কক্সবাংলা ডটকম(৮ জুলাই) :: অস্কার জয়ী বিখ্যাত সিনেমা ‘গ্লাডিয়েটর’য়ে এক সময়ের দুর্দান্ত প্রতাবশালী জেনারেল ম্যাক্সিমাস (রাসেল ক্রো) পরিবার, পদসহ সব হারিয়ে ভাগ্যের ফেরে পরিণত হন গ্লাডিয়েটর এ। ঘটনাচক্রে এক সময় ভাগ্যাহত জেনারেল তার সমস্ত দুরাবস্থার জন্য দায়ী রাজা কমোডুস আয়োজিত এক লড়াইয়ে নামে অপর এক কিংবদন্তী অপরাজেয় গ্লাডিয়েটরের বিরুদ্ধে। রোমান কলোসিয়ামের মধ্যে দুই শক্তিশালী মল্লযোদ্ধার মধ্যে যুদ্ধ চলছিল, সে যুদ্ধের অংশ হিসেবে শিকলে বাঁধা কিছু বাঘও ছিল, যারা আক্রমণ করার জন্য তেড়ে-ফুড়ে আসার চেষ্টা করছিল। ১৮০ খ্রিষ্টাব্দের সময়কার ঘটনার উপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মিত হয়। বাস্তবেও রোমান সামাজ্যে মল্লযুদ্ধে বন্য প্রাণী ব্যবহার করা হতো। সেসময় বন্যপ্রাণীসহ রোমের মানুষের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আরো অনেক দরকারী জিনিসপত্র আমদানী করা হতো। রোমানদের আমদানি পণ্যের পরিমান এতটাই বেশি ছিল যে শিল্পায়নের আগে আর কোন জাতি ঐ পরিমান পণ্য আমদানি করেছে এমন তথ্য ইতিহাসে পাওয়া যায় না। সেসময় আমদানির পাশাপাশি রোমানরা উদ্বৃত্ত বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য পাশ্ববর্তী বিভ্ন্নি দেশে রপ্তানিও করতো।
[হিংস্র বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত গ্লাডিয়েটর]
সূচনা
আঞ্চলিক, আন্তঃদেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছিল রোমান সামাজ্যের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। রোমান বাণিজ্যে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতি এই দুই ধারণাই প্রয়োগ করা হতো। এর ফলে এক জায়গার উৎপাদিত পণ্য পৌঁছে যেতো দূর-দূরান্তের নানা জায়গায়। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সিরিয়েল, ওয়াইন এবং অলিভ অয়েল। আর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হতো তাদের অন্যতম হচ্ছে মূল্যবান ধাতু, মার্বেল ও মশলা ইত্যাদি।
কারণ
সমসাময়িক অন্যদের তুলনায় রোমান সভ্যতা সেসময় দ্রুতই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। অর্থনীতির আকারও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যেসব কারণে রোমানরা বাণিজ্যে জড়ায় সেগুলোর কয়েকটি হচ্ছে-কৃষি উদ্বৃত্ত, জনসাধারণের স্থানান্তার ও শহুরে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, রাজ্যের সীমা বৃদ্ধি, নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন, করারোপ, মুদ্রার বহুল প্রচলন ইত্যাদি। তবে এসবের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আর একটি কারণ জড়িত ছিল। তা হলো খাদ্য চাহিদা পুরণ। বিশাল রোম শহরের লোকসংখ্যা তখন ১০ লাখ। রোমের জনসংখ্যার পাশাপাশি বিশাল রোমান সেনাবাহিনীকে সচল রাখতে বিপুল পরিমানে খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণের প্রয়োজন হতো।
[মানচিত্রে রোমনা সাম্রাজ্য]
ইতিহাসবেত্তাগনের মতে তখনকার রোমান অর্থনীতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল নিম্নরূপ:
১. কৃষির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা
২. প্রযুক্তির ধীর বিকাশ
৩. আঞ্চলিক বাণিজ্যে চেয়ে স্থানীয় শহরের বাণিজ্যের পরিমাণে আধিক্য
৪. শিল্পখাতে কমমাত্রায় বিনিয়োগ
তবে এরকম অবস্থা যে রোমান সাম্রাজ্যের পুরো সময়কালে ছিল তা নয়। বিভিন্ন নথিতে দেখা গেছে দ্বিতীয় খ্রিষ্টপূর্ব থেকে দ্বিতীয় খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে রোমান সাম্রাজ্যে উৎপাদন ও সেবা শিল্পে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কর্মসংস্থান হয়েছে। ওই সময় বিভিন্ন অঞ্চলগুলোর মধ্যে পণ্যদ্রব্য ও উৎপাদিত মালামাল বাণিজ্যের হারও ছিল অধিক। তবে সাম্রাজ্যের আরও পরের দিকে প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলেও হ্রাস পায় পশ্চিমের সাথে।
উচ্চ শ্রেণির রোমানদের মধ্যে বাণিজ্যে অনিহা সেসময় খুব সাধারণ একটি বিষয় ছিল। জমির মালিক হওয়া, কৃষিকাজের মাধ্যমে সম্পদশালী হওয়াকে সম্মানের বলে গণ্য করতো ওই শ্রেণির লোকজন। সেতুলনায় বাণিজ্য ও উৎপাদনের কাজকে তারা কম মর্যাদা সম্পন্ন কাজ বলে মনে করতো। তবে তাদের মধ্যে অনেকে পরের দিকে বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। অবশ্য তাদের বেশির ভাগই সেসব বাণিজ্য ব্যবস্থপনা নিজেরা না করে তার দায়িত্ব চাকর-বাকর, এজেন্টদের হাতে অর্পণ করতো।
ব্যবসায়ীর প্রকারভেদ
রোমানদের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসায়ী দেখা যেত। এক ধরনের ব্যবসায়ীকে বলা হতো নেগোশিয়েটর বা মধ্যস্ততাকারী এবং আরেক ধরনের ব্যবসায়ী হচ্ছেন মার্কেটরস বা বণিক। নেগোশিয়েটরটা ছিল মূলত ব্যাংকারদের অংশ যাদের কাজ ছিল অর্থ সংক্রান্ত। সুদের বিনিময়ে অর্থ ধার দেওয়াই ছিল তাদের মূল কাজ। তবে তারা যে শুধু অর্থ ধারের কাজই করতো তা নয়। তারা স্টেপলস বা অফিস সাপ্লাই, প্রযুক্তি, কালি, পরিষ্কারকরণ উপকরণসহ আরোও অন্যান্য জিনিসপত্র পাইকারী হারে ক্রয়-বিক্রয়ের সাথেও জড়িত ছিলো। তাদের মধ্যে আর্জেনটারি (ব্যাংকারদের একটি গ্রুপ)রা পাবলিক ও প্রাইভেট অকসানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো। সেইসাথে লোকেদের টাকা জমা রাখতো, চেক ভাঙ্গিয়ে দিত; এক কথায় মানিচেঞ্জার হিসেবে কাজ করতো। তারা এসব কাজের দলিল পত্রও সংরক্ষণ করে রাখতো। কখনো কখনো সরকারি ব্যাংকের কিছু কাজও করতো আর্জেনটারিরা।
বাণিজ্যিক অবকাঠামো
প্রাচীন রোম শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি ভবন মার্কেটপ্লেস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ওই ভবনটিকে বলা হতো ‘রোমান ফোরাম’। এ জায়গাটি প্রাচীন রোমানদের প্রত্যহ দিনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ওই স্থানটিতে কী না হতো। বিজয় শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে বক্তৃতা দেওয়া, অপরাধীদের বিচার করা, গ্লাডিয়েটরদের ম্যাচ সেই সাথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। একারণে জায়গাটিতে প্রাচীন রোমের হৃদয় (হার্ট অব এনসিয়েন্ট রোম) বলা হতো। এখানে মোটামুটি সাধারণ সব ধরনের পণ্যদ্রব্যই কেনা-বেচা হতো। এই স্থানটি ছাড়া রোমান সাম্রাজ্যে আরো কমপক্ষে চারটি বিশেষায়িত বড় বাজার ছিল যেখানে পাওয়া যেত পশু-পাখি, ওয়াইন, মাছ, আয়ুর্বেদিক উপকরণ ও শাকসবজি। তবে এসবের মধ্যে রোমান ফোরামে সবচেয়ে বেশি লোক সমাগম হতো। সেসময় নতুন শহর নির্মাণের বেলায় যোগাযোগ ও বাণিজ্য সুবিধার বিষয়টি খেয়াল রাখা হতো। আর তাই অন্যান্য শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য প্রচুর সড়ক নির্মাণ করা হতো। নদী পথের ব্যবহারও ছিল অনেক বেশি। এমনকি জলপথে যোগাযোগের সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য অনেক খালও তখন খনন করা হয়।
[শিল্পীর তুলিতে রোমান ফোরাম]
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকের মধ্যে রোমান সামাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলগুলো নিজেদের মধ্যে বিপুল পরিমানে পণ্য সমুদ্র পথে বাণিজ্য করতো। সেসময় অঞ্চলগুলোর মধ্যে বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হতো। এই কারণে দেখা গেছে মিশরে খাদ্য শস্য, উত্তর আফ্রিকায় ওয়াইন ও ইতালি, গ্রিসও হিসপানিয়াতে অলিভ অয়েল ভাল উৎপাদন হতো।
[রোমান ফোরামের ভগ্নাবশেষ]
পণ্য
প্রত্নতাত্তিক দলিলপত্রাদি থেকে প্রাচীন রোমান সামাজ্যে কী কী পণ্যের বাণিজ্য হতো তার পরিস্কার কোন চিত্র পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে দালিলিক উৎস, মুদ্রাব্যবস্থা ও বিভিন্ন জাহাজ ডুবির নথি থেকে ধারণা পাওয়া যায় রোমানরা কী কী পণ্য বাণিজ্য করতো, কী পরিমানে করতো এবং কোথায় করতো।
রোমান বাণিজ্যে যেসব পণ্য তাদের অন্যতম খাদ্যসামগ্রী (অলিভ, মাছ, মাংশ, লবণ, প্রস্তুত করা খাবার যেমন: মাছের সস, অলিভ অয়েল, ওয়াইন, বিয়ার), প্রাণিজ পণ্য (যেমন: চামড়া), কাঠ, কাচ ও অন্যান্য ধাতু থেকে তৈরি করা পণ্য, কাপড়, মাটির তৈরি জিনিসপত্র এবং কাঁচ, মার্বেল, কাঠ, উল, ইট, স্বর্ণ, রূপা, কপার ও টিন উৎপাদনের জন্য দরকারী বিভ্ন্নি উপকরণ। বলা বাহুল্য রোমান বাণিজ্যের অপর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল ক্রীতদাস।
আমরা আগেই জেনেছি তৎকালীন রোমান সামাজ্যে বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। বিভিন্ন সময় উদঘাটিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওইসব রাজ্যগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে বিপুল পরিমান পণ্য উদ্বৃত্ত থাকতো। যেমন ফ্রান্সের উৎপাদকরা বছরে এক লাখ লিটার ওয়াইন , লিবিয়ার কারখানাগুলো বছরে এক লাখ ওলিভ অয়েল, আর স্পেন বছরে নয় হাজার কিলোগ্রাম স্বর্ণ উৎপাদনে সক্ষম ছিল। এই বিশাল উৎপাদনের সবটাই নিজের ভোগে ব্যবহার করা সম্ভব ছিল না। সেক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত পণ্যের একমাত্র সৎব্যবহার হতে পারে বাণিজ্যে। যা হয়েছে প্রাচীণ রোমান সামাজ্যে।
সাধারণত শহরগুলোর অবস্থান ছিল ভোগের কেন্দ্রে, উৎপাদনে নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম উদাহরণও ছিল। সেসব শহুরে কারখানাগুলো সম্মিলিত উৎপাদিত পণ্যের পরিমান নেহায়তই কম ছিল না। সেসব কারখানাগুলোতে নানা রকম সীমাবদ্ধতার জন্য কর্মীদের সংখ্যা ছিল ৩০র মধ্যে। ওগুলোর অবস্থান হতো শহরের শিল্পাঞ্চল বা বন্দর এলাকায়।
স্থলপথ ব্যবহার করে রোমানরা দেশে দেশে যেসব পণ্য বাণিজ্য করতো:
• ব্রিটেন: গহনা ও মুদ্রা বানানো জন্য রৌপ্য, কাপড় বানানোর জন্য উল
• রোমান সাম্রাজ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল: কাপড়ের রং ও মসলা
• দূর-প্রাচ্য (চীন): উন্নত মানের কাপড় তৈরির জন্য সিল্ক
• মিশর: কটন
• আফ্রিকা: গ্লাডিয়েটর যুদ্ধের জন্য বন্য প্রাণী
পরিবহণ
রোমান সাম্রাজ্যের সর্বত্রই পণ্য সরবরাহ করা হলেও এর অধিকাংশই করা হতো জলপথ ব্যবহার করে। যানবাহনের উদ্ভাবনের ঘাটতির কারণে স্থলপথে পণ্য পরিবহন সেসময় অনেক বেশি ব্যয়বহুল ছিল। নদী আর সমুদ্র পথেই পণ্য পরিবহন ছিল সবচেয়ে সাশ্রয়ী। সমুদ্র, নদী ও সড়ক পথের ব্যয়ের আনুপাতিক হার ছিল এরকম ১:৫:২৮। তবে খ্রির্ষ্ট্রীয় ১ম ও ২য় শতকে তিন মাধ্যমের যানেরই ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে।
[চার চাকার রোমান ওয়াগন]
সমুদ্র পণ্য পরিবহনে খুব সস্তা ও দ্রুতগতির (নয়দিনে ১০০০ নট্যিকাল মাইল) হলেও নিরাপত্তার প্রশ্নে ছিল খুবই ঝুকিপূর্ণ। বৈরি আবহাওয়ার সাথে দস্যুরা ছিল এ পথের প্রধান হুমকি। বছরের নভেম্বর-মার্চ সময়কালে নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে সমুদ্র পথে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতো।
[জলপথে ওয়াইন পরিবহন]
রোমান সাম্রাজ্যেরে সময়কালে সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ৯০০ জাহাজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সাধারণত বাণিজ্যিক সমুদ্রযানের গড় ধারণ ক্ষমতা ছিল ৭৫টন। তবে ৩০০ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে সক্ষম এমন জাহাজও সেরকম চলাচল করতো।
বাণিজ্য পথ
রোমান বাণিজ্যে স্থল পথের পাশাপাশি সমুদ্র পথও ব্যবহার করা হতো। সমুদ্র পথের প্রধান রুটের অন্যতম ছিল ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগর। সেসময় রোমানরা সড়ক পথের প্রভূত উন্নয়ন করে। মূলত রোমান বাণিজ্য ও সেনাবাহিনীর সহজ যাত্রার জন্য স্থলপথের উপর রোমানরা গুরুত্বারোপ করে।
[রোমানদের আর্শীবাদ ও অভিশাপ অসতিয়া বন্দর]
