শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পৃথিবীর রহস্যময় পিরামিডের ইতিহাস ও এলিয়েনদের ভূমিকা (ভিডিও সহ)

বৃহস্পতিবার, ০১ এপ্রিল ২০২১
2236 ভিউ
পৃথিবীর রহস্যময় পিরামিডের ইতিহাস ও এলিয়েনদের ভূমিকা (ভিডিও সহ)

কক্সবাংলা ডটকম(৩১ মার্চ ) :: পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মিসরের পিরামিড। আজ থকে প্রায় চার হাজার বছর আগে এই পিরামিডগুলো মিসরের ইজিপ্টে তৈরি করা হয়েছিল। পিরামিডের গঠন শৈলী থেকে শুরু করে সবকিছুই অবিশ্বাস্য এবং রহস্যময়। পিরামিডের এই রহস্যময় বিষয়গুলো নিয়েই আমি এখানে আলোচনা করব।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাবহার করে পিরামিডের রহস্য ভেদ করার অনেক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ এর রহস্য ভেদ করতে পারেনি। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এইসব বৃহদাকার স্থাপনাগুলো কিভাবে তৈরী করা হয়েছে? পিরামিড তৈরীতে যে পাথরের ব্লকগুলো ব্যাবহার করা হয়েছিল তার ওজন ২৭০০ কেজি থেকে ৭০,০০০ কেজি পর্যন্ত পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র একটি পিরামিড তৈরীতে ২৩ লক্ষ লাইম স্টোন ব্লক ব্যাবহার করা হয়েছে।

বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরীতে যে ক্র্যান ব্যাবহার করা হয় তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা হচ্ছে ২০,০০০ কেজি। তাহলে আজ থেকে চার হাজার বছর আগে প্রাচীন ইজিপ্টের লোকেরা কিভাবে ৭০,০০০ কেজির এই ব্লক গুলোকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়েছিল। তাদের কাছে কি আরও উন্নত কোন প্রযুক্তি ছিল? এটার একটা সম্ভাবনা হচ্ছে প্রাচীন পৃথিবীতে হয়ত পৃথিবীর বাহির থেকে কেউ এসেছিল, যারা হয়ত এই প্রযুক্তি তাদেরকে সরবরাহ করেছিল।

পিরামিডকে নিয়ে একটা থিউরি আছে, যাকে ওরিয়েন কো রিলেশান থিউরী বলা হয়। আপনি যদি রাতে পিরামিডকে দেখেন তাহলে দেখবেন যে পিরামিড আকাশের তারা নক্ষত্রের সাথে শ্রেনীবদ্ধ অবস্থায় থাকে। আকাশের এই কনস্টেলেশান এর নাম ওরিয়েন বেল্ট, যার তিনটি প্রধান তারা হচ্ছে এলনিটাক, এলনিলাম এবং মিনটাকা। এই তিনটি তারা একেবারে পিরামিডের উপর বরাবর সারিবদ্ধভাবে ক্রমান্বয়ে অবস্থান করে।

কিছু কিছু থিউরিস্ট মনে করেন প্রাচীন পৃথিবীতে এলিয়েনরা এসেছিল এবং তারা এই পিরামিড বানিয়েছিল। তবে যাই হোক এই তিনটি তারা এবং পিরামিডের মধ্যে অবশ্যই একটি কানেকশান আছে। অনেকে মনে করেন যে, এলিয়েনরা এই তিনটি তারাতেই থাকে এবং তাদের অস্থিত্ব বুঝানোর জন্যেই এই পিরামিড তৈরী করেছে।

পিরামিডের আরেকটি রহস্য হচ্ছে এর জায়গায় জায়গায় সুড়ঙ্গ দিয়ে ভরা। আগে মানুষ মনে করত যে বাতাস প্রবাহের জন্যে এই সুড়ঙ্গ বানানো হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা এই ধারণাকে বাতিল করে দিয়েছে। পিরামিডের সুড়ঙ্গের ভিতরে সয়ংক্রিয় রোবট এবং ক্যামেরা পাঠিয়ে দেখা গেছে যে এর অপর প্রান্ত কংক্রিট দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং সেখানে দরজার মতো কিছু একটা বানানো হয়েছে। পরবর্তীতে এই দরজায় ছোট ড্রিল করে ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেখার চেষ্টা করা হলে দুর্ভাগ্যবশত ক্যামেরাটি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তিতে মিসরের সরকার এই বিষয় নিয়ে আর গবেষণার অনুমতি দেয়নি।

পিরামিডের ভিতরে মোট তিনটি চেম্বার আছে, বেস চেম্বার, কুইনস চেম্বার এবং কিংস চেম্বার। যদি আপনি কিংস চেম্বার দিয়ে থেকে প্রবেশ করেন তাহলে আপনি তিনটি চেম্বারেই যেতে পারবেন এবং ডান দিকের সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করলেও আপনি তিনটি চেম্বারেই যেতে পারবেন। প্রকৃত সত্য এই যে এখনো এই তিন চেম্বারকে এক্সপ্লোর করা সম্ভব হয়নি। এর ভিতরে আরোও কত চেম্বার আছে তা কেউই জানে না।

প্রাচীন মিসরীয়দের ধারণা অনুযায়ী যদি রাজার মৃত দেহ কিংস চেম্বারে রাখা হয় আর যদি সুড়ঙ্গ পথ অনুযায়ী লাইন টানা হয় তাহলে দেখা যায় রাজার আত্না ওই তারার সাথে কানেক্টেড থাকবে। কুইন্স চেম্বারের ভিতরে যখন ক্যামেরা প্রবেশ করানো হয় তখন সেখানে বন্ধ দরজা পাওয়া যায়, যার উপরে মেটাল পিট লাগানো ছিল। অর্থাৎ এটি এমনভাবে তৈরী করা হয়েছিল যে, যে তারা চাচ্ছে না যে সেখানে কেউ প্রবেশ করুক। অনেকে মনে করেন এই দরজার অপর প্রান্তে আনাবিস্কৃত আরও অনেক চেম্বার রয়েছে।

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এসে অত্যাধুনিক বিভিন্ন গ্যাজেট দিয়ে এসব পিরামিডের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও এর কোনো রহস্যের জট-ই খোলতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের কাছে এটা বিস্ময়কর ছিলো যে, কোনো ধরনের ভারী যন্ত্র ছাড়াই আজ থেকে চার হাজার বছর আগে কিভাবে মিশরীয়রা এসব পিরামিড তৈরি করেছিলো?

মিশরীয়দের তৈরি বিশালাকারের এসব পিরামিড তৈরিতে যে পাথরের ব্লকগুলো ব্যবহার করা হতো তার একেকটির ওজন প্রায় ২৭০০ কিলগ্রাম থেকে সত্তুর হাজার কিলোগ্রাম পর্যন্ত। কারো পক্ষে এই ব্লকগুলো উত্তোলন করা অসম্ভব। কিন্তু এরকম ওজনের প্রায় ২৮ লাখ ব্লক দিয়ে মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করেছে। যেখানে একটি ব্লকও অত্যাধুনিক মেশিন ছাড়া উত্তোলন সম্ভব নয় সেখানে ৪ হাজার বছর আগে মিশরীয়রা কিভাবে বিশাল বিশাল এসব পিরামিড তৈরি করেছিলো? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা খুঁজে চলেছেন।

এলিয়েনরা তৈরি করেছে পিরামিড!

যেহেতু চার হাজার বছর আগে অত্যাধুনিক মেশিন ছিলো না তাহলে মিশরীয়রা কিভাবে এই পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলো? এর একটা উত্তর অবশ্য আছে। যে উত্তরটি একটি থিওরির উপরে দণ্ডায়মান। যেই থিওরিকে বলা হয় ‘অরিওন কোরিলেশন থিওরি’। এই থিওরি মতে মিশরের পিরামিডগুলোর নির্মাতা আসলে মিশরীয়রা নয়। এই থিওরি মতে পিরামিডগুলো তৈরি করেছে এলিয়েন! শোনে অবিশ্বাস বা হাস্যকর মনে হলেও এই থিওরিটি একেবারেই হাস্যরসের উপাদান নয়। একটু খোলাসা করে বলা যাক।

রাতের বেলা মিশরের পিরামিডগুলো দেখলে একটা বিশেষ দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আর সেটি হলো আকাশের নির্দিষ্ট তিনটি তারার সাথে শ্রেণিবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায় পিরামিডগুলোকে। এই তারাগুলো হচ্ছে আলনিতাক, আল নিলাম এবং মিনতাক। রাতের বেলা এই তিনটি তারার অবস্থান থাকে পিরামিডের ঠিক উপরে। এটিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘অরিওন কোরিলেশন থিওরি’।

এই থিওরি মতে ধারণা করা হয় আকাশের ওই তিনটি তারায় বসবাস করে এলিয়েনরা। যারা আজ থেকে চার হাজার বছর আগে নেমে এসেছিলো পৃথিবীতে। এলিয়েনদের সাথে ছিলো এডভান্স টেকনোলজি। যা দিয়ে তারা বিশালাকারের সব ব্লক দিয়ে নিখুঁতভাবে এসব পিরামিড তৈরি করেছিলো নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই থিওরিকে অনেকেই অবিশ্বাস করেন।

থিওরিটি অবিশ্বাস্য হলেও রাতের ওই তিনটি তারার সাথে যে মিশরের পিরামিডের একটা সম্পর্ক আছে তা বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেছেন। কেননা এই তিনটি তারার অবস্থান তিনটি পিরামিডের ঠিক উপরেই থাকে সবসময়। মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন এই তিনটি তারার সাথে সম্পর্ক রয়েছে পিরামিডের ভেতরে মমি করে রাখা তাদের রাজা-রানীর আত্মার সাথে।

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আজও বিজ্ঞানীদের চিন্তার কারণ হয়ে আছে এই পিরামিডগুলো।

পিরামিডের অন্য ইতিহাস

প্রাচীনতম পিরামিডের সমষ্টিকে গ্রেট পিরামিড বা বৃহৎ পিরামিড নামে অভিহিত করা হয়। ফারাও কুফূর নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়েছিল, যিনিই সম্ভবত পিরামিডটির অনুমোদন করেছিলেন। তিনি চতুর্থ রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন। মধ্যবর্তী পিরামিডটি খাফরের জন্য নির্মিত হয়েছিল। ইনি ওই রাজবংশের আটজন রাজার মধ্যে চতুর্থতম রাজা ছিলেন।

মেনকৌরের পিরামিড নামেও পরিচিত, অন্তিম পিরামিডটি রাজবংশের পঞ্চম রাজার নিমিত্তে তৈরি করা হয়েছিল। তবে তখনকার দিনে পিরামিডগুলি কিভাবে নির্মিত তা আজও অধরা রয়ে গেছে। গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেট পিরামিড নির্মাণ করতে প্রায় ১০০,০০০ জন কর্মীদের দীর্ঘ ২০ বছর সময় লেগেছিল। তবে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি উপসংহারে উপনীত হন যে, এটি ২০,০০০ জন কর্মীদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিনটি পিরামিডই প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সময়ে বহু আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিল।

টানেলস অব পিরামিড

মিশরীয় পিরামিডগুলোর আরেকটি রহস্য হচ্ছে এর ভেতরে নির্মিত টানেল বা সুরঙ্গ পথ। এসব পিরামিডের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য সুরঙ্গ পথ। আদৌ কেন এই সুরঙ্গপথগুলো তৈরি করা হয়েছিলো তার সঠিক উত্তর আজ পর্যন্ত কেউই দিতে পারে নি। প্রথমদিকে বিশ্বাস করা হতো পিরামিডের ভেতরের সুরঙ্গ পথগুলো মূলত পিরামিডে ভেন্টিলেশনের জন্য হয়তো তৈরি করা হয়েছে।

কিন্তু পরবর্তীতে উৎসুক প্রত্মতাত্বিকরা যখন একটি রোবটকে পিরামিডের ভেতরে পাঠালেন তখন এই তথ্যটিও ভুল প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ পিরামিডগুলোর ভেতরে যে সুরঙ্গ পথ তা কোনো ধরনের ভেন্টিলেশনের জন্য তৈরি করা হয়নি। কেননা এই স্যরঙ্গ পথগুলো কংক্রিট দিয়ে বিপরীত বন্ধ করা ছিলো। তাহলে কিসের জন্য তৈরি করা হয়েছে এসব সুরঙ্গ পথ?

মিশরের পিরামিডগুলোর ভেতরে কতগুলো সুরঙ্গ পথ বা চেম্বার আছে কেউ সঠিক করে বলতে পারে নি। তবে এ নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন তারা কিছু বিশেষ চেম্বারকে আলাদা করেছেন। যেগুলো হলো- কিংস চেম্বার, কুইন্স চেম্বার, বেইজ চেম্বার, বিগ ভয়েড, স্মল ভয়েড এবং গ্র্যাণ্ড গেলারি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা পিরামিডের ভেতরে থাকা অনেকগুলো চেম্বারের মধ্যে এই চেম্বারগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি।

পিরামিডের ভেতরের কিংস চেম্বারে মিশরীয়রা মৃত রাজাকে রাখতো। তারা বিশ্বাস করতো কিংস চেম্বারে মৃত রাজাকে রাখলে তার আত্মা খুব সহজেই আকাশের ওই তিনটি তারার সাথে মিলিত হতে পারবেন। এর থেকেও আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে এই পিরামিডের ভেতরে অসংখ দরজা রয়েছে। যা থেকে অনুমান করা হয় যারা এই পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলেন তারা হয়তো চাচ্ছিলেন না কেউ এই দরজার ভেতরে প্রবেশ করুক। যেহেতু এর ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি আর মিশরের সরকারও একটা সময় এর ভেতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিলে বিষয়গুলো অমিমাংসীতই রয়ে গেছে। ধারনা করা হয় এই পিরামিডের ভেতরে আরো অসংখ্য চেম্বার রয়েছে। যা এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।

পিরামিড কেন তৈরি করা হয়েছিলো ?

যেহেতু পিরামিডের গায়ে বিস্তারিত কিছু লেখা নেই তাই সাধারণভাবে মনে করা হতো মিশরীয়রা তাদের রাজা-রানীর মৃতদেহকে রাখার জন্য এসব পিরামিড তৈরি করেছিলো। মিশরের ‘মমি’র কথা জানেনা এরকম মানুষ খুব কম আছে। বলা হয়ে থাকে মিশরের যখন তাদের রাজা-রানী মারা যেতেন তখন তাদের মৃতদেহকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মমিকরণ করে এটিকে পিরামিডের মধ্যে রাখা হতো। ‘কিংস চেম্বার’ এবং ‘কুইন্স চেম্বার’ এই দুটির কথা আগেই লিখেছি। পিরামিডের মধ্যে নির্মিত এই দুটি চেম্বারে মিশরীয়রা তাদের রাজা-রানীকে রাখতেন।

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে কী পিরামিডের ভেতরে অনেক মমি বা মৃতদেহ রাখা রয়েছে? বিস্ময়কর ব্যাপার হলো মিশরীয়রা তাদের রাজা-রানীকে মমি করে পিরামিডের ভেতরে রাখলেও আজ পর্যন্ত পিরামিডের ভেতরে একটি মমিও পাওয়া যায়নি! পিরামিডের ভেতরে রাখা মমিগুলো অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার এই রহস্য আজও কেউ বের করতে পারে নি।

এদিকে পিরামিডের ভেতরে যেহেতু মমি পাওয়া যায়নি তাই বিজ্ঞানীরা এলিয়েনের বিষয়টিতেই জোর দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন হতেই পারে এটি এলিয়েনরা তাদের প্রয়োজনে তৈরি করেছিলো। কিন্তু আসলেই কেন এই পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছে আর কারাই বা এগুলো নির্মাণ করেছে তার যুক্তিযুক্ত উত্তর আজও পাওয়া যায়নি।

পিরামিড কেন বানানো হয়েছিল?

উপযুক্ত কোন কারণ জানা না থাকায় এখন পর্যন্ত মনে করা হয় যে, ওই সময়কার রাজা এবং রাণীর মৃতদেহকে কবর দেয়ার জন্যেই এই পিরামিড বানানো হয়েছি। তখনকার সময় মৃতদেহ সংরক্ষনের জন্যে মৃতদেহকে লাইনেনের সুতা দিয়ে প্যাঁচিয়ে মমি তৈরী করা হতো। তবে আশ্চার্যের বিষয় এই যে এখন পর্যন্ত পিরামিডের ভিতর থেকে একটা মৃতদেহও পাওয়া যায় নি।

পিরামিডকে এখনো পুরোপুরি আবিস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু আবিস্কৃত হয়েছে তাতে সবগুলো সবগুলো সমাধিই খালি পাওয়া গেছে এবং তার উপড়ে কোন কিছু লেখাও পাওয়া যায় নি। কিংস চেম্বারে যেমন কিং এর কোন মমি পাওয়া যায় নি তেমনি কুইনস চেম্বারে কুইনের কোন মমিও পাওয়া যায় নি।

এসব বিষয় পর্যালোচনা করে থিউরিস্টরা এই ধারণা করেন যে, সম্ভবত পিরামিড মৃতদেহ রাখার জন্যে বানানো হয় নি, বরং অন্য কোন কারণে বানানো হয়েছে। অনেক এলিয়েন বিশ্বাসী  বিজ্ঞানিরা মনে করেন যে, এলিয়েনরা হয়ত তাদের কোন প্রয়োজনে এটি বানিয়েছিল। এটি তাদের কোন পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে পারে।

পিরামিড এতো পারফেক্ট কিভাবে হলো?

এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, পুরো পৃথিবীর জিওগ্রাফিক্যাল মধ্যভাগে পিরামিডের অবস্থান। আজ থেকে চার হাজার বছর আগে পৃথিবীর মানুষ তো এটাই জানত না যে পৃথিবী গোলাকার। বরং তারা পৃথিবীকে সমতল মনে করত। তাহলে তারা কিভাবে খুজে বের করতে পারল পৃথিবীর জিওগ্রাফিক্যাল মধ্যভাগ। এটা তখনকার হিসেবে মানুষের দ্বারা আদৌ সম্ভব নয়।

আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, পিরামিডের একটা অংশ ঠিকভাবে উত্তরমেরুর দিক নির্দেশ করে আছে। এই অংশ থেকে একটি লাইন টানা হলে তা ঠিক উত্তর মেরুর কাছে গিয়ে মিলে গেছে। আর এটা তো জানা আছে যে, গত চার হাজার বছরে টেকটনিক প্লেটের কিছু পরিবর্তন হয়েছে এবং ভৌগোলিক বিভিন্ন কারনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ভাবনার বিষয় হচ্ছে কিভাবে এই এলাইনমেন্ট তখনকার সময় ঠিক উত্তরমেরুর দিকে হলো?

আরেকটি আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে পিরামিডের পাথর। যে পাথর দিয়ে এই পিরামিড বানানো হয়েছিল তা সাধারণ পাথরের চেয়ে লক্ষগুণ বেশি শক্তিশালী। এই পাথর নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং বিজ্ঞানিরা আজ পর্যন্ত বের করতে পারেন নি যে এটা আসলে কি। এটা লাইমস্টোনের মতো দেখতে হলেও এটি আসলে লাইমস্টোন নয় এবং এই পাথর পৃথিবীর আর কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি।

পিরামিড তৈরীর সময় বল এন্ড সকেট মেথড ব্যাবহার করা হয়েছিল। এটিএমন একটি মেথড যা গরমের সময় ব্লকগুলোর আকার বৃদ্ধি পেয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে। এই মেথড ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে ব্যাবহার করা হয়। এ ধরণের পরিক্ষিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার চার হাজার বছর আগে, সত্যিই অবিশ্বাস্য।

মিসরের পিরামিড যেখানে অবস্থিত সেখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং সবসময় গরম বাতাস চলতে থাকে। এতো কিছুর পরও পিরামিডকে এমন এক আশ্চার্য উপায়ে বানানো হয়েছে যে এর ভিতরে সবসময় ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় থাকে। যা পৃথিবীর সবচেয়ে  আরামদায়ক তাপমাত্র, যাকে চার হাজার বছর আগের ন্যাচারাল এসি বলা যেতে পারে।

তাহলে এই সব বিষয়গুলো যেমন ন্যাচারাল এসি, ভূমিকম্প প্রতিরোধক স্থাপনা, আকাশের তারার সাথে শ্রেণি বিন্যাস, কম্পাস ছাড়াই উত্তর মেরু নির্দেশক এগুলো কি প্রাচীন ইজিপশিয়ানদের কাছে ছিল? নাকি মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান কোন প্রানী যাদের কাছে পৃথিবী সম্পর্কে এমন জ্ঞান ছিল যা বর্তমান পৃথিবীতে আমাদের কাছেও নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন যে প্রাচীন ইজিপিশিয়ানদেরকে এসব জ্ঞান এলিয়েনরাই দিয়েছিল।

https://youtu.be/hTsl_2oURkk?t=234

প্রাচীন মিশরে এলিয়েনদের চিত্রকর্ম

মিশরের প্রাচীন দর্শনীয় স্থানগুলোতে কিছু চিত্রকর্ম দেখা যায়, যেমন এরোপ্লেন, বড় বড় চোখ আর চোখা মুখ ওয়ালা এলিয়েনের ছবি, মর্ডার্ণ এলিয়েন স্পেসশিপ ইত্যাদি। এই জন্যেই কিছু লোক মনে করে যে এই পিরামিড কি শুধু মানুষই বানিয়েছে নাকি এলিয়েনদেরও হাত আছে। এই থিউরী কতটুকু সত্য তা সময়ই বলে দিবে।

পিরামিডের শ্রেনীবদ্ধ স্ট্রাকচার যা আকাশের তিনিটি তারার সাথে সামঞ্জস্য রাখে, এমন স্ট্রাকচার নিখুতভাবে করতে হলে অনেক উপড় থেকে তা পর্যবেক্ষণ করে তৈরী করতে হবে। কিন্তু প্রাচীন মিশরীয়য়দের কাছে কোন ড্রোন বা আকাশে উড়ার মতো কোন প্রযুক্তি থাকার কথা না। তার পরও তারা এই স্ট্রাকচার কিভাবে এতো নিখুতভাবে তৈরী করেছিল তা অজানাই রয়ে গেছে।

পিরামিডের আরেকটি আশ্চার্য ঘটনা ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বড় দিন এবং সবচেয়ে ছোট রাত অর্থাৎ ২১শে জুন। এই দিন বিকালে সূর্যাস্তের সময় সূর্য ঠিক পিরামিডের মধ্যখানে অবস্থান করে। এতো ক্যালকুলেশন আর হিসাব নিকাশ চার হাজার বছর আগের মানুষ কিভাবে করেছিল?

একটা দুটো কাকতালীয় ঘটনা ঘটতে পারে, কন্তু এতগুলো জটিল হিসাব নিকাশ কিভাবে মিলে যায়। এটা নিশ্চই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন কোন প্রাণীর কাজ। কিছু কিছু থিউরিস্ট মনে করেন এসব কিছু অন্য গ্রহের প্রাণীরা করিয়েছিল যাদের কাছে এতো কমপ্লেক্স ক্যালকুলেশন ছিল। তাদের কাছে এমন কিছু বুদ্ধি এবং এমন কিছু যন্ত্র ছিল যা বর্তমানে আমাদের কাছেও নেই।

মিশরে ডেন্ডেরা নামে একটি জায়গা আছে। যেখানে একটি ট্যাম্পল আছে যার নাম ডেন্ডেরা লাইট কমপ্লেক্স। প্রাচীন মিশরের মানুষেরা তাদের প্রভূর উপাসনা করার জন্যে এই ট্যাম্পল বানিয়েছিল, যার নাম ছিল হ্যাথর। এই ট্যাম্পলটিই মিশরের সবচেয়ে রহস্যময় একটি ট্যাম্পল।

এই ট্যাম্পলটি আগে অর্ধেক ঢাকা পড়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৫০ সালে এটি পরিস্কার করা হয় এবং এর পর বেরিয়ে আসে অনেক গোপনীয় তথ্য। এই ট্যাম্পলের মধ্যে অনেক কারুকার্য দেখতে পাওয়া যায়, যা মিশরে পাওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিখুত কারুকার্য।

এখানে ডেন্ডেরা লাইট নামে একটি কারুকার্য পাওয়া যায় যেখানে ফিলামেন্টযুক্ত একটি বড় লাইট ক্যাবল দ্বারা একটি বক্সের সাথে যুক্ত। যার নিচে কিছু মানুষের ছবি দেখা যায়, যা নির্দেশ করে যে এটি মানুষের জীবনের জন্যে বিপদজনক। তাহলে কি প্রাচীন মিশরের আজ থেকে চার হাজার বছর আগে বিদ্যুতের উপস্থিতি ছিল? থিউরিস্টরা মনে করেন যে, সম্ভবত এই লাইট পিরামিড এবং অন্যান্য স্ট্রাকচার তৈরীর কাজে ব্যাবহার করা হয়েছিল।

পিরামিডের আরেকটি বিশ্বয়কর স্ট্রাকচার হচ্ছে দ্যা গ্র্যাট স্ফিন। বিভিন্ন মডেল রিসার্চ করেও জানা সম্ভব হয় নি যে এটি কেন বানানো হয়েছিল। এটা এমন একটি স্ট্রাকচার যার মুখমন্ডল মানুষের মতো হলেও শরীর মানুষের মতো না। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্ট্যাচু গুলোর মধ্যে একটি। এর উচ্চতা প্রায় ৭৩.৫ মিটার এবং মুখমন্ডলটি ২০ মিটার লম্বা।

এই স্ট্রাকচারটি কোন আলাদা আলাদা ব্লক ব্যাবহার করে বানানো হয় নি। বরং একটি বড় লাইমস্টোনকে কেটে এই স্ট্রাকচার তৈরী করা হয়েছে। আর এ জন্যেই একে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল স্টোন স্ট্যাচু বলা হয়।

হাজার বছর ধরে এটি মাটির নিচে ঢাকা পড়েছিল। ১৯০০ সালের পর একে মাটির নিচ থেকে বের করা হয়। আর তখন একে প্রথমবারের মতো আমরা দেখতে পাই। এটার উপর থেকে যতটা রহস্যময়, এর ভিতর থেকে ঠিক ততটাই রহস্যে ঘেরা।

প্রথমে গ্রাউন্ড ম্যাপ থেকে জানা যায় যে এর ভিতরে দুটি খালি জায়গা অর্থাৎ চেম্বার রয়েছে। এটা ঠিক মর্ডার্ন শহরের আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো দেখতে। এরপর ১৯৯৫ সালে একে নতুন করে সংস্কার করা হয়। তখন কাকতালীয়ভাবে এর ভিতরে প্রচুর সুড়ঙ্গ খুজে পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দুটি সুড়ঙ্গ এই স্ট্যাচুর নিচ বরাবর চলে গেছে।

এসব বিষয় আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে, এর ভিতরে হয়ত আরেকটি দুনিয়া লুকিয়া আছে, যা আমাদের অদেখাই রয়ে গেছে। আজও পিরামিডকে পুরোপুরি আবিস্কার করা বাকি আছে। এখনো চলছে পিরামিডকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা। হয়ত কোন একদিন উন্মোচিত হবে পিরামিডের সকল অজানা রহস্য।

 

2236 ভিউ

Posted ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ এপ্রিল ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com