কক্সবাংলা ডটকম(২০ সেপ্টেম্বর) :: রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়ে নিউইয়র্কে দুটি পুরস্কার গ্রহণ করতে চলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যেই ঢাকা লন্ডনে রওনা হয়েছেন হাসিনা। রবিবার নিউইয়র্কে পৌঁছবেন।
এবারের সফরে তিনি ৫০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। ব্যবসায়ীদের ২০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও যাচ্ছে তাঁর সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলি বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ‘নজির স্থাপন করায়’ প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবার ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেবে।
রাষ্ট্রসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কোফি আন্নান ও বুট্রোস বুট্রোস-ঘালি এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট মার্তি আহতিসারি এর আগে এই পুরস্কার পেয়েছেন বলেও জানান বিদেশমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে দূরদর্শিতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ‘গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন’-এর পরিচালনা পর্ষদ শেখ হাসিনাকে ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো এবারের সাধারণ অধিবেশনে তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
মায়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে গত বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় চার লক্ষ রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ বহন করে চলেছে কয়েক দশক ধরে।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে গতবছর সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের অধিবেশনে তিনটি ইস্যু প্রাধান্য পাবে। রোহিঙ্গা ইস্যু, বিশ্ব শান্তি ও শান্তিরক্ষা কর্মসূচি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়গুলো তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অধিবেশনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাবে।
মিয়ানমারের উসকানির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘মিয়ানমারের পক্ষ থেকে আমাদের উত্তেজিত করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তারা আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, ল্যান্ডমাইন (স্থলমাইন) বসিয়েছে। কিন্তু আমরা ঠাণ্ডা মাথায় এর শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এবারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সেই ইভেন্টগুলোতে বাংলাদেশ তার উদ্যোগ ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে তুলে ধরবে।
মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ বেড়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার সফরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তর রাখাইনের মংডু, বুথিডংসহ বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমি নিজে দেখেছি, সেখানে বাড়ির গাছপালা পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকের সম্ভাবনারও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হবে নিউ ইয়র্কে। সেখানে মিয়ানমারের মন্ত্রীও হয়তো বা থাকবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত জুন মাসে বেইজিং সফরের সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন যে মিয়ানমার পরিস্থিতি দেখে এসে তিনি আবারও তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। নিউ ইয়র্কেও এমন বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে ভাষণের পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সাধারণ পরিষদে ভাষণ ছাড়াও বেশ কিছু হাই লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্ব নেতাদের অনেকের সঙ্গেই তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করবেন। লন্ডন হয়ে আগামী ১ অক্টোবর সকালে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
Posted ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta