কক্সবাংলা ডটকম(৮ সেপ্টেম্বর) :: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। গত প্রায় এক বছর ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন তিনি।
এরদোগান সরাসরি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে। এরদোগানের মতো এতটা জোরালো অভিযোগ অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান করেননি।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার এরদোগান সরাসরি ফোন করেছেন মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী ও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচিকে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সুচির কাছে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে তুরস্কের ফার্স্টলেডি আমিনে এরদোগান বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে আছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুও। এতে বোঝাই যাচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুকে তুরস্ক বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তুরস্ক এতটা আন্তরিক কেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন পি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. তাজ হাশমি মনে করেন, এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। তুরস্ক একসময় মুসলিম বিশ্বে নামকরা একটি দেশ ছিল। ইরান ছাড়া পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা তুরস্কের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাশমি বলেন, অনেকে এরদোগানকে নতুন সুলতান বলছেন। বৈশ্বিক অঙ্গনে তিনি তুরস্কের সেই পুরনো ভূমিকায় ফিরে যেতে চাচ্ছেন। তুরস্কের পুরনো শৌর্য পুনরুত্থান করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পেছনে এরদোগানের ব্যক্তিগত বিষয় জড়িত আছে বলে মনে করেন হাশমি।
ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এরদোগান মুসলিম বিশ্বের প্রধান প্রতিনিধি হতে চাচ্ছেন। এরদোগান মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের পরিবর্তে তুরস্ককে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসতে চান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হলেও মিয়ানমারের ওপর তিনি কতটা চাপ তৈরি করতে পারবেন।
তাজ হাশমি মনে করেন, সে সম্ভাবনা খুবই কম। ভারত এবং চীন প্রত্যক্ষভাবে এবং আমেরিকা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীকে সহায়তা করছে। হাশমি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তিনি বের করে দেবেন। চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে। তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ঘোরবিরোধী।
এছাড়া মুসলমানদের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে নীতি তাতে মনে হচ্ছে না যে, রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে। মার্কিন গণমাধ্যম রোহিঙ্গাদের ব্যাপার নিয়ে খুব একটা উচ্চকণ্ঠও নয়।’ হাশমি মনে করেন, বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি নতুন ফ্রন্ট দাঁড় করানো যায় কিনা সেই চেষ্টা তুরস্ক করছে।
Posted ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta