বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রুদ্ধ হচ্ছে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের পথ !

বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
167 ভিউ
রুদ্ধ হচ্ছে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের পথ !

কক্সবাংলা ডটকম(৩ সেপ্টেম্বর) :: মানুষ তার আয়ের পুরোটাই ভোগ করে না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আয়ের একটা অংশ সঞ্চয় করে। মানুষের এই সঞ্চয় অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসতে সরকারি-বেসরকারি তেমন উদ্যোগ নেই। উল্টো সঞ্চয়-বিনিয়োগের বৈধ জায়গাগুলোতে কখনো সুদের হার হ্রাস করে, কখনো কর বসিয়ে বা করহার বৃদ্ধি করে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের উৎস সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়মে কড়াকড়িসহ উৎস কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় এই খাতে বিক্রিও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই হাজার ১৬০ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩৩ শতাংশ কম। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পাঁচ হাজার ৩৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।

দীর্ঘদিন পর ব্যাংক খাতে সুদহার কিছুটা বৃদ্ধির সঙ্গে আমানত বৃদ্ধি গতি না পেতেই ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামানোর অজুহাতে সেখানেও ক্যাপ (সুদের সর্বোচ্চ সীমা) বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের (বন্ধ করে দেওয়া) সিদ্ধান্তে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতেও অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ভালো ও মৌল ভিত্তির শেয়ারের অভাবে দুর্দিন চলছে পুঁজিবাজারেও। এভাবে দিন দিন সাধারণ মানুষের সঞ্চয় তথা বিনিয়োগের জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে।

এদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের ভোগ ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এর ফলে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) জাতীয় সঞ্চয়ের হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না। কয়েক বছর ধরে তা ২৮ থেকে ৩০ শতাংশের ঘরে আটকে আছে।

বেসরকারি বিনিয়োগের গতিও মন্থর। অর্থাৎ গত কয়েক বছর যে গতিতে জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে, সে হারে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়েনি। এর মানে আয়ের বড় অংশই ভোগ ব্যয়ে চলে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, কর বৃদ্ধি ও সুদ হ্রাসসহ নানা কারণে সঞ্চয়ে উৎসাহ হারাচ্ছে মানুষ। তারা বেশি সুদ পাওয়ার প্রলোভনে অবৈধ উৎস টাকা খাটাচ্ছে। অনেকেই সঞ্চয়ের একটা অংশ বিদেশে পাচার করছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণেও মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা কমছে। এর প্রভাব পড়েছে জাতীয় সঞ্চয়ে।

আর জাতীয় সঞ্চয় কাঙ্ক্ষিত হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের হারও অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। এতে নতুন শিল্প-কারখানা যেমন গড়ে উঠছে না, তেমনি কর্মসংস্থানও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই উচ্চ জিডিপি অর্জনে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে আরো নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে বিনিয়োগের যেসব বৈধ উৎস রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, পুঁজিবাজার ও সঞ্চয়পত্র খাত। যদিও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সঞ্চয় পরিপন্থী বিভিন্ন নীতি-সিদ্ধান্তের কারণে এসব বৈধ উৎসও ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের হার বেশি। তাই সঞ্চয় বাড়াতে হলে এ শ্রেণির মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু সরকারের নীতিগুলো সম্পূর্ণভাবে সঞ্চয়ের পরিপন্থী।’

মধ্যবিত্তের একটি বড় অংশের সঞ্চয়ের মূল ভরসা সঞ্চয়পত্র। কিন্তু সেখানেও উচ্চবিত্তের আগমনে নানা কড়াকড়িতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই হাজার ১৬০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩৩ শতাংশ কম।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এখন থেকে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। টাকার পরিমাণ এক লাখের বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এ ছাড়া নতুন ফরম ও ‘ম্যানডেট’ ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে জমা দিতে হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে পেনশনার সঞ্চয়পত্র ব্যতীত অন্য সব সঞ্চয়পত্রের উৎস কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। তবে গত রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে এই ধরনের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত সুদের ওপর আগে নির্ধারণ করা উৎস কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ কাটা হবে।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজার অর্থনীতিতে রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা যদি বিভিন্ন বাজারে রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট দিতে না পারি তাহলে উন্নতি করা কিন্তু কঠিন হবে। কারণ যারা সঞ্চয়কারী তারা যে শুধু সঞ্চয় দেশে রাখবে তা নয়, তারা বিদেশেও সঞ্চয় করতে পারে। কাজেই আমাদের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতে হবে। তা না হলে টাকা পাচার হয়ে যাবে। এ জন্য সঞ্চয়কে বাজারে আকর্ষণীয় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের যেমন শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে হবে, তেমনি বন্ড মার্কেটকেও চাঙ্গা করতে হবে।’

ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দিতে ব্যাংক মালিকদের প্রস্তাবের বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এটা একেবারেই সঠিক হবে না। এটা করলে আমানতকারীদের যেমন অসুবিধা হবে, তেমনি ব্যাংকিং খাতও ভেঙে পড়বে। কারণ আমানতকারী তখন ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইবে না। তারা টাকা তুলে বিকল্প উৎস খাটাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে আর্থিক সেবায় আনা ও তাদের সঞ্চয়ে উদ্ধুদ্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও দুর্গম এলাকায় ব্যাংকের সেবা পৌঁছাতে ব্যাংকগুলোকে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামের মানুষের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয়। ছোটবেলা থেকে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিং চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের এ সঞ্চয় প্রকল্পও ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।

এ ছাড়া আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা, পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নামমাত্র জমায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সঞ্চয়পত্রে কড়াকড়ি ও উৎস কর বৃদ্ধি :

নিম্নমধ্যবিত্ত, সীমিত আয়ের মানুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকল্প চালু রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছর শুধু নিম্নমধ্যবিত্তরাই নয়, সমাজের উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও এর সুবিধাভোগী হয়েছে। এতে অস্বাভাবিকভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি সঞ্চয়পত্র কেনায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

ব্যাংকে আমানতের সুদ বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব :

দীর্ঘদিন ধরেই আমানতের সুদহার নিম্নমুখী ছিল। এতে ব্যাংকে টাকা রাখা কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। ২০১৮ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামাতে সব ধরনের আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে বেঁধে (ক্যাপ) দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বেসরকারি ব্যাংকের মালিকরা।

আস্থাসংকটে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত :

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে চরম আস্থাসংকট তৈরি হয়েছে। ফলে অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা অর্থও তুলে নিচ্ছে এ খাতের গ্রাহকরা। এতে কমে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের পরিমাণ।

নিস্তেজ পুঁজিবাজার :

সারা বিশ্বেই দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা হলো পুঁজিবাজার। কিন্তু দেশে গুজব আর অনাস্থার বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। তাই পুঁজিবাজার নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার পরও পুঁজিবাজারে কোনো উন্নতি নেই। আস্থাসংকটে গত ১ বছরে প্রায় ছয় লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছে।

167 ভিউ

Posted ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com