কক্সবাংলা ডটকম(৭ ডিসেম্বর) :: রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন স্থায়ী করা এবং যাতে তাদের পুনরায় বাস্তুচ্যুত না হতে হয় তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতি প্রয়োজন বলে মনে করে জাতিসংঘ।
ঢাকা সফররত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের ডেপুটি হাইকমিশনার কেলি ক্লেমেন্টস বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কথা বলেন।
ইউএনএইচসিআরের ডেপুটি হাইকমিশনার বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে স্থায়ী করা এবং যাতে তাদের পুনরায় রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত না হতে হয় তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে উভয় দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি এবং তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতি প্রয়োজন।
প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর সম্পাদিত সমঝোতা স্বাক্ষরকে স্বাগত জানিয়ে কেলি ক্লেমেন্টস বলেন, এই সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে, ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য উভয় দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে ইউএনএইচসিআরের আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও ইউএনএইচসিআর সংকট মীমাংসার জন্য কোনো সংস্থা নয়, তারপরও ইউএনএইচসিআরের এখতিয়ারভুক্ত বা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আগামী সপ্তাহ বা মাসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমরা আলোচনার কথা ভাবছি।
ক্লেমেন্টস বলেন, ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করাসহ তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তবে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন পরিস্থিতি এখনো উপযুক্ত নয় উল্লেখ করে জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়া এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি উপযুক্ত নয়। শরণার্থীরা এখনো সেখান থেকে পালাচ্ছে। যারা এখানে (বাংলাদেশে) এসেছে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে রাখাইনে। অনেকে তাদের পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
তিনি জানান, ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ, বিভিন্ন এনজিও, স্থানীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীসহ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইউএনএইচসিআর তাদের নিজস্ব জনবলের বাইরেও দুই শতাধিক জনবল নিযুক্ত করেছে; ১,৫০০ টন সাহায্যসহ বিভিন্ন সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
কেলি ক্লেমেন্টস বলেন, সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করা সত্ত্বেও তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা মেটানোর জন্য, বিশেষ করে সহিংসতার শিকার নারী, শিশু এবং অন্যান্য ভুক্তভোগীর জন্য আরো অনেক কিছু করণীয় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৩০টি চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধন শুরু করে।
নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে গত সাড়ে তিন মাসে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও তারা জানিয়েছে।
Posted ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta