যে কারণে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর পাশাপাশি জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক বলেও উল্লেখ করা হবে সমঝোতায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘ কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ১৩ এপ্রিল জেনেভায় বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি সমঝোতা হতে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে জাতিসংঘের সংস্থাটি।
সমঝোতায় বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং ইউএনএইচসিআরের পক্ষে সংস্থাটির শরণার্থীবিষয়ক প্রধান হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি নেতৃত্ব দেবেন। এ সমঝোতা স্মারকে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে জোর দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে।
বাংলাদেশ সরকার বলছে, রোহিঙ্গারা ‘জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক’। এটা আমরা মেনে নিয়েছি। আর জাতিসংঘের মহাসচিব খুবই পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, এটি একটি শরণার্থী সংকট।
ফলে জাতিসংঘের জন্য রোহিঙ্গারা শরণার্থী। উভয় নামই প্রয়োজন অনুযায়ী প্রথাগত পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হবে। এখানে রোহিঙ্গাদের কী নামকরণ হলো, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বেচ্ছায় তাদের প্রত্যাবাসন। কী নামে তাদের ডাকা হলো, তা মুখ্য নয়।
বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক তথ্য বিনিময়ে যে সমঝোতাটি হয়েছে, তাতে রোহিঙ্গাদের একই সঙ্গে শরণার্থী এবং জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। তবে নামকরণ যাই হোক, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে কর্মরত আইনবিষয়ক এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি পুরোই আইনি। বাংলাদেশ যেহেতু জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়; তাই তারা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী স্বীকৃতি দিতে চাইছে না।
আর ইউএনএইচসিআর যেহেতু শুধু শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করে, ফলে রোহিঙ্গারা যদি শরণার্থী পরিচয় না পায়, তবে এখানে কাজ করার অধিকার হারাবে সংস্থাটি।
ফলে সমঝোতায় শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিক উভয় পরিচয়ই ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এ বিষয়ে সমঝোতার নিচে ‘টীকা’ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআরের যুক্ত হওয়া নিয়ে এক ই-মেইলের জবাবে ইউএনএইচসিআরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র রিজিওনাল কমিউনিকেশনস অফিসার ভিভিয়ান টান বণিক বার্তাকে জানান, বিষয়টিতে এখনো আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
ক্যাম্পে যেসব মানুষ রয়েছে তারা আমাদের জানিয়েছে যে সহিংসতা ও নির্যাতনের মুখে তারা পালিয়ে এসেছে, যা পরিষ্কারভাবেই তাদের সংজ্ঞায়িত করে যে এরা শরণার্থী। তাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের কী নামে ডাকা হচ্ছে, তার চেয়ে জরুরি হলো— বাংলাদেশ সরকার, ইউএনএইচসিআর এবং অন্য অংশীদাররা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মানুষগুলোর জীবন রক্ষায় সহায়তা করতে একমত।
সমঝোতায় বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআর উভয়েরই স্বার্থ অক্ষুণ্ন্ন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, সমঝোতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থানকালে এবং মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পর তাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে মিয়ানমারে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনটি জরুরি, যার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, রাখাইনে নিরাপত্তাসহ নাগরিক হিসেবে নিজ ভূমিতে মৌলিক অধিকার ভোগ করার বিষয়গুলো জড়িত।