সেসময় যেসব পোর্ট ব্যবহার করা হতো তাদের মধ্যে ‘ওসতিয়া’র গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক। মূলত রোম শহরের কাছাকাছি অবস্থানের কারণেই এর গুরুত্ব অন্য পোর্টের চেয়ে বেশি ছিল। ওসতিয়া ছিল রোম শহর থেকে মাত্র ১৫ মাইল দূরে ‘টিবার’ নদীর তীরে। এই পোর্ট ব্যবহার করে প্রচুর জাহাজ ওসতিয়া ও উত্তর আফ্রিকার শহর কার্থেসে মধ্যে চলাচল করতো। দুই শহরের মধ্যে যাতাযাতে সময় লাগতো তিন থেকে পাঁচদিন। আফ্রিকা ছাড়া ওসতিয়াতে জাহাজ আসতো স্পেন ও ফ্রান্স থেকে। এ সমুদ্র বন্দর থেকে খুব কম সময়ে টিবার নদী হয়ে রোমে পণ্য চালান পাঠানো যেত।
অসতিয়া রোমান সাম্রাজ্যের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো। কেননা রোমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেসব রসদের প্রয়োজন তার সবই এ বন্দর ব্যবহার করে আনা হতো। এটি ব্যবহারে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হওয়াই যার প্রধান কারণ। তাই ক্রমে ক্রমে রোমানরা এ বন্দরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অসতিয়া হয়ে উঠে রোমানদের ‘লাইফ লাইন’। রোমের টিকে থাকা ও সমৃদ্ধির জন্যে এ বন্দরের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যা একসময় রোমানদের জন্য আর্শীবাদ স্বরুপ বিবেচিত হয়েছে তাই পরে অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছিল। রোমানদের শত্রু ‘গথ’রা যখন দেখলো এ ব্ন্দর অবরুদ্ধ করে দিলে রোমানরা না খেয়ে মরবে। তখন আর দেরি না করে গথরা অসতিয়া আক্রমনের পর বন্দর অবরোধ করে। যার পরিণতিতে ৮০০ বছরের মধ্যে প্রথমবার বিদেশী শত্রুর কাছে রোমের পতন ঘটে।
[শিল্পীর তুলিতে গথদের রোম আক্রমন]
কম সময় ও সাশ্রয়ী সমুদ্র যাত্রা ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে দিনে দিনে সমুদ্র পথে দস্যুদের হামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরিবহন খরচ কম হওয়ার সমুদ্র যোগাযোগের কোন বিকল্প ভাবারও কোন সুযোগ ছিল না। রোমানরা সমুদ্রকে নিরাপদ করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেমন: বাতিঘর, পোতাশ্রয় ও ডক নির্মাণ। রোমান নৌবাহিনীর সেনারা দস্যুমুক্ত রাখার জন্য ভূমধ্যসাগরে নিয়মিত টহল দিতো।
রোমান সাম্রাজ্যে বাণিজ্যে ব্যবহার হওয়া অর্থনৈতিক বিধিব্যবস্থা ঠিক কেমন ছিল? বাণিজ্যে রাষ্ট্রের বা ব্যাক্তি খাতের অংশীদারিত্বের অনুপাত কত ছিল? এসবের সঠিক উত্তর জানা না গেলেও তাদের সম্পাদিত বাণিজ্যের পরিমান ছিল বিশাল। শিল্প যুগের আগের সমাজে এমন উদাহরণ আর দ্বিতীয়টা খুজে পাওয়া যায়না। রোম একাই প্রতিবছর ২৩ লাখ কিলোগ্রাম তেল আমদানি করতো আর এ শহরের বার্ষিক ওয়াইন ভোগের পরিমান ছিল ১ লাখ হেক্টোলিটার। রোমান বণিকরা তাদের হিসাবে খাতা বন্ধের পর এবং ইতিহাস তাদের ভুলে যাওয়ার পর শিল্পায়নের আগ পর্যন্ত এমন বিশালকার বাণিজ্য সংখ্যা আর দেখা যায়নি।
হিস্টিঅনদ্যানেট, ডেইলি মেইল, অক্সফোর্ডস্কলারশিপ, হিস্টিলার্নি অবলম্বনে
Posted ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৮ জুলাই ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta