে নিতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করায় টান পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ এর আগে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় রিজার্ভ বাড়ুক। আবার ডলারের বাজারও স্থিতিশীল থাকুক। এজন্য ব্যাংকগুলোর চাহিদার অর্ধেক বা তার চেয়ে কম জোগান দেয়া হচ্ছে। টাকার মান শক্তিশালী রাখতেই এটি করতে হচ্ছে। যদিও প্রতিবেশী প্রায় সব দেশই নিজেদের মুদ্রার মান বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।

187 ভিউ

Posted ৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ মার্চ ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com