হুমায়ুন রশীদ,টেকনাফ(১০ নভেম্বর) :: গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনার। এ সময় টেকনাফ শালবাগান শরণার্থী ক্যাম্পে নয় রোহিঙ্গা নেতার সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি।
আলাপকালে ৯ রোহিঙ্গা নেতার মুখে নির্যাতনের কথা শুনে জাতিসংঘ মহাসচিবের রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনার তাদের বলেছেন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যাতে বিচার পায় সেজন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমার ওপর চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। এছাড়া জোর এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না বলে আশ্বস্ত করেন।
শনিবার সকাল ১১টার দিকে টেকনাফ নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরের পাশে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) তত্ববধানে এলপিজি ওয়ারহাউস ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টারের কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গদের মুখে নির্যাতনের কথা শোনেন বলে জানান ৯ রোহিঙ্গা নেতা।
সেখানে টেকনাফ নয়াপাড়া অনিবন্ধিত শালবাগানের ডেভলমেন্ট কমিটির নারী চেয়ারম্যান রমিদা বেগমসহ নয় রোহিঙ্গা নেতা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের ২৬ জুন ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে রমিদা বেগমকে চেয়ারম্যান করে ১১ জনের একটি কমিটি করা হয়।
জাতিসংঘের দূত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের সঙ্গে কথা বলেন এবং মিয়ানমার পরিস্থিতিতি তাদের কাছে তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে ক্রিস্টিন এস বার্গনার সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রমিদা বেগম জানান, মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ফলে তারা সে দেশ থেকে প্রাণে বাঁচতে এপারে পালিয়ে আসেন। আগে এসব নির্যাতনের বিচার চায়, তারপর তারা সে দেশে ফেরত যাবে।
তার জবাবে জাতিসংঘের বিশেষ দূত তাদের আশ্বস্ত করেন। মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘ চাপ অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জোর করে নিজ দেশে পাঠানো হবে না।
বৈঠকে উপস্থিতি রোহিঙ্গা নেতা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমার মা-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে মেরে ফেলেছে। আমরা মিয়ানমারে যাব না, আমাদের ঘরবাড়ি ও সে দেশের পরিচয়পত্র পেলে যাব।’
শনিবার দুপুর ১২টায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত টেকনাফ ত্যাগ করেন। এর আগে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালামের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। রবিবার তিনি উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
এদিকে চলতি মাসে নভেম্বরের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।তবে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্রিস্টিন এস বার্গনার সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযানের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩০ শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
Posted ৬:০৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta