কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৮ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফে প্রায় চার হাজার ৩০০ একর এলাকার বন ও পাহাড় কাটা পড়েছে। এর ফলে ওই এলাকার প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপির প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় স্থানীয় একটি হোটেলে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আরও বক্তব্য দেন ইউএনডিপি-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ শফিউল আলম চৌধুরী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মহসিন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ।
‘রোহিঙ্গা আধিক্যে বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর প্রভাব’ শিরোনামে ইউএনডিপির এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকে আরও প্রায় তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে এসে এসব এলাকায় অবস্থান করছে।
গত বছর একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আসার কারণে তাদের আশ্রয়, ব্যবস্থাপনা, গৃহস্থালি কার্যাদি ও রান্নার জ্বালানির জন্য এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ৩০০ একর বন ও পাহাড় কাটা পড়েছে। রোহিঙ্গারা প্রতি মাসে শুধু রান্নার প্রয়োজনেই ছয় হাজার ৮০০ টন জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণের জন্য গড়ে ৬০টি বাঁশের প্রয়োজন হয়েছে।
একই সঙ্গে এ এলাকার সুপেয় পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে বন ও পাহাড়ি এলাকায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে এ অঞ্চলের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বড় হুমকির মুখে পড়েছে।
মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। সেখানকার প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশের এই ক্ষতি সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুব শিগগিরই হবে বলে মনে হয় না। সংকট সমাধানে সময় লাগবে। এ অবস্থা বিবেচনায় রেখে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে।
ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, কক্সবাজারে এ মুহূর্তের বিশ্বের বড় শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। স্বল্প এলাকার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাসের কারণে তারা যেমন মানবেতর জীবন-যাপন করছে, তেমনি পরিবেশ, প্রতিবেশের ওপরও বড় ধরনের চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বড় বিপর্যয় এড়ানোর জন্য পরিবেশের ওপর ক্রমাগত ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
Posted ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